ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

১৫ বছর পর চালু হচ্ছে ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা

তানভীর হাসান তানু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৩, ৩ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১৫ বছর পর চালু হচ্ছে ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা

তানভীর হাসান তানু, ঠাকুরগাঁও : লোকসানের কারণে ১৫ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া সরকারি মালিকানাধীন ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা এবার চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ঠাকুরগাঁওয়ে রেশম বোর্ড চালুর বিষয়ে ১১ সদস্যের একটি দল কারখানাটি পরিদর্শন করেছে।

মিলটি চালুর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের গঠন করা কমিটির ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে যেকোনো সময় কারখানাটি চালু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সোমবার সকাল ৯টায় জেলা শহরের বিসিক শিল্প নগরী এলাকায় অবস্থিত কারখানাটি পরিদর্শন করেন কমিটির সদস্যরা।

এ সময় দ্বিতল ভবনে সংরক্ষিত যন্ত্রপাতি কারখানা চালুর বিষয়ে উপযোগী কি না তা ঘুরে দেখেন তারা। পরিদর্শক দলে ছিলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল খায়ের, উপ-প্রধান (পরিকল্পনা) বেগম তানিয়া খানম, রাজশাহী রেশম বোর্ডের মহাপরিচালক আনিস উল হক ভুইয়া, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ কর্মকর্তা সেরাজুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

১৫ বছর আগে দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের চাষিরা তুঁতগাছ লাগাতেন। তাদের প্রায় অর্ধশত বাগান ছিল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এখনো প্রায় ১৫-২০টির মতো বাগান টিকে রয়েছে। এসব বাগান থেকে পলু পালনের মাধ্যমে সুতা উৎপাদন করেন রেশম কর্মীরা। এক সময় ঠাকুরগাঁও ঐতিহ্যবাহী রেশম কারখানায় উৎপাদিত হতো মসৃণ সিল্ক কাপড়। অথচ নীতি-নির্ধারকদের টানাপোড়েন ও কর্মকর্তাদের গাফিলতি আর উদাসীনতায় দিনে দিনে এই কারখানাটিতে লোকসান শুরু হয়। বিএমআরই করা হবে এমন কথা বলে হঠাৎ করে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ কারখানা চালু করার কথা বলে একাধিকবার রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ঘোষণা পেলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা বন্ধ হওয়ার পর প্রায় পাঁচ হাজার রেশম চাষি বেকার হয়ে পড়েছেন। তবে এখনো প্রায় দুই হাজার চাষি রেশম চাষ ধরে রেখেছেন। কিন্তু তুঁতগাছের অভাবে তারা পলু পালন করতে পারছেন না। তা ছাড়া পুঁজি ও উপকরণের অভাবে তারা এখন বিপাকে পড়েছেন। পাঁচ হাজার চাষি বেকার হয়ে পড়ায় তারা ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। অন্য দিকে অব্যবহৃত থাকায় রেশম কারখানার ৫০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে চলেছে। অথচ কারখানাটি চালু হলে রেশম চাষের সঙ্গে যুক্ত পাঁচ হাজার চাষির আবার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে ঠাকুরগাঁওয়ে এই রেশম কারখানাটি স্থাপন করা হয়। ১৯৯৫ সালে রেশম কারখানাটি আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে। আধুনিকীকরণে মোট ব্যয় হয় ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। লোকসানের অজুহাতে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

চাষি ও স্থানীয় জনগণের মতে, মিলটি ঐতিহ্যগত কারণে চালু করা দরকার। চালু হলে অনেকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। তা ছাড়া এখানকার কাপড় অত্যন্ত মূল্যবান। কাঁচামালের কোনো অভাব হবে না।

বাংলাদেশ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামান জানান, ‘আমরা রেশম কারখানাটি পরিদর্শন করেছি। মন্ত্রণালয় ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করি খুব শিগগিরই কারখানাটি চালু হবে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, রেশম কারখানাটি এরই মধ্যে সার্কের একটি প্রতিনিধি দল ও মন্ত্রণালয়ের ১১ সদস্যের একটি দল পরিদর্শন করেছে। কারখানাটি চালুর লক্ষ্যে সরকার খুবই আন্তরিক। এটি চালু হলে দেশের সর্বোচ্চ মানের কাপড় তৈরি হবে ও অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঠাকুরগাঁও/৩ এপ্রিল ২০১৭/তানভীর হাসান তানু/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়