ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হ্যামলেট দেখার অভিজ্ঞতার মুদ্রণ

অনার্য মুর্শিদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৩১ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হ্যামলেট দেখার অভিজ্ঞতার মুদ্রণ

|| অনার্য মুর্শিদ ||

শিল্পকলায় সম্প্রতি ‘হ্যামলেট’-এর তেরোতম প্রদর্শনী হলো। সবাই হয়তো হ্যামলেটের ট্র্যাজেডি নিয়েই হল থেকে বের হয়েছেন। কিন্তু যাদের ‘হ্যামলেট’ পড়া আছে তারা বের হলেন ‘সিরাজউদ্দৌলা’র ট্র্যাজেডি মাথায় নিয়ে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যে কী ট্র্যাজেডি যাচ্ছে তা এই নাটক না দেখলে আরেকবার নিশ্চিত হতে পারতাম না। ভালো লাগা না লাগার অসংখ্য কারণ আছে। উল্লেখযোগ্য কিছু দিক তুলে ধরলাম।

নাটকের কাহিনি শুরু হয় ডেনমার্কের রাজা হ্যামলেটের মৃত্যুঘটনাকে কেন্দ্র করে, যিনি ছিলেন তরুণ যুবরাজ হ্যামলেটের বাবা। রাজার মৃত্যুর পর তার কনিষ্ঠ ভাই ক্লাউডিয়াস সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং প্রয়াত অগ্রজের স্ত্রী তথা যুবরাজ হ্যামলেটের মা গারট্রুডের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। পিতা হারানোর ব্যথা, জননীর সাথে পিতৃব্যের পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হওয়া এবং সর্বোপরি পিতৃব্যের সিংহাসনে আসীন হওয়া ইত্যাদি যুবরাজ হ্যামলেটের জীবনের মর্মমূলে নাড়া দেয়; যুবরাজ শোকে-দুঃখে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েন। তিনি কিছুতেই এই দুর্বিষহ অন্যায় ঘটনাপ্রবাহ মেনে নিতে পারেন না। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকের কাহিনি।

যুবরাজ একদিন তন্দ্রার ঘোরে দেখেন তার বাবা তাকে বলছে তাকে কানে বিষ ঢেলে হত্যা করেছে ক্লাউডিয়াস এবং গারট্রুড। সেই সূত্র ধরে হুবহু ঘটনাকে মঞ্চায়নের আয়োজন করেন যুবরাজ। আর এ নাটক দেখে দর্শক ক্লাউডিয়াস উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তার উত্তেজনা থেকেই হ্যামলেট বুঝে যায় কে তার পিতার হত্যাকারী।

‘হ্যামলেট’ চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন তাকে একদমই যুবরাজ মনে হয়নি। তাকানো, হাঁটাচলা, ক্রোধ, দুঃখপ্রকাশ, আনন্দপ্রকাশের ধরনে মনে হলো তিনি কোনো মধ্যবিত্ত পরিবারের দুঃখি ছেলের চরিত্রে অভিনয় করছেন।
ওফেলিয়া চরিত্রটিও একই রকম মনে হলো। একবারের জন্যও যুবরাজের প্রেমিকা মনে হয়নি। মনে হয়েছে, সাম্প্রতিককালের কোনো বাংলা সিনেমার নায়িকার রোমান্টিক কিছু দৃশ্য দেখলাম। শেক্সপিয়রের সৃষ্ট নারী চরিত্রকে এভাবে দেখব, মানতে পারছি না। রানি চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন, অসাধরণ ভালো করেছেন। কিন্তু ক্লাউডিয়াসের চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন তাকেও রাজা মনে হওয়া তো দূরে থাক রাজার প্রহরীও মনে হয়নি।

নৃত্যে একটা আভিজাত্য আনার চেষ্টা করেছেন পরিচালক আতাউর রহমান। কিন্তু যিনি মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন তাকে নিতে না পারায় এ নাচটিও আমার কাছে শেক্সপিয়রীয় রুচির মনে হয়নি। তবে কোরিওগ্রাফ যারা করেছেন নিঃসন্দেহ ভালো করেছেন। নাটকে রবীন্দ্রসংগীতের ব্যবহার শুধু অভিনবত্বই আনেনি, দর্শকের মনও কেড়েছে নিশ্চয়ই। শুরুতে জীবনানন্দের কবিতাটা খুব বেশি প্রাসঙ্গিক না হলেও ভালো লেগেছে। সংলাপের প্রক্ষেপন অনেকাংশেই ছিল দুর্বল। ইংরেজি উচ্চারণগুলো শুনে মনে হচ্ছিল ‘হ্যামলেট’ ক’দিন আগে সাইফোর্স থেকে ‘স্পিকিং ইংলিশ’ এর কোর্স করে বের হয়েছেন। আলোর প্রক্ষেপনে পরবর্তী প্রদর্শনীতে আরো কিছু পরীক্ষা চালানো যেতে পারে। গল্প সংক্ষেপ করাতে ভালো হয়েছে। কিন্তু পড়াশোনার জন্য হ্যামলেটকে বিদেশ পাঠানোর চক্রান্তটি রাখা গেলে ভালো হতো।

পুনশ্চতে একটি কথা না বললেই নয়- কাজ করলে ভুল হয়। কাজ না করলে কিছুই হয় না। প্রদর্শনীটির জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

লেখক: প্রাবন্ধিক, নাট্যকর্মী

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ মার্চ ২০১৯/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়