ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

৯ দশক ধরে ঈদের জনপ্রিয় গান

জাহাঙ্গীর আলম বকুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩০, ৩১ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৯ দশক ধরে ঈদের জনপ্রিয় গান

জাহাঙ্গীর আলম বকুল : বাঙালি মুসলিমদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ। বছরে দুই বার আসে ঈদ। একটি ঈদুল ফিতর। অন্যটি ঈদুল আজহা। প্রতি বছর ঈদ আসে। যায়। যেমন এর আগেও এসেছিল। এই ঈদ নিয়ে বাংলায় কত শত গান যে রচিত হয়েছে, তার ইয়াত্তা নেই। কিন্তু আজ পর্যন্ত ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ... ’ গানটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বলা চলে- গত ৮৮ বছরে ঈদের একমাত্র গান। সম্ভবত ভবিষ্যতেরও।

গানটির রচয়িতা কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৩১ সালে তিনি গানটি লেখেন। এই গান লেখা নিয়ে একটা কাহিনী আছে। গানটি প্রথম গেয়েছিলেন পল্লী গানের প্রখ্যাত শিল্পী আব্বাস উদ্দিন। নজরুলের যে ৬০টি গান আব্বাস উদ্দিনের কণ্ঠে রেকর্ড করা হয়, এটি সেগুলো অন্যতম।

১৯৩১ সালে নজরুল ইসলাম আধা ঘণ্টায় লিখে ফেলেন কালজয়ী এই গানটি। এর চার দিন পর শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের কণ্ঠে গানটি রেকর্ড করা হয়। রেকর্ড করার দুই মাস পর ঈদের আগে আগে প্রকাশ করা হয়। যে গানটি গ্রামোফোন কোম্পানি রেকর্ড করতে চায়নি, আব্বাস উদ্দিনের পীড়াপীড়িতে সম্মত হয় এবং আব্বাস উদ্দিনের অনুরোধ রাখতে নজরুল ইসলাম গানটি লেখেন, প্রকাশের পর সেই গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।

কীভাবে গানটি রচিত হলো, তা জানিয়ে গেছেন আব্বাস উদ্দিন তার স্মৃতিকথা ‘দিনলিপি ও আমার শিল্পী জীবনের কথা’ গ্রন্থে। ‘একদিন কাজীদাকে বললাম, কাজীদা, একটা কথা মনে হয়। এই যে পিয়ারু কাওয়াল, কাল্লু কাওয়াল- এরা উর্দু কাওয়ালি গায়, এদের গান অসম্ভব বিক্রি হয়। এ ধরনের বাংলায় ইসলামি গান দিলে হয় না?’

কথাটা কাজী নজরুল ইসলামের মনে লাগল। তিনি আগে গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গে কথা বলতে বললেন, তারা ইসলামি গান প্রকাশ করতে রাজি হবে কি না? আব্বাস উদ্দিন তাই করলেন। তখনকার গ্রামোফোন কোম্পানিকে এই অভিপ্রায় জানালেন। কিন্তু ‘না না, ওসব গান চলবে না’- প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। তাদের ধারণা ছিল, মুসলমানরা টাকা দিয়ে গানের রেকর্ড কিনবে না। আব্বাস উদ্দিন হতাশ না হয়ে চেষ্টা অব্যাহত রাখেন এবং এক পর্যায়ে রাজি করাতে সক্ষম হন।

‘আমি কাজীদাকে বললাম, ভগবতীবাবু (গ্রামোফোন কোম্পানি) রাজি হয়েছেন।’  তখন কাজী নজরুল ইসলাম ঠোঙাভর্তি পান আর চা আনতে বললেন। আব্বাস উদ্দিন পান আর চা আনালেন। এরপর দরজা বন্ধ করে লিখতে বসলেন। এক বসাতেই আধ ঘণ্টায় লিখে ফেললেন- ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ...।’ আব্বাস উদ্দিন তখনই সুর শিখিয়ে দিতে বললেন। নজরুল সুর সংযোগ করে শিখিয়ে দিলেন। রচিত হলো বাংলার কালজয়ী গান।

গানটি রচনার পর প্রায় নয় দশক পেরিয়ে গেছে। এতদিনে গানটির জনপ্রিয়তায় এতটুকু কমতি নেই। বরং বেড়েছে। এ গানে ঈদের ধর্মীয় ভাব এবং উৎসবের পূর্ণ আনন্দের আবহ রয়েছে, যা বিরল। সন্ধ্যায় ঈদের চাঁদ দেখা গেলে পাড়ায়, মহল্লায় প্রথমে শোনা যায় হৈ হুল্লোড়। তার পরই টেলিভিশন ও বেতারে বাজতে থাকে- ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে...’।

এই গান দিয়েই বাংলায় মুসলিমদের মধ্যে সঙ্গীত শোনা ও চর্চার শুরু। এরপর ইসলামের নানা দিক ও ঈদ নিয়ে গান রচনার চেষ্টা অনেকে করেছেন কিন্তু তাতে এতটা সফল কেউই হননি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ মে ২০১৯/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়