ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

হিরো আলমের সারল্যকে দুর্বলতা ভাববেন না

তাপস রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৩০ জুলাই ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হিরো আলমের সারল্যকে দুর্বলতা ভাববেন না

হিরো আলম (ছবি : শাহীন ভূইয়া)

তাপস রায় : মায়ামাখা মুখ, সেখানে কচি কুমড়ো পাতার সরলতা। সে তুলনায় সিল্কি চুলগুলো বেশ দুরন্ত। একটু বাতাসেই সেগুলো উড়ছিল। তিনিও কি উড়ছেন না এখন? এককথায় এর উত্তর ‘হ্যাঁ’। প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি যখন মেলে তখন এমনই হওয়ার কথা। তাই বলে তিনি কিন্তু মাটিতেই পা রাখছেন। অর্থাৎ মাটিতে পা রেখে সাফল্য উদযাপন করতে শিখে গেছেন আশরাফুল আলম। পাঠক এখন তাকে চেনেন ‘হিরো আলম’ নামে।

 

বাড়ি কোথায়? কী করেন? কীভাবেই বা তিনি এতটা পরিচিত হয়ে উঠলেন? ইত্যাদি প্রশ্ন এখন অবান্তর। আপনি ইতিমধ্যেই হয়তো তা জেনে গেছেন। সুতরাং সে প্রসঙ্গ থাক। তাকে নিয়ে আলোচনা যেমন আছে, সমালোচনাও কম নেই- সে প্রসঙ্গও তুলব না। যদিও জানি হঠাৎ তার এই ব্যাপক পরিচিতিতে অনেকেরই ভ্রু-যুগল কুঁচকে গেছে। কিন্তু তারা হয়তো জানেন না এ জন্য তাকে কতটা শ্রম দিতে হয়েছে। যতটুকু স্বপ্ন হৃদয়ে লালন করে এতটা বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়া যায় তিনি ততটুকু পথ পাড়ি দিয়েছেন দুই কানে তুলা গুঁজে। ভাবটা এমন- ভালো লাগলে স্বাগতম, ভালো না লাগলে ভাগতম। 

 

হিরো আলমের সঙ্গে কথা বলেই পেয়েছি এর প্রমাণ। তিনি সচেতনভাবেই জানেন, তার চেহারা তথাকথিত নায়কদের মতো নয়। নাচ, গান, অভিনয় কোনোটাতেই তিনি পারদর্শী নন। তারপরও তিনি ৫০৩টি মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন দুটি নাটকে এমনকি একটি সিনেমাতেও। সিনেমাটির নাম ‘হাবা আব্দুল্লাহ’। পাঠক, লক্ষ করুন, আপনি হিরো আলমকে মনে মনে যা ভাবছেন সিনেমাটির নামের সঙ্গে তা মিলে যাচ্ছে কি না? এখানেই হিরো আলমের জিত। কারণ আপনি যা ভাবছেন তিনি তা জানেন, কিন্তু তার ভাবনা আপনি জানেন না।

 

এই নগরে মিডিয়ায় মুখ দেখানোর স্বপ্ন নিয়ে অনেক তরুণ-তরুণী সকাল-দুপুর-রাত কাটিয়ে দেন। তারা চেষ্টা করেন। কিন্তু সব চেষ্টা গন্তব্য খুঁজে পায় না। হিরো আলমও চেষ্টা করছেন ২০০৮ সাল থেকে। তিনি এ জন্য কারো দ্বারস্থ হননি। তার যতটুকু সামর্থ্য ঠিক ততটুকু কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন একেবারে নিজের মতো করে। এমনকি যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে আপনি তাকে জানেন, হিরো আলম সেখানেও অচল। তার সহকর্মী জামান রায়হান যেদিন তাকে ফেইসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রস্তাব দেন, সেদিন হিরো আলম বলেছিলেন, ‘হামাগোরে অইগল্যা দিয়া কী হবি?’

 

 

হিরো আলমের মিউজিক ভিডিও পরিচালনা করেন মো. মশিকুল ইসলাম। তিনি ভাঙলেন এ কথার রহস্য। তিনি জানালেন, পরিচিতি পাওয়ার পর ঢাকা থেকে অনেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ঢাকা এসেছেন হিরো আলম। এখন কোরবানি ঈদে প্রচারের জন্য নাটক তৈরির কাজ চলছে। অনেকেই সেখানে ছোটখাটো চরিত্রে হিরো আলমকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। কেউ আবার সুযোগ পেয়ে তাকে দিয়ে কিছু কাজ করিয়েও নিয়েছেন। এদের অনেকেই হিরো আলমকে প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেননি। তার সরলতার সুযোগ নিয়েছেন তারা। আর এতেই হিরো আলমের যৌক্তিক আপত্তি।

 

বগুড়ার এরুলিয়া গ্রামের সহজ প্রকৃতিতে আশরাফুল আলমের বেড়ে ওঠা। সরলতা তার স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। সেই সারল্যের অর্থ দুর্বলতা ভাবা অন্যায়। সুতরাং মিডিয়ায় যারা তাকে কাজের সুযোগ দেবেন ভাবছেন, তাদের তাকে প্রাপ্য সম্মানী দিতে হবে। আর আমাদের দিতে হবে সম্মান- এটাও কিন্তু হিরো আলমের প্রাপ্য।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জুলাই ২০১৬/তারা/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়