হাসপাতালের অবহেলায় মরতে বসেছে শিশুটি
নিজস্ব প্রতিবেদক : শিশুটির বয়স মাত্র চার দিন। এখনো নামই ঠিক হয়নি। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই অমানবিক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে সে। জন্মের পর থেকে পায়খানা করতে না পারায় পেট ফুলে গেছে শিশুটির। অসহ্য কষ্ট নিয়ে রাত-দিন কান্নাকাটি করে চলেছে।
নিষ্পাপ ফুটফুটে সেই শিশুটিকে নিয়ে যশোর থেকে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার বাবা-মা। শিশুটির কষ্টের সাথে সাথে অসহ্য কষ্ট সহ্য করে চলেছেন প্রসূতী মা-ও। শিশুটিকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন হাসতাপালে ঘুরতে ঘুরতে তিনিও কাহিল হয়ে পড়েছেন।
নিজের শরীরের এই অবস্থায়ও নাড়ি ছেঁড়া আদরের ছেলের কান্না সহ্য করতে না পেরে চিৎিসকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু কোথাও সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। কষ্টের সাথে সাথে তাই ভোগান্তি আর উৎকণ্ঠাও বাড়ছে।
শিশুটির বাবা আহসান হাবিব লিটন পেশায় একজন কৃষক। তাঁর বাড়ি যশোরের মনিরামপুর।
জানা গেছে, গত ৬ সেপ্টেম্বর যশোরের মনিরামপুরে জন্ম নিয়েছে শিশুটি। এর পর থেকে পায়খানা করতে পারেনি শিশুটি। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যে, মাঝে মাঝে শিশুটির মুখ দিয়ে মল বের হয়ে আসছে। না বুঝে সেটি আবার গিলেও ফেলছে অবুঝ শিশুটি।
যশোরের মনিরামপুরে একটি হাসপাতাল থেকে তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেখানেও চিকিৎসা হলো না শিশুটির। বরং শিশুটির বাবা-মায়ের কপালে জুটেছে হাসপাতালের ডাক্তার ও কর্মচারীদের লাঞ্ছনা। এ ছাড়া কোনো চিকিৎসকই শিশুটির সঠিক রোগটিও নির্ণয় করতে পারছেন না।
মঙ্গলবার বিকেলে আহসান হাবিব লিটন জানান, বাচ্চাটির পায়খানার রাস্তা ঠিকঠাকই আছে। কিন্তু পায়খানা হচ্ছে না। ডাক্তাররা বলছেন বাচ্চাটির নাড়ি পেঁচিয়ে গেছে। তাই চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে তিনি বাচ্চাটাকে নিয়ে শিশু হাসপাতালে এসে পৌঁছান। তবে ছেলের জন্য কোনো চিকিৎসা না পেয়ে দুপুরে সেখান থেকে চলে গেছেন।
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে আসার পর আমাকে বলল, ১২০ টাকা দিয়ে টিকিট নিতে। ১ ঘণ্টা লাইনে দাঁড় করিয়ে ডাক্তার দেখালাম। ডাক্তার বললেন ৬ নম্বর কাউন্টারে গিয়ে ভর্তি করাতে। সেখানে গেলে কর্মচারীরা বললেন সিট নাই। পরে মেঝেতে একটি সিটের ব্যবস্থা করে দেয়। ছেলেটাকে ভর্তি করালাম। ওই সিটে যাওয়ার পর আরেকজন আমাকে বলল, এটা তার সিট। বিষয়টি কাউন্টারে বললে সেখান থেকে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘এক পর্যায়ে কাউন্টার থেকে আমার কাছে তিন হাজার ৬৫০ টাকা দাবি করে। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে টাকাটা দিয়ে দিতাম। কিন্তু ঢাকায় থাকা আমার এক আত্মীয় নিষেধ করেন। পরে তার সহযোগীতায় বিকেলে এক প্রাইভেট ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। ওই ডাক্তার ভালভাবে দেখে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়টি জানেন না বলে জানান। ছুটির দিন হওয়ায় কথা বলার জন্য ঊর্ধ্বতন কাউকে পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে লিটন তাঁর স্ত্রী শারমিন বেগম ও শিশুটিকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যাচ্ছিলেন।
সে সময় তিনি বলেন, ‘একজন কৃষকের আর কতই বা আয় ইনকাম। সামান্য যা কিছু ছিল তাই নিয়ে ঢাকায় এসেছি। পথ চিনি না, আত্মীয়-স্বজন তেমন নেই, টাকাও নেই। এখন ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা পেলে হয়। জানিনা সেখানে ডাক্তাররা কেমন ব্যবহার করবেন। ছেলেকে বাঁচাতে পারব কি না আল্লাই জানে।’
শিশুটির বাবা লিটনকে কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি সাহায্য-সহযোগীতা করতে চাইলে তাঁর সঙ্গে 01401506849এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯/নূর/সনি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন