৩ কারণে বেড়েছে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম
দেশে করোনা রোগীর মৃত্যুর খবর জানার পর হঠাৎ করেই বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। ক্রেতাদের মতে, তিন কারণে দাম বেড়েছে। তারা বলছেন, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, পাইকারি বাজারে জোগানের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কিনে মজুত করার প্রতিযোগিতার কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে।
রাজধানীর বাড্ডা, কারওয়ানবাজার, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, আদাবর ও মিরপুরের খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মিনিকেট চাল কেজিতে ৭ থেকে ৯ টাকা, ডিম ডজনে ১০ টাকা, পেঁয়াজ কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা, তেল লিটারে ৩ থেকে ৫ টাকা, ডাল ৭ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মশলা ও সবজির দামও বেড়েছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী আবু সালেহ সায়াদাত থাকেন রাজধানীর বাড্ডা এলাকায়। বুধবার (১৮ মার্চ) রাতে বাসার পাশের মুদি দোকানে যান চাল কিনতে। দোকানি তাকে জানালেন, চাল নেই। এরপর বেশ কয়েকটি দোকানে ঘোরেন কিন্তু পাননি। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে দোকান থেকে ১০ কেজি মিনিকেট চাল কিনেছেন ৫৭ টাকা ধরে। অথচ এই চালই এক সপ্তাহ আগে কিনেছিলেন ৫৩ টাকায়। তিনি বলেন, ‘দোকানি আমাকে বলেছেন, আরও বেশি করে চাল কিনে রাখুন। দাম আরও বাড়বে।’
আবু সালেহ সায়াদাত বলেন, ‘দোকানিকে বললাম, চাল নেই কেন? জবাবে দোকানি জানালেন, মোকামের আড়তগুলোতে চাল নেই। এজন্য তারাই দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
প্রায় একই অভিজ্ঞতা ধানমন্ডির বাসিন্দা সাদেকুল ইসলাম শাওনেরও। তিনি বলেন, ‘চাল, ডাল, ডিম, তেল—সবকিছুই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ’
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষিমার্কেটে একঘণ্টা অবস্থান করে দেখা গেছে, নিত্য প্রয়োজনীয় সব দোকানেই ক্রেতাদের ভিড়। প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন সবাই। এছাড়া এলাকার বেশ কয়েকটি সুপার শপে ভিড় লক্ষ করা গেছে।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার কারণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলে আপৎকালীন সঞ্চয়ের জন্য তারা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিচ্ছেন।
জানতে চাইলে শ্যামলীর তাসমিনা তুলি বলেন, ‘বাজারের চাল-ডালের দাম বেড়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় এক মাসের জন্য প্রয়োজনীয় সব খাবার কিনে নিচ্ছি’।
উর্মিলা নামে এক গৃহিণী বলেন, ‘দাম বাড়ার আগেই আমরা ৫০ কেজির এক বস্তা চাল কিনে রেখেছি। এখন শোনা যাচ্ছে, দাম বেড়ে গেছে। এ জন্য অন্যান্য জিনিসপত্র কিনছি।’
পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন বলেন, ‘চাহিদা বেশি। জোগান কম। দামও বেশি কিছুটা বেড়েছে। তবে সিন্ডিকেট হচ্ছে না।’
এদিকে, করোনায় আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত পণ্য কেনা ও মজুদ না করার আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী।
নিত্যপণ্যের বাজার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। কোনো অঙ্গতি দেখলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হচ্ছে।’
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালন লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘করোনাকে কেন্দ্র করে স্যানিটাইজার, দ্রব্যের দাম বাড়ার জন্য এখন পর্যন্ত ৪৫ লাখ টাকার বেশি জরিমানা করা হয়েছে। ’ দাম নিয়ন্ত্রণে তারা কাজ করছেন বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
ঢাকা/নূর/এনই
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন