ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

২০০ পাজেরো জিপ নিয়ে বিপাকে প্রগতি

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৪, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 ২০০ পাজেরো জিপ নিয়ে বিপাকে প্রগতি

জিপের নতুন সংজ্ঞা ও শুল্কায়ন সংক্রান্ত জটিলতায় পড়েছে দেশীয় গাড়ি উৎপাদনকারী একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে সৃষ্ট এমন জটিলতায় চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে থাকা অন্তত ২০০ পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স মডেলের জিপ ছাড় করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। যার প্রকৃত মডেল হলো মিতসুবিসি পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স জিপ।

এ জটিলতা দ্রুত নিরসন না হলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এমন দাবি করেছেন প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের  ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তৌহিদুজ্জামান।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া  বরাবর পাঠানো এক চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি মো. তৌহিদুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেন।

এনবিআরে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের আমদানিকৃত সিকেডি জিপের সংজ্ঞা সংশোধন ও ডাবল কেবিন পিকআপের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে যোগপোযোগী করার জন্য মন্ত্রণালয় হতে বিভিন্ন সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ গত ২৯ জুলাই একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ওই সভায় বলা হয়েছিল, পুনরায় একটি সভা করে সিকেডি জিপের সংজ্ঞা পরিবর্তন ও সাময়িকভাবে শুল্কায়িত পণ্য চালানের বিপরীতে দাখিলকৃত অঙ্গীকারনামা ও ব্যাংক গ্যারান্টির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া আরো সময়ের প্রয়োজন। তাই বর্তমানে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ছাড়ের অপেক্ষায় থাকা ২০০ ইউনিট জিপ  ছাড় করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল।

প্রতিষ্ঠানটির দাবি, এ অবস্থায় সরাসরি কোনো নির্দেশনা না দিলে মালামাল ছাড়করণ সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হবে। আমদানিকৃত ওই মডেলের ২০০ ইউনিট গাড়ির সিকেডি সংজ্ঞার পরিবর্তন হলে শুল্কায়ন বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এতে আমদানিকৃত গাড়ির মূল্য অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে যা সরকারি খাতের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের জন্য বাজেটের অতিরিক্ত ব্যয় হবে। ফলে সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান গাড়ি ক্রয় করতে পারবে না। যে কারণে গাড়ি অবিক্রিত থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

একই সঙ্গে এডিপিতে গাড়ি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ অব্যায়িত থাকবে এবং প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (পিআইএল) লোকসানের মুখে পড়ে বন্ধ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় সিকেডি গাড়ির সংজ্ঞা সংশোধন ও ব্যাংক গ্যারান্টি গ্রহণ করে খালাস প্রদান করা পণ্য চালানের বিষয়ে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্বাভাবিক আইন অনুযায়ী আমদানিকৃত গাড়ি খালাস করার জন্য অনুরোধ করা গেল।

চিঠিতে আরো বলা হয়, এক হিসেবে দেখা গেছে, নতুন হিসেবে গাড়ি শুল্কায়িত হলে আমদানিকৃত প্রতিটি গাড়ির বিক্রয় মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা হবে। যা সরকারি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত বাজেট ৯৪ লাখ টাকার চেয়ে বেশি হবে। ফলে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের গাড়ি বিক্রয় করা সম্ভব হবে না। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে ছাড় করার অপেক্ষায় গাড়িসমূহ দ্রুত ছাড় করা প্রয়োজন। তা না হলে প্রতিদিন শিপিং এজেন্টের কন্টেইনার ডিটেনশন চার্জ ও অতিরিক্ত বন্দর ডেমারেজ আরোপিত হচ্ছে। শুধু তাই নয় আমদানিকৃত গাড়ি ছাড় না করতে পারলে এক সময় তা নিলামে উঠার সম্ভাবনাও রয়েছে।

তাই শুল্ক-করাদি জাতীয় জটিলতা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী সিকেডি জিপের ১৯৯৭ সালের সংজ্ঞা সংশোধন ও সিকেডি ডাবল কেবিন পিকআপের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা জন্য পুনরায় অনুরোধ করা গেল।

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বাংলাদেশের একটি গাড়ি সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান। এটি বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি করা যন্ত্রাংশের ভিত্তিতে গাড়ি সংযোজন করে থাকে। যা স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় অবস্থিত। বাংলাদেশের বৃহত্তম গাড়ি সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানটি প্রাইভেটকার, জিপ, বাস, ট্রাক, পিকাপ, অ্যাম্বুলেন্স, ও ট্রাক্টর সংযোজন করে থাকে।

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের জেনারেল মোটরসের কারিগরি সহযোগিতায় চট্টগ্রামের বাড়বকুন্ডে গাড়ি উৎপাদনের জন্য ব্যক্তি মালিকানায় গান্ধারা ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড  (পিআইএল) নামে জাতীয়করণ করে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) নিয়ন্ত্রণে দেয়া হয়। যা অদ্যাবধি বিএসইসি কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে। যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টরের বিপর্যস্ত অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটি জরুরি ভিত্তিতে ইংল্যান্ড থেকে সুপিরিয়র বাস ও বেডফোর্ড ট্রাক আমদানি করে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

 

ঢাকা/এম এ রহমান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়