ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হোয়াইট হাউসের বিস্ময়কর তথ্য (শেষ পর্ব)

মাহমুদুল হাসান আসিফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৩০ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হোয়াইট হাউসের বিস্ময়কর তথ্য (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

মাহমুদুল হাসান আসিফ : বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী প্রেসিডেন্টের বাসভবন হিসেবে ‘হোয়াইট হাউস’ সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই অন্যরকম আগ্রহের বিষয়। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায় হোয়াইট হাউস বিভিন্ন সময়ে ‘প্রেসিডেন্ট প্যালেস’, ‘এক্সিকিউটিভ ম্যানসন’, ‘প্রেসিডেন্ট হাউস’ এবং অন্যান্য বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল।

আজ থেকে প্রায় ২২০ বছরেরও বেশ আগে হোয়াইট হাউস নির্মাণ করা হয়েছিল এবং তার আগে পর্যন্ত ‘১৬০০ পেনসিলভেনিয়া এভিনিউ’ ছিল বিশ্বের অন্যতম চিত্তাকর্ষক স্থাপনা। হোয়াইট হাউস সম্পর্কিত বিভিন্ন বিস্ময়কর তথ্য নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

* হোয়াইট হাউসে বন্যপ্রাণী
হোয়াইট হাউসে বসবাসকারী মার্কিন প্রেসিডেন্টের পোষা প্রাণীও সেখানে থাকে। এক্ষেত্রে কুকুর এবং বিড়ালের মতো আদর্শ পোষা প্রাণী কমন হলেও, কোনো কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট খামার কিংবা বন্যপ্রাণীও হোয়াইট হাউসে এনেছিলেন। প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি পাখি, খরগোশ, কুকুর, বিড়াল থেকে শুরু করে ঘোড়া পর্যন্ত পুষে রেখেছিলেন হোয়াইট হাউসের মধ্যে। প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন পুষেছিলেন দুটি ভালুকের শাবক। প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বুরেন দুটি বাঘের শাবক পুষেছিলেন যা তিনি উপহার পেয়েছিলেন ওমানের সুলতানের কাছ থেকে। পরে অবশ্য কংগ্রেসের জোরজবরদস্তির কারণে সেগুলো চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন একটি ছাগল এবং গরু পালন করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট জেমস বুকানান একজোড়া টেকো ঈগল রাখার পাশাপাশি কুকুরছানা, টাট্টুঘোড়া এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পুষে রেখেছিলেন। প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড হোয়াইট হাউজের আঙিনায় মুরগি পালন করেছিলেন।

* ভবন রঙ করতে লাগে টনের পর টন রঙ 
অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনার মতো হোয়াইট হাউসের চাকচিক্য ধরে রাখতে বেশ পরিচর্যার দরকার পড়ে। হোয়াইট হাউসের বাইরের অংশ রঙ করতে লাগে ৫৭০ গ্যালন সাদা রঙ (প্রায় ৩ টন), যার ৩০০ গ্যালন মূল ভবন রঙ করতেই খরচ হয়ে যায়। ১৯৯২ সালে হোয়াইট হাউস সংস্কার করার সময় বাইরের দেয়াল থেকে প্রায় ৩০ স্তরের সাদা রঙ ওঠাতে হয়েছিল। বর্তমানে প্রতিবছর হোয়াইট হাউস রঙ করা হয় এবং সারা বছরই এটির নানা সংস্কার কার্যক্রম চলতেই থাকে।

* হোয়াইট হাউসের পশ্চিমাংশের নিচে গোপনে নির্দেশ দেয়ার সেন্টার রয়েছে?
২০১০ সালে নির্মাণকর্মীরা হোয়াইট হাউসের পশ্চিমাংশের সামনে বিশালাকৃতির একটি গর্ত খোঁড়া শুরু করেন। কাজটি খুবই গোপনে করা হয় এবং কাজ চলাকালীন সময়ে সবুজ রঙের একটি উঁচু ঘেরের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করা হয়। দুই বছর পর সেই ঘের খুলে দেওয়া হয় এবং নির্মাণাধীন জায়গাটি দেখে মনে হয় যে, এখানে কিছুই হয়নি। হোয়াইট হাউস কর্তৃপক্ষের মতে, পশ্চিম পার্শ্বের কিছু অংশ পুরাতন হয়ে যাওয়ায় সেটা পুননির্মাণের কাজ চলছিল সেখানে। কিন্তু ট্রাকের পর ট্রাক উন্নতমানের কংক্রিট নিয়ে যাওয়া দেখে অনেকের মনে সন্দেহ জাগে যে, এর অভ্যন্তরে গোপনে নির্দেশনা দেওয়ার সেন্টার বানানো হচ্ছে, যা ৫০ বছর আগে স্থাপনের কথা ছিল।

* রাজনৈতিক বিদ্বেষের শিকার হোয়াইট হাউস
শুরুর দিকে আমেরিকায় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার হাতবদল বেশ মর্যাদাপূর্ণ এবং শান্তিপূর্ণ ছিল। পরবর্তীতে কিছু প্রেসিডেন্ট নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে পর্যন্ত অস্বীকৃতি জানান। ১৯৩২ সালে প্রেসিডেন্ট হুভারের পর রুজভেল্ট ক্ষমতায় আসলে হুভার এমন আচরণ করেন। পরবর্তীতে সাবেক প্রেসিডেন্টের প্রশাসন নানান প্রহসনের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতা ছাড়া শুরু করেন। ২০০১ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ ক্ষমতায় আসলে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের কর্মচারীরা হোয়াইট হাউসে প্রায় ২০ হাজার ডলার মূল্যের ক্ষয়ক্ষতি করে রেখে যান। তারা হোয়াইট হাউসের ৬০টি কম্পিউটার থেকে ডব্লিউ বাটন উঠিয়ে টেপ দিয়ে ভবনের দেয়ালের বিভিন্ন অংশে লাগিয়ে রেখে যান। এছাড়াও তারা দরজার হাতল চুরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন আসবাবের ড্রয়ারের নিচের অংশে আঠা লাগিয়ে রেখে যান এবং প্রায় ১০০টি টেলিফোনের নম্বর পরিবর্তন করে ভুলভাল নম্বর সেইভ করে রেখে যান।

* হোয়াইট হাউসে ফুল টাইম স্টাফের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি
সাবেক কোনো প্রেসিডেন্ট যখন হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন, তিনি সাধারণত সেখানকার সকল কর্মীদের সঙ্গে নিয়েই ত্যাগ করেন। নতুন প্রেসিডেন্টকে তার নিজস্ব স্টাফ দিয়ে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে হয় যার সংখ্যা প্রায় ৩,৩০০ জন এবং এটা কোনো সহজ কাজ নয়। তাছাড়া সেখানে অনেক প্রকারের পার্টটাইম স্টাফ রয়েছেন যাদের সংখ্যা উল্লেখ করা মুশকিল এবং নির্বাহীবিভাগ কর্তৃক নিয়োগকৃত বেশ কিছু স্টাফ রয়েছেন যারা অফিস হোয়াইট হাউসের বাইরে কাজ করেন। তাছাড়া হোয়াইট হাউস কর্তৃপক্ষ ৫০০ স্টাফ নিয়োগ করে, ভাইস প্রেসিডেন্ট অফিস নিয়োগ করে ১০০ স্টাফ, সামরিক অফিস নিয়োগ করে ১৩০০ স্টাফ। অফিস ব্যবস্থাপনা এবং বাজেট কাজে স্টাফের সংখ্যা প্রায় ৫০০। এছাড়াও হোয়াইট হাউসে ৫০০-র বেশি গোয়েন্দাকর্মীসহ ২০০ স্টাফ নিয়োগ করা হয় প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য।

হোয়াইট হাউসের মূল ভিত্তিপ্রস্তর উধাও
হোয়াইট হাউস নিয়ে যত রহস্য আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ভবনের মূল ভিত্তিপ্রস্তর গায়েব হয়ে যাওয়া। ১৭৯২ সালে স্থাপনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হোয়াইট হাউসের মূল ভিত্তিপ্রস্তর উধাও হয়ে যায়। কোথায় গেল কেউ জানে না। নির্মাণকর্মীদের মধ্যে এ ব্যাপারে কেউ কিছু স্বীকার করেনি। বেশ কয়েকজন প্রেসিডেন্ট যেমন: রুজভেল্ট এবং ট্র্যুম্যান সেটি খোঁজার চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। শোনা যায়, ভিত্তিপ্রস্তরটি হোয়াইট হাউসের আঙিনায় অবস্থিত একটি গোলাপ বাগানে দুটি পাথুরে দেয়ালের ভেতর লুকানো আছে, কিন্তু তা কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

 

পড়ুন :
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জুলাই ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়