ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

হেঁটে ঢাকায় ফিরছেন পোশাক শ্রমিক, বাড়ছে করোনা ঝুঁকি

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩০, ৪ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হেঁটে ঢাকায় ফিরছেন পোশাক শ্রমিক, বাড়ছে করোনা ঝুঁকি

করোনা ঝুঁকি প্রতিরোধে ২৫ মার্চ থেকে  চারদিনে ছুটি শেষ শনিবার (৪ এপ্রিল)। আর ছুটি শেষ হওয়ায় সারা দেশ থেকে ঢাকায় ফিরছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চাকরি বাঁচানোর তাগিদে তারা হেঁটে-হেঁটে ঢাকায় ফেরা শুরু করেছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই মুহূর্তে পোশাক-শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন রোগ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এর ফলে ভবিষ্যতে করোনা পরিস্থিতি বিপর্যয়ের দিকে যেতে পারে।

আর এই  মুহূর্তে পোশাক শ্রমিকদের জোর করে কর্মস্থলে ফেরানোয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শ্রমিক নেতারা।   

শনিবার (৪ এপ্রিল) যাত্রাবাড়ী থেকে গাজিপুরের দিকে হেঁটে রওয়ানা দিয়েছেন শফিক নামে এক শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (৫ এপ্রিল) কাজে যোগ দিতে হবে বলে শুনেছি। বাসা থেকে বের হয়েছি। কীভাবে পৌঁছাবো, জানি না। তবে পৌঁছাতেই হবে।’

ময়মন সিংহ থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন পোশাক শ্রমিক রফিকুল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘শনিবার থেকে কারখানা খোলা। যদি সময়মতো কারখানায় পৌঁছাতে না পারি, তাহলে চাকরি থাকবে না। তাই হেঁটেই রওনা হয়েছি।’

ফরিদপুর থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন রহিমা নামে আরেক শ্রমিক। তিনি জানান,  করোনার ভয়ের চেয়ে তার কাছে চাকরি হারানোর ভয় বেশি। তাই ভ্যানে চেপে গাজীপুরের দিকে রওনা হয়েছেন।

করোনা ভাইরাসের মধ্যে শ্রমিকদের এভাবে কর্মস্থলে ফেরানোকে অমানবিক বলে মনে করেন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশন সভাপতি মোশরেফা মিশু। তিনি বলেন, ‘এতে শ্রমিকদের পাশাপাশি রাজধানীবাসীকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে।’

মোশরেফা মিশু  আরও বলেন, ‘মার্চ ও এপ্রিল পোশাক শ্রমিকদের সবেতনে ছুটি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তাদের সাধারণ ছুটির মধ্যেও কাজে ফেরানো হচ্ছে। এতে শ্রমিকরা ও তাদের পরিবার ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।’

বিপুল সংখ্যক পোশাকশ্রমিক রাজধানীমুখী হওয়ায় করোনা ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরীও।  তিনি বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে তারা গণজমায়েত হয়ে হেঁটে আসছেন।  কেউ কেউ মালামালসহ জড়াজড়ি করে পিকাপ ভ্যানে আসছেন। এতে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। এর ফলে  কেউ যদি শরীরে করোনা বহন করেন, তাহলে অন্যদের মধ্যেও তা সংক্রমিত হতে পারে। এরমাধ্যমে করোনা ঝুঁকি বাড়ছে।’ ঝুঁকি এড়াতে সব ক্ষেত্রেই চাকরির নিরাপত্তা ও ছুটি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে, পোশাক শ্রমিকরা শহরে প্রবেশ করায় করোনা পরিস্থিতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। কারখানা বন্ধ রাখতে বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়েছে সাঈদ খোকন বলেন, ‘এই সময় লাখ লাখ পোশাক শ্রমিক শহরে প্রবেশ করছে। এর ফলে করোনা পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।’

এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা যেকোনো ধরনের গণজমায়েতকে নিরুৎসাহিত করছি। কারণ এতে সামাজিক দূরত্ব লঙ্ঘিত হয়। আর সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখলে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে।’

উল্লেখ্য, ২৩ মার্চ সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এরপর  ১ এপ্রিল  আরেক আদেশে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা  করে সরকার।

এদিকে, করোনার সংক্রমণ রোধে ২৫ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের নিট গার্মেন্টস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলবাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)।

** শিমুলিয়া ঘাটে ঢাকামুখী মানুষের ভিড়
** শিল্প কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে গাজীপুরে ফিরছেন

** বরিশাল থেকে ঢাকায় ফিরতে সড়কে ভিড়

** হেঁটেই ঢাকায় চলেছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা


ঢাকা/নূর/এনই

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়