ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

হ্যাচারির রেনুতে গলদা চিংড়ির উৎপাদন ব্যাহত

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হ্যাচারির রেনুতে গলদা চিংড়ির উৎপাদন ব্যাহত

নদী থেকে সংগৃহীত রেনুর চিংড়ি

আলী আকবর টুটুল, বাগেরহাট : বাগেরহাটে ভালো রেনুর অভাবে গলদা চিংড়ি চাষিরা কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে রেনু আহরণ বন্ধ থাকায় হ্যাচারির রেনু চাষ করে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তারা।

মৎস্য বিভাগ বলছে, হ্যাচারিতে গলদা চিংড়ির রেনুর উৎপাদন কম হওয়ায় চাষিরা সময় মতো ঘেরে মাছ ছাড়তে না পারায় গলদা চিংড়ির উৎপাদন কিছুটা কমছে। আবার চিংড়ি রপ্তানির নতুন বাজার সৃষ্টি না হওয়ায় দাম কম পাচ্ছেন চাষিরা।

বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি গলদা চিংড়ির চাষ করা হয়। এ সব এলাকার হাজার হাজার চিংড়ি চাষির প্রতি বছর ৫৬০ কোটি রেনুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এ চাহিদার পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় দিন দিন গলদা চাষিরা উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছেন। প্রাকৃতিক উৎস নদ-নদী থেকে রেনু আহরণ বন্ধ থাকায় এবং সরকারিভাবে উৎপাদিত রেনু চাহিদা মেটাতে না পারায় বেসরকারি হ্যাচারি থেকে উৎপাদিত অপুষ্ট এবং রুগ্ন রেনু চাষ করতে হচ্ছে চাষিদের।

ফকিরহাট উপজেলার বানিয়াখালী গ্রামের প্রজিত বালা, বিধান বাগচীসহ একাধিক চিংড়ি চাষি বলেন, প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে আহরিত রেনুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। দীর্ঘদিন বাঁচে, অনেক বড় হয় এবং গুণগত মানসম্মত হওয়ায় চাষে উৎপাদন ভালো হয়। কিন্তু হ্যাচারির রেনুর মান খারাপ হওয়ায় ঘেরে গলদা মারা যায় এবং উৎপাদন ভালো হয় না। তারা মানসম্মত রেনুর অভাবে হ্যাচারির রেনু চাষ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

তারা বলেন, প্রাকৃতিক উৎস নদ-নদী থেকে রেনু আহরণ করতে পারলে চিংড়ির উৎপাদন বাড়বে এবং বেশি পরিমাণ বৈদিশক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

 

হ্যাচারি থেকে সংগৃহীত রেনুর চিংড়ি


একই গ্রামের গুরু দেব বলেন, তার চারটি গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে। এবার ঋণ নিয়ে রেনু ছেড়ে চাষ করে পুঁজি ওঠেনি। চিংড়ি মরে গেছে। এখন কীভাবে ধার-দেনা পরিশোধ করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।  

ফকিরহাট রেনুপোনা মালিক সমিতির সভাপতি মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, এ অঞ্চলে প্রতি বছর ৪০০ কোটি রেনুর প্রয়োজন। সেখানে প্রতি বছর ২০ কোটি রেনু সরবরাহ করা হচ্ছে। বাকি রেনু নদী উৎস থেকে সংগ্রহ করতে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। গলদা চাষ টিকিয়ে রাখতে হলে প্রাকৃতিক উৎস থেকে রেনু আহরণের বিকল্প নেই।

বাগেরহাট চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি মো. ফকির মহিদুল ইসলাম বলেন, একদিকে বন্যার ক্ষতি অন্যদিকে মাছের দাম কম হওয়ায় চাষিরা ক্ষতির শিকার হচ্ছে। নতুন নতুন দেশে বাজার সৃষ্টি করে চিংড়ি শিল্প তথা চাষিদের বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। তা না হলে এ শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়বে।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন বলেন, বাগেরহাট জেলায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে। এতে প্রায়  ২৫ হাজার গলদা চাষি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।

মানসম্মত রেনুর অভাবে চাষিরা ক্ষতির শিকার হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, হ্যাচারিগুলো চাষিদের চাহিদা অনুযায়ী রেনু সরবারহ করতে পারছে না। আবার সরকারিভাবে নদী থেকে রেনু আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় চাষিরা চাহিদা অনুয়ায়ী রেনু পাচ্ছে না। এ ছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম ও গলদা ক্রয়ের ক্ষেত্রে বায়ারদের অনীহায় বাজার মন্দা যাচ্ছে।

 

 

রাইজিংবিডি/বাগেরহাট/২৭ জানুয়ারি ২০১৭/টুটুল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়