২০ লাখ এমআরপি সংগ্রহের উদ্যোগ
দেশে ই-পাসপোর্ট চালু করতে দুই দফা তারিখ নির্ধারণ করেও তা চালু করা সম্ভব হয়নি। ই-পাসপোর্ট চালু করতে আরো প্রায় দেড় বছর লাগতে পারে। ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত পাসপোর্ট সেবা অব্যাহত রাখতে ২০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বুকলেট এবং ২০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। এ জন্য ব্যয় হবে প্রায় ৪১ কোটি টাকা।
সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাসপোর্ট বুকলেট ও লেমিনেশন ফয়েল সংগ্রহের একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদনের জন্য বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চলতি বছর ১ জানুয়ারি ই-পাসপোর্ট চালুর প্রথম লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু পরে তারিখ পুনঃনির্ধারিত হয়। ১ জুলাই। এই পুনঃনির্ধারিত তারিখেও ই-পাসপোর্ট চালু করতে না পারায় পিপিআর বিধি ৭৪(৪) অনুযায়ী ২য় ভেরিয়েশন অর্ডারের মাধ্যমে ২০ লাখ পাসপোর্ট বুকলেট এবং ২০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল ক্রয়ের লক্ষ্যে গত এপ্রিল মাসের ১১ তারিখে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত্র মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনক্রমে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ডি লা রুই ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের সঙ্গে ৪০ কোটি ৭১ লাখ ৬৯ হাজার টাকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা সরবরাহের অপেক্ষায় আছে।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে মজুদ পাসপোর্ট বুকলেটের সংখ্যা তিন লাখ ৯৯২ টি এবং লেমিনেশন ফয়েলের সংখ্যা তিন লাখ ৭৯ হাজার ৭৩০ টি। সরবরাহের অপেক্ষায় রয়েছে ২০ লাখ পাসেপার্ট বুকলেট এবং ২০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল। মজুদ ও সরবরাহতব্য পাসপোর্ট বুকলেটের সংখ্যা ২৩ লাখ ৯৯২ এবং লেমিনেশন ফয়েলের মোট সংখ্যা ২৩ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩০। জনগণের চাহিদা অনুযায়ী প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪ লাখ পাসপোর্ট ইস্যু করতে হয়। সে অনুযায়ী উল্লেখিত সংখ্যক পাসপার্ট বুকলেট ও লেমিনেশন ফয়েল দিয়ে আগামী ৫/৬ মাসের চাহিদা মেটানো সম্ভব হতে পারে। অর্থাৎ আগামী ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত সর্বোচ্চ চাহিদা মেটানো সম্ভব হতে পারে। দেশের অভ্যন্তরে বিভাগীয়/আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইস্যু অব্যাহত রাখতে হবে।
উল্লেখ্য যে, জার্মানির ভেরিডস জিএমবিএইচ কর্তৃক ২০১৯ সালের ১ জুলাই ই-পাসপোর্ট চালুর তারিখ নির্ধারিত থাকলেও এখনো সংস্থাটি নিশ্চিতভাবে সঠিক দিনক্ষণ সম্পর্কে কোন নিশ্চিত তথ্য জানাতে পারছে না। ফলে পুরোপুরিভাবে সব অফিসে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কি পরিমাণ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বুকলেট ও লেমিনেশন ফয়েল প্রয়োজন হতে পারে তা উল্লেখ করে মতামত দেওয়ার জন্য ই-পাসপোর্ট প্রকল্পকে চিঠি দেয়া হয়। ই-পাসেপোর্ট প্রকল্প কার্যালয় থেকে উল্লেখ করা হয় যে, সব অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট চালুর পূর্ব পর্যন্ত জনগণের পাসপোর্ট চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে অতিরিক্ত ২০ লাখ পাসপোর্ট বুকলেট ও ২০ লাখ লেমিনেশন ফয়েলের প্রয়োজন হবে। এ বিষয়ে কয়েকটি পত্রিকায় দরপত্র প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞপ্তি আহ্বান করা হয়।
সূত্র জানায়, নতুনভাবে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে পাসপোর্ট পেতে এখন থেকে প্রয় একবছর অর্থাৎ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। জার্মানির ভেরিডস জিএমবিএইচ-এর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রথম অফিস (আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, উত্তর)-এ ই-পাসপোর্ট চালু থেকে পর্যায়ক্রমে সব অফিসে ই-পাসপোর্ট চালু হতে প্রায় দেড় বছর সময় লাগবে। এভাবে ই-পাসপোর্ট সম্পূর্ণ চালু না হওয়া পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন গনগণের পাসপোর্টের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ২০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বুকলেট এবং ২০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল ক্রয় করা বিশেষ প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দর প্রক্রিয়ায় পাসপোর্ট ক্রয় করা হলে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে ৪/৫ মাস পাসপোর্ট সংকট মোকাবেলা করতে হতে পারে। এতে দেশের ভাবমূর্তি বিশেষভাবে ক্ষুন্ন হতে পারে ও পাসপোর্টের আবেদনকারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে এবং জনগণের বিদেশ গমনে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে। এ বিবেচনায় গত ১২ সেপ্টেম্বর তারিখে পত্রিকায় সংশোধনী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বুকলেট ও লেমিনেশন ফয়েল সরবরাহের লক্ষ্যে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তটি বাতিল করা হয়।
জনস্বার্থে এবং দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২০ লাখ রিডেবল পাসপোর্ট বুকলেট এবং ২০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির নীতিগত অনুমোদন পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
ঢাকা/হাসনাত/শাহনেওয়াজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন