ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

বর্ষায় ঘুরে আসুন চলনবিল

আবদুল মান্নান পলাশ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২১, ৯ জুলাই ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বর্ষায় ঘুরে আসুন চলনবিল

চলনবিলের নয়নাভিরাম একটি দৃশ্য

আবদুল মান্নান পলাশ, চাটমোহর (পাবনা) : যে দিকে চোখ যায় শুধুই জলরাশি। সে বিস্তৃত জলরাশি জুড়ে ঢেউয়ের খেলা। মাঝে মধ্যে দিগন্ত রেখায় সবুজের  আলপনা। এরমধ্যে ঢেউ ভেঙে ছুটে চলেছে শ্যালো নৌকা। আছে মাছধরার নানা আয়োজনও। এটাই বর্ষা মৌসুমের চলন বিল।

দেশের বিস্তৃত এক জলাভূমির নাম চলনবিল। নাটোর-সিরাজগঞ্জ-পাবনা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এ বিলের অবস্থান। শুকনো মৌসুমে বিলের আয়তন অনেক কমে গেলেও তা প্রাণ ফিরে পায় বর্ষাকালে। তাই ভ্রমণ পিপাসুদের এই মৌসুমে চলনবিল হতে পারে উপযুক্ত গন্তব্য।

ফিরে দেখা : ব্রহ্মপুত্র নদ যখন তার প্রবাহপথ পরিবর্তন করে বর্তমান যমুনায় রূপ নেয়, সে সময়ই চলনবিলের সৃষ্টি। গঠিত হওয়ার সময় চলনবিলের আয়তন ছিল প্রায় ১ হাজার ৮৮ বর্গকিলোমিটার। তবে বর্তমানে এর আয়তন অনেক কমে এসেছে। চলনবিল মূলত অনেকগুলো ছোট ছোট বিলের সমষ্টি মাত্র। বর্ষায় এই বিলগুলোতে জলপ্রবাহ বেড়ে একসঙ্গে বিশাল এক বিলের সৃষ্টি করে। সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ-রায়গঞ্জ, পাবনা জেলার চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর এবং নাটোর জেলার সিংড়া-গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম উপজেলাজুড়ে এ বিলের বিস্তৃতি। বিলটির দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্ত পাবনার নুননগরের কাছে অষ্টমনীষা পর্যন্ত বিস্তৃত। নাটোরের সিংড়া থেকে গুমনী পাড়ের কছিকাটা পর্যন্ত বিলটি প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ।

নাটোরের চলনবিল : চলনবিলের সবচেয়ে বড় অংশ পড়েছে নাটোরে। জেলার সিংড়া উপজেলায় রয়েছে চলনবিলের একটি অংশ। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে বনপাড়া পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক তৈরি হয়েছে চলনবিলের ওপর দিয়েই। সড়কের দুইপাশে যেদিকে চোখ যায় শুধু অথৈ জলরাশি। এ পথে চলতে চলতে চলনবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় দু’চোখ ভরে। নিজেদের গাড়িতে গেলে ইচ্ছামতো থেমে থেমে চলনবিল দেখা যায়। চলনবিলের আকর্ষণীয় একটি অংশ হাইতি বিল। এটি নলডঙ্গা উপজেলায়। নাটোর জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে এ বিলের অবস্থান। এ বিলটিকে দেশের সবচেয়ে গভীর বিল বলা হয়। প্রায় ১২ মিটার গভীর এ বিলে সারা বছরই পানি থাকে। তবে বর্ষায় পানির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।   

চলনবিল জাদুঘর : গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর গ্রামে আছে চলনবিল জাদুঘর। বিখ্যাত ‘চলনবিলের ইতিকথা’ গ্রন্থের লেখক অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদের প্রচেষ্টায় ১৯৭৮ সালে গড়ে উঠেছে বিচিত্র এ জাদুঘর। চলনবিলে প্রাপ্ত নানান নিদর্শন, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম ছাড়াও এখানে আছে অনেক দুর্লভ সংগ্রহ। নাটোর থেকে বাসে গুরুদাসপুর উপজেলায় এসে সেখান থেকে নন্দকুঞ্জা নদী পার হয়ে রিকশায় আসা যাবে খুবজীপুর গ্রামের এ জাদুঘরে। শনিবার জাদুঘর বন্ধ থাকে। 

যাতায়াত ও থাকা : ঢাকার গাবতলী থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহণ, ন্যাশনাল পরিবহণসহ প্রভৃতি বাসে যাওয়া যায় নাটোর। রাজশাহীগামী যে কোনো বাসেই নাটোর আসা সম্ভব। ভাড়া ৩৫০-৪০০ টাকা। নাটোরের চলনবিল অংশ দেখতে গেলে থাকতে হবে নাটোর জেলা সদরে। এ শহরে থাকার জন্য সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। শহরের চকরামপুরে হোটেল ভিআইপি (ফোন: ০৭৭১-৬৬০৯৭, নন এসি কক্ষ ২০০-৩০০ টাকা), মাদ্রাসা রোডে হোটেল উত্তরা (ফোন: ০৭৭১-৬২৫১৯, নন এসি কক্ষ ২০০ টাকা), মাদ্রাসা মোড়ে হোটেল মিল্লাত (ফোন: ০৭৭১-৬১০৬৫, নন এসি কক্ষ ২৮০ টাকা), কানাইখালীতে হোটেল আরপি (ফোন: ০৭৭১-৬২৫৭৯, নন এসি কক্ষ ২৭০ টাকা)।

সিরাজগঞ্জের চলনবিল : জেলার রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলার বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে চলনবিলের অংশ বিশেষ। চলনবিলের বেশ কয়েকটি বিল পড়েছে এ উপজেলা দুটিতে। বর্ষায় বেড়াতে এলে চলনবিলের এসব জায়গায় বেড়ানো যেতে পারে।

যাতায়াত ও থাকা : ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ আসা যায় সড়ক ও রেল পথে। ঢাকার মহাখালী থেকে সৌরভ পরিবহণ (০১১৯৯১২২৩৪৫), এস আই এন্টারপ্রাইজ (০১৭১২৬৭৮৬৪৯), গাবতলী থেকে ইউনিক সার্ভিস (০১১৯০৮০৬৪৭৭) ইত্যাদি পরিবহণের বাস যায় সিরাজগঞ্জে। ভাড়া ২৭০ টাকা। সিরাজগঞ্জ থেকে রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলায় আসা যাবে লোকাল বাসে। সিরাজগঞ্জ শহরে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল হলো শহরের স্বাধীনতা স্কোয়ারে হোটেল আল হামরা, (ফোন: ০৭৫১-৬৪৪১১, ০১৭৪৫৬২৯২৬৪, এসি এক শয্যার কক্ষ ৫০০ টাকা, এসি দ্বি শয্যার কক্ষ ৭০০ টাকা, নন এসি এক শয্যার কক্ষ ১৫০, নন এসি দ্বি শয্যার কক্ষ ২৫০ টাকা)।

পাবনার চলনবিল : চাটমোহর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে চলনবিলের অংশের শুরু। এখানেই ‘চলনবিলীয়া’ নামে খ্যাত চাটমোহর-ছাইকোলা সড়কের দু’ধারে থৈ থৈ জলের নয়াভিরাম দৃশ্য ও নৌকা ভ্রমণ, নৌকা বাইচ দেখার জন্য বর্ষাকালের শুক্র ও শনিবার হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসুদের সমাগম ঘটে। হান্ডিয়ালের মহাদেব মন্দির, জগৎশেঠের বাংলো, বুড়ো পীরের মাজার দেখতে যেতে পারেন। যেতে পারেন সমাজ-শীতালই গ্রামে। সেখানে সম্রাট শের শাহ পুত্র শাহজাদা সলিম নির্মিত মসজিদ, আশরাফ জিন্দানী (রহঃ) এর মাজার ও একটু দূরেই শীতালই জমিদার বাড়ি। থাকার ব্যবস্থা চাটমোহর শহরে আছে। নতুন সরকারি ডাক বাংলো ও পল্লী বিদ্যুতের অতিথিশালা (এসি)। ভাড়া দু’টোতেই সাশ্রয়ী। 

যাতায়াত ও থাকা : ঢাকা থেকে সরাসরি পাবনা যাওয় যায় সড়কপথে। প্রতিদিন সকাল ৫টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থার বাস চলাচল করে এ পথে। পাবনা এক্সপ্রেস (০১৭১১০২৪০৮৮), শ্যামলী পরিবহণ, শাহজাদপুর ট্রাভেলস, রাজা বাদশা পরিবহণ (০১৭১৬৩০৭৫২০), কিংস পরিবহণ (০১৭১১৪৮০৩১৫), বাদল গ্রান্ড চয়েজ (০১৬৭১৬৪০৬৪২), সরকার ট্রাভেলসে (০১৭২৫৪৪২৬৪৬) যেতে পারেন পাবনায়। এসব পরিবহণের সাধারণ চেয়ার কোচ চলে এ পথে। ভাড়া ৩৫০ টাকা। পাবানা শহরে রাত্রিযাপন করার জন্য ভালো মানের হোটেল হলো শহরের জালালপুরে প্রশান্তি ভুবন পার্ক (০১৭১২৮৮৫৭৮২, এসি কক্ষ ১২০০-১৫০০, সাধারণ কক্ষ ৮০০ টাকা), হোটেল পার্ক (০১১৯৭০৮৩৩০১, এসি কক্ষ ২৫০-৬০০ টাকা), হোটেল শীল্টন (০১৭১২৪৩৩২৫০, এসি কক্ষ ৭০০, সাধারণ কক্ষ ২০০-৩০০ টাকা)।

কীভাবে বেড়াবেন : চলনবিলে বেড়ানোর জন্য স্থানীয় নৌকা পাওয়া যাবে ভাড়ায়। সারা দিনের জন্য ভালো মানের একটি নৌকার ভাড়া পড়বে ৫০০-৮০০ টাকা। এ ছাড়া ইঞ্জিন চালিত শ্যালো নৌকা মিলবে ১০০০-২০০০ টাকায়। চলনবিলে বেড়ানোর জন্য সাধারণ নৌকাই ভালো। কারণ, ইঞ্জিন নৌকার শব্দ আপনার বিরক্তির কারণ হতে পারে।

সতর্কতা : যারা সাঁতার জানেন না, তারা চলনবিলে ভ্রমণে গেলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নেবেন। নৌকায় ভ্রমণকালে হৈ চৈ, লাফালাফি করবেন না। এতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। ঝড়ো বাতাস উঠলে চলনবিলের পানিতে বিশাল বিশাল ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়।

 

রাইজিংবিডি/চাটমোহর/৯জুলাই২০১৪/পলাশ/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়