ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

১৫ বছর ধরে আইন পড়লেন কৃষক!

মোখলেছুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৭, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১৫ বছর ধরে আইন পড়লেন কৃষক!

ওয়াং এনলিন

মোখলেছুর রহমান : শুধু একটি জিনিসই সফল মানুষকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে, আর তা হলো, তারা যখন একবার কোনো একটি বস্তুতে লক্ষ্য স্থির করে তখন লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয় না। লক্ষ্য পূরণ করতে তারা একের পর এক চেষ্টা চালিয়েই যেতে থাকে।

সত্যিই কোনো কিছুই অসম্ভব নয় যদি আপনি তা অর্জন করার জন্য দৃঢ প্রতিজ্ঞ হন। এবং ওয়াং এনলিনের মতো মানুষরাই আসলে আমাদের এই ধরনের কথা বিশ্বাস করতে অনুপ্রাণিত করে।

চীনের হেইলুংচিয়াং প্রদেশের কিকিহার উপকণ্ঠের ইয়ুসহুতুন গ্রামে বসবাসকারী ৬০ বছর বয়সি কৃষক ওয়াং এনলিন, নিজের মামলা সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য ১৫ বছর ধরে আইনের বই পড়েছেন।

যখন কোনোভাবেই ন্যায়বিচার পাচ্ছিলেন না তখন এই চীনা কৃষক তার নিজের কাঁধেই সব দায়িত্ব তুলে নেন এবং একটি রাসায়নিক কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য ১৫ বছর ধরে আইন বিষয়ে নিজে নিজেই পড়াশোনা করেন। রাসায়নিক কোম্পানিটি বিষাক্ত বর্জ্য ডাম্পিংয়ের মাধ্যমে তার কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল।

এটা ছিল ২০০১ সালের শুরুর দিকের ঘটনা, যখন ওয়াং এনলিনের খামারের মধ্যে বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা শুরু করেছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রাসায়নিক কোম্পানি কিহুয়া গ্রুপ। বর্জ্য-পানি দ্বারা ওয়াং এবং তার প্রতিবেশীদের ভবন হঠাৎ প্লাবিত হয়ে গিয়েছিল। বর্জ্য-পানি গ্রামবাসীর কৃষিজমিতে প্রবেশ করছিল।

বিষাক্ত পানি জমিকে দূষিত করছিল। দূষিত জমি দীর্ঘ সময় ফসল উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যায়নি। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার যারা কৃষির ওপর নির্ভরশীল ছিল, তাদের ওপর এর প্রভাব পড়ছিল।

বিশাল রাসায়নিক কোম্পানিটি গ্রামের কৃষিজমির মধ্যে বিষাক্ত বর্জ্য ডাম্পিং অব্যাহত রেখেছিল। কোম্পানিটি যারা নাকি পলিভিনাইল ক্লোরাইড উৎপাদন করত, তারা ১৫, হাজার থেকে ২০ হাজার টন রাসায়নিক বর্জ্য জমিতে ফেলত। এ থেকে ক্ষতির পরিমাণ আসলে অনুমান করা যায়।

২০০১ সালে ওয়াং একটি চিঠি লিখে ভূমি রিসোর্স ব্যুরোকে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন, কিন্তু কৃষিজমিতে যে আসলেই বিরূপ প্রভাব পড়ছে কর্মকর্তারা তার প্রমাণ দিতে বলেন।

ওয়াং বলেন, ‘আমি জানতাম আমি ঠিক ছিলাম, কিন্তু আমি জানতাম না যে কোন আইনটি আসলে অপরপক্ষ ভেঙেছে। আমার কাছে কোনো প্রমাণও ছিল না।’

এই পরিস্থিতিতে তিনি কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নেন। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা ওয়াংয়ের তখন একটি ডিকশনারি ছাড়া আর কোনো অবলম্বন ছিল না, ডজনেরও ওপর আইনের বই পড়ার ক্ষেত্রে।

এমনকি বই কেনার জন্য পর্যাপ্ত টাকাও ছিল না তার। একটি স্থানীয় বইয়ের দোকানে বসে আইনের বই পড়তেন ডিকশনারির সাহায্যে নিয়ে এবং সব তথ্য একটি নোটবুকে লিখে রাখতেন।

এই করতে করতে ১৫ বছর কেটে যায় এবং অবশেষে আদালত ২০১৫ সালে মামলার প্রক্রিয়া শুরু করেন। ওয়াং এবং তার প্রতিবেশীরা প্রথম রাউন্ডে জয়ী হয়। আদালত কিহুয়া গ্রুপকে ৮ লাখ ২০ হাজার ইয়েন (৯৬ হাজার পাউন্ড) ক্ষতিপূরণ ওয়াং ও তার প্রতিবেশীদের দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। যদিও কোম্পানিটি আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। কিন্তু ওয়াং শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ওয়াং বলেন, ‘আমরা অবশ্যই জিতব। এমনকি যদি আমরা হেরেও যাই, আমরা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাব।’

সত্যিই, খুব উদ্দীপন একজন মানুষ তিনি।

তথ্যসূত্র: স্কুপহুপ

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ/এএন  

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়