ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

১৫ বরেণ্য ব্যক্তির নামে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৬, ১২ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১৫ বরেণ্য ব্যক্তির নামে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

কুমিল্লায় শচীন দেব বর্মণের বাড়ি

‘যে দেশে গুণের সমাদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না।’ বহু বছর আগে কথাটি বলে গেছেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তবে বাংলাদেশে কেবল গুণ নয়, গুণী মানুষেরাও উপেক্ষিত।

নিকট অতীত বলছে, গুণী মানুষের কদর তো বহু দূরে, তাদের স্মৃতি চিহ্ন মুছে দিতেও তৎপর কেউ কেউ। বিগত শতকে জন্ম নেওয়া অনেক গুণী মানুষের নামই জানেন না, নতুন প্রজন্ম। অন্যদিকে গণমাধ্যমের খবরের কারণে অনেক বরেণ্য ব্যক্তিদের পৈত্রিক বাড়ি দখলের তথ্য সামনে এসেছে।

বিশেষ করে পাবনায় কিংবদন্তী নায়িকা সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ি দখল ও পরবর্তীতে উদ্ধারের খবর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর পৈত্রিক বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার তথ্য। কিংবা সিরাজগঞ্জে জেলায় ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে কবি রজনী কান্ত সেনের বসত বাড়ির প্রতিবেদন।

বিলম্বে হলেও গুণ এবং গুণীদের অবমূল্যায়নের এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে নতুন এক প্রকল্প নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ১৫ বরেণ্য ব্যক্তির নামে গড়ে তোলা হবে সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র।

 

রাজশাহীতে ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি

 

নতুন প্রজন্মের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক ও বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের পরিচয় করিয়ে দিতে এমন প্রকল্প হাতে নিয়েছে একাডেমি। সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হবে বরেণ্য ব্যক্তিদের নিজ নিজ জন্মস্থানে।

সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে থাকবে বরেণ্য ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র, কর্ম ও জীবন নিয়ে তথ্য চিত্র, গ্রন্থ ইত‌্যাদি। বছরজুড়ে ওই কেন্দ্রে বরেণ্য ব্যক্তিকে নিয়ে থাকবে নানা অনুষ্ঠান ও কর্মযজ্ঞ। এই প্রকল্পে প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৪০ কোটি টাকা।

শিল্পকলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পে ১৪ মনিষীর নাম থাকলেও, পরে কবি সৈয়দ শামসুল হক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জন্য আলাদা প্রকল্পের সিধান্ত নিয়েছে একাডেমি।

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘বরেণ্য ব্যক্তিদের নিজ নিজ পৈত্রিক ভিটায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। দেশের জন্য, মানুষের জন্য তাদের যে কাজ, তা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হবে। ওই মনিষীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র, কর্ম জীবনের তথ্যচিত্র, গ্রন্থ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সংরক্ষণ করা হবে।’

তিনি বলেন, “শুধুমাত্র ঘর তোলা, আর ঘর খোলায় আমি অন্তত বিশ্বাসী নই। সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বরেণ্য ব্যক্তিকে নিয়ে বছরব্যাপী নানা আয়োজন থাকবে, গবেষণা হবে, ওই গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত হবে। বরেণ্য ব্যক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ভূমিকা রাখবে।

 

পাবনায় সুচিত্রা সেনের বাড়ি

 

‘আমরা অনেক আগেই প্রস্তাবনা জমা দিয়েছি, সম্প্রতি কিছু বিষয়ে সংশোধন চেয়েছে মন্ত্রণালয়। আমরা সংশোধন করে আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আশা করি খুব শিগগিরই প্রকল্প অনুমোদন হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২০ সালের মধ্যই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে।’’

তথ্যসূত্র অনুযায়ী, প্রস্তাবিত সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্রগুলোর স্থান ও বরেণ্য ব্যক্তির তালিকায় রয়েছে ফকির লালন শাহ (কুষ্টিয়া), ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ (ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়), মহানায়িকা সুচিত্রা সেন (পাবনা), মহা কবি কায়কোবাদ (ঢাকার নবাবগঞ্জ), বাংলা গানের দিকপাল শচীন দেব বর্মণ (কুমিল্লা), প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান (নড়াইল), লোক কবি রাধারমণ দত্ত (সুনামগঞ্জ), বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম (সুনামগঞ্জ), বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক ড. কাজী মোতাহার হোসেন (রাজবাড়ী), কবি রজনী কান্ত সেন (সিরাজগঞ্জ), বাউল সাধক দুর্বিন শাহ (সুনামগঞ্জ), বিপ্লবী মাস্টার দা সূর্য সেন (চট্টগ্রাম), কবি অতুল প্রসাদ সেন (শরীয়তপুর), কবিয়াল বিজয় সরকার (নড়াইল) ও কবি সৈয়দ শামসুল হক (কুড়িগ্রাম)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জন্মস্থান ব্রাক্ষনবাড়িয়ায় চরম অবহেলিত। ২০১৬ সালের শুরুতে তার পৈত্রিক বাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে শেষ স্মৃতিটুকু। পাবনায় প্রায় তিন যুগ পরে দখলমুক্ত হয়েছে নায়িকা সুচিত্রা সেনের বাড়ি।

ঢাকার নবাবগঞ্জে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে কবি কায়কোবাদের ব্যবহৃত ঘরটি। কুমিল্লায় অরক্ষিত হয়ে রয়েছে সঙ্গীতজ্ঞ শচীন দেব বর্মণের পৈত্রিক ভিটে। নড়াইলে অযত্নে, অবহেলায় নষ্ট হতে চলছে বিশ্ব নন্দিত শিল্পী এস এম সুলতানের শিল্পকর্ম। গত বছর তিনটি চিত্র সংস্কারের জন্য ঢাকায় এনেছিল শিল্পকলা একাডেমি।

 

ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি পুনরুদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন

 

সুনামগঞ্জে লোক কবি রাধারমণ দত্ত স্মৃতি রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেই, ২০১৫ সালে রাধামণ স্মৃতি কমপ্লেক্স করার জন্য জায়গা নির্ধারণ করলেও, সেই উদ্যোগ এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

শরীয়তপুরে নড়িয়া উপজেলায় দখল হয়ে আছে কবি অতুল প্রসাদ সেনের বাড়ি। সুনামগঞ্জের ছাতকে বাউল সাধক ও মরমি কবি দুর্বিন শাহ-এর সমাধি সংস্কার, সংরক্ষণ ও স্মৃতিময় বাড়ি নিয়ে জাদুঘর করার দাবি জানিয়ে আসছে স্থানীরা।

এদিকে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের তথ্যসূত্র জানিয়েছে, বরেণ্য ব্যক্তিদের নামে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরির প্রকল্প অনুমোদনের জন্য চলতি মাসেই প্রকল্প ফাইল পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেন, ‘কীভাবে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো হবে জানি না। তবে বরেণ্য ব্যক্তিদের নামে প্রতিষ্ঠান করা খুবই প্রয়োজন। তাদের কৃতকর্ম নিয়ে চর্চা হওয়া উচিত এবং এই চর্চা ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। এতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সমৃদ্ধ হবে।’

 

ঢাকা/মাছুম/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়