কেএনএফ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির প্রথম ভার্চুয়াল আলোচনা
বান্দরবান সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
পাহাড়ে চলমান পরিস্থিতিতে শান্তিপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বান্দরবানে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি’ ও সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ এর মধ্যে প্রথম ভার্চুয়ালি আলোচনা করা হয়েছে। বুধবার (১৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা পর্যন্ত কেএনএফের দাবিনামা বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদসভা কক্ষ থেকে ভার্চুয়ালি ১২ সদস্য বিশিষ্ট শান্তিপ্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেন। শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষে নেতৃত্ব দেন কমিটির মুখপাত্র কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা, কেএনএফের চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটির নেতৃত্ব দেন মুইয়াম বম।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা।
কেএনএফের দাবি দাওয়া ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, কেএনএফ দ্বারা পরিচালিত Vate kuki ফেসবুক পেইজে তাদের যে দাবিনামা পেশ করা হয়েছে, সেগুলোই কেএনএফএর দাবিনামা বলে জানান মুখপাত্র কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা।
তিনি আরো জানান, বেশ কয়েকবার যোগাযোগ ও চিঠি আদান প্রদান করার পর প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী ফলপ্রসু এবং আন্তরিকভাবে আলোচনা হয়েছে। সামনে আরও আলোচনা হবে এবং এটা চলমান থাকবে।
গত ১৯ মে ‘Vate kuki’ ফেইসবুক পেইজ থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে তিনটি দাবিনামা উল্লেখ করা হয়। তা হলো—
১. প্রান্তিক অঞ্চলের অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর বিলীয়মান সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষাসহ পশ্চাৎপদ অঞ্চলে পাহাড়ি-বাঙ্গালি জনগোষ্ঠীর মধ্যকার শান্তিপ্রতিষ্ঠা ও সার্বিক উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে এবং কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর পূর্ব পুরুষদের আদিভূমি সংরক্ষণার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্বাঞ্চলের নয়টি উপজেলাকে (বাঘাইছড়ি, জুরাইছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি, রোয়াংছড়ি, রুমা, থানছি, লামা ও আলিকদম) নিয়ে একটি পৃথকভাবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রণয়নসহ পৃথকভাবে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল দিতে হবে।
২. দাবিকৃত অঞ্চলাধীন এলাকায় দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা থেকে আলাদা হিসেবে চিহ্নিতকরণ এবং জেলা ও আঞ্চলিক প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যবস্থা থেকে পৃথকীকরণ করাসহ অত্রাঞ্চলের পাহাড় ও বনাঞ্চল সংরক্ষণার্থে ‘ইনার লাইন পারমিট‘ (আইএলপি) প্রণয়ন করতে হবে। যার সকল ক্ষমতা বর্তাবে কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসনের উপর। যার সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করবে রাষ্ট্র, এতে কোন স্থানীয় সরকার, জেলা বা আঞ্চলিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার আওতাধীন থাকবে না।
৩. শরণার্থী কমিটি গঠনপূর্বক বৃটিশ আমল থেকে অদ্যাবধি রাষ্ট্রীয় সমস্যার কারণে (বৃটিশ প্রশাসনের দেশ-বিভক্তি, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং সশস্ত্র শান্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর সশস্ত্র সংঘর্ষের কারণে) নিকটবর্তী দেশ সমূহ- ভারতের মিজোরাম রাজ্যে ও বার্মার পালেতুয়া অঞ্চলে দেশান্তরিত হওয়া অনগ্রসর ও নিষ্পেষিত কুকি-চিন জনগোষ্ঠীদের পার্বত্য চট্টগ্রামের পৈতৃকভূমিতে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং পূণর্বাসনের সুব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বান্দরবানে চলমান ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (কেএনএফ) সমস্যা সমাধানের জন্য গত ২২ জুন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা কে আহ্বায়ক, কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যাকে মুখপাত্র ও সদস্য এবং লালজার বমকে সদস্য সচিব করে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়।
চাইমং/বকুল