ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

জনশক্তি রপ্তানির সুফল পেতে চাই দক্ষ শ্রমিক

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ১০ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ২০:৩০, ১০ জুলাই ২০২৪
জনশক্তি রপ্তানির সুফল পেতে চাই দক্ষ শ্রমিক

কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার চম্পকনগরের সুমন মিয়া ২০২৩ সালের জুনে ভাগ্যান্বেষণে ইতালি যান, উদ্দেশ্য ছিল নিজের এবং পরিবারের ভাগ্য ফেরানো। কৃষিকাজের ভিসা নিয়ে সুমন গিয়েছিলেন ইতালির রাজধানী রোমে। ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ দেশ ইতালিতে কাজ পাওয়ার প্রধান দুটি যোগ্যতা-দক্ষতা এবং ভাষাজ্ঞান। যার কোনোটাই ছিল না সুমনের। ফলে দীর্ঘ সাত মাস বেকার থাকেন তিনি। 
একদিকে দেশের বাড়িতে ঋণের বোঝা অন্যদিকে থাকা-খাওয়ার খরচ জোগাতে হিমশিম অবস্থা ছিল তার। এর সাথে ছিল কাজ না পাওয়ার হতাশা আর অনিশ্চয়তাও। এই অবস্থায় সাত মাসের মাথায় আত্মহত্যা করেন মাত্র ২৫ বছর বয়সি ওই টগবগে যুবক। 

ইতালিতে দক্ষ শ্রমিকের কোনো বিকল্প নেই। ইতালির স্থানীয় ভাষা জানা না থাকলে এবং নির্দিষ্ট কাজের দক্ষতা না থাকলে দেশটিতে কাজ পাওয়া খুব কষ্টকর। প্রসঙ্গত ইতালীয় জনশক্তির মাত্র ১৩ শতাংশ তাদের দৈনন্দিন কাজে ইংরেজিতে কথা বলে। তাই দেশটিতে কাজ পেতে হলে স্থানীয় ভাষা শেখা খুব জরুরি। বিশ্বের প্রায় সব দেশের এমন স্থানীয় কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না নিলে এসব বিষয় সম্পর্কে যেমন জানা যায় না, তেমনি দক্ষতার অভাবে কর্মহীন থাকতে হয় অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশিকে। 

লাখ লাখ টাকা খরচ করে অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি দিয়ে সুমন মিয়ার মতো এমন অনিশ্চিত জীবনযাপন করা বাংলাদেশির সংখ্যা কম নয়। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না নিয়ে বিদেশে গিয়ে একদিকে যেমন তারা অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, তেমনি দেশের সুনামও নষ্ট করছেন।

অদক্ষ জনশক্তি রপ্তানির বিড়ম্বনা 

বিদেশগামীদের অধিকাংশই অদক্ষ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকরা হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটেও ন্যায্য বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছেন। দেশীয় শ্রমবাজারে শ্রমশক্তির চাহিদা ও জোগানের সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এ কারণে আমাদের শ্রমশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রস্থল হিসাবে সাধারণত বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজারকে ধরা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশগামী শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে বারবার বলাও হচ্ছে। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালাও করা হয়েছে; কিন্তু প্রচারণা এবং বিদেশগামী যুবকদের প্রশিক্ষণ গ্রহণে অনাগ্রহের কারণে সুফল মিলছে না। শ্রমশক্তির চাহিদা ও জোগানের সমন্বয়হীনতা থেকেই যাচ্ছে। 

জমি বিক্রি কিংবা ঋণ করে দালাল এবং বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে যাচ্ছেন বাংলাদেশের অনেক শ্রমিক। এই শ্রমিকদের বেশির ভাগেই কোনো ধরনের কাজের দক্ষতা নেই। ফলে তারা নিয়োগ পাচ্ছেন অপেক্ষাকৃত নিচু পদে, কম বেতনে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে স্বল্প বেতনের শ্রমের অন্যতম প্রধান উৎস হিসাবে ধরা হয়। এ কারণেই ফিলিপাইন, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের মতো প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ কর্মীপ্রতি রেমিট্যান্স কম পায়। আবার চাকরিচ্যুতি, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনসহ নানা ধরনের বিড়ম্বনায়ও পড়েন এসব অপ্রশিক্ষিত ও অদক্ষ শ্রমিকশ্রেণি। এমনকি বর্তমানে আমাদের মোট অভিবাসনের একটি বড়ো অংশজুড়ে আছে শ্রমিকদের অস্থায়ী দেশান্তর। এরও প্রধান কারণ অদক্ষতা। 

পরিসংখ্যান 

বিশ্ববাজারের দক্ষ কর্মীর চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে, কারণ দেশে আশানুরূপ দক্ষ শ্রমিক তৈরি হচ্ছে না। বিদেশে বাংলাদেশের অর্ধেক শ্রমশক্তিই অদক্ষ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ। যদি আমরা পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই তাহলে এর সত্যতা মেলে। 
বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে গেছেন ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন শ্রমিক। তার আগের বছর, ২০২২ সালে গেছেন ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন শ্রমিক। এর মধ্যে মাত্র দুই লাখ এক হাজার ৭৩১ জন শ্রমিক দক্ষ, যা বিদেশ যাওয়া মোট শ্রমিকের ১৭.৭৬ শতাংশ। ২০২১ সালে গেছেন ২১.৩৩ শতাংশ দক্ষ শ্রমিক। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ৩.৫৭ শতাংশ কম দক্ষ শ্রমিক বিদেশে গেছেন। 

দক্ষ শ্রমিকের পাশাপাশি ২০২২ সালে অর্ধদক্ষ শ্রমিকের সংখ্যাও কমেছে। বিএমইটির তথ্যানুযায়ী ২০২২ সালে ৩৭ হাজার ২৯ জন অর্ধদক্ষ শ্রমিক বিদেশে গেছেন, যা মোট শ্রমিকের ৩.২৬ শতাংশ। ২০২১ সালে যা ছিল ৩.২৮ শতাংশ। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে অর্ধদক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা কমেছে ০.০২ শতাংশ। তবে দক্ষ ও অর্ধদক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা কমলেও কিছুটা বেড়েছে পেশাদার শ্রমিকের সংখ্যা। ২০২২ সালে তিন হাজার ৭৪৮ জন পেশাদার শ্রমিক বিদেশে গেছেন, যা ওই বছর বিদেশ যাওয়া মোট শ্রমিকের ০.৩৩ শতাংশ। ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ০.১৪ শতাংশ। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ০.১৯ শতাংশ বেশি পেশাদার শ্রমিক বিদেশে গেছেন। 

তথ্যমতে, কর্মসংস্থানের জন্য সবচেয়ে বেশি বিদেশে গেছেন ড্রাইভার, কেয়ারগিভার, গৃহকর্মী, আতিথেয়তা কর্মী, ইলেকট্রিশিয়ান, কোয়ালিটি কন্ট্রোল সুপারভাইজার; রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশনার, প্লাম্বিং ও পাইপ ফিটিং এবং সাধারণ বৈদ্যুতিক কর্মী। 

অদক্ষতার কারণ 

প্রশিক্ষণের আধুনিক সুবিধা এবং পর্যাপ্ত ট্রেনিং সেন্টার থাকার পরও দক্ষ শ্রমিক তৈরি হচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ প্রশিক্ষণের গুরুত্ব না বোঝার কারণে কর্মীদের অনাগ্রহ এবং দালালের অতিরিক্ত দৌরাত্ম্য। এ ক্ষেত্রে সরকারের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। অদক্ষ বাংলাদেশিদের অভিবাসন বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ তৃণমূল পর্যায়ে ঠিকমতো কারিগরি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যবস্থা করতে না পারা। রয়েছে প্রচারণার অভাবও। 

দেশে বিএমইটির অধীনে ১১০টির মধ্যে ৭০টি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র পুরোদমে চালু থাকলেও প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা মোট শ্রম অভিবাসীদের তুলনায় ১০ শতাংশের বেশি নয়। 

সম্ভাবনা 

মধ্যপ্রাচ্যে দক্ষ শ্রমিকদের বড়ো চাহিদা রয়েছে। চাহিদা রয়েছে অন্যান্য দেশেও। তাছাড়া স্থানীয় শিল্পগুলোতে প্রচুর প্রশিক্ষিত কর্মীর কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের জাতীয় উন্নয়ন বজায় রাখতে দক্ষ শ্রমিক প্রেরণ করা প্রয়োজন। যত বেশি দক্ষ শ্রমশক্তি বিদেশে রপ্তানি করা হবে, দেশে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের হার তত বৃদ্ধি পাবে। 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অন্তত ৩০টি সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য বাংলাদেশের শ্রমিকদের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে সড়ক ও ভবন নির্মাণ, কাঠমিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ান, তৈরি পোশাক, রেস্তোরাঁ, গাড়ি চালনা, নার্স, গৃহকর্মী, কৃষি খাত অন্যতম। এর বাইরে বিভিন্ন পেশার দক্ষ শ্রমিকের নতুন নতুন চাহিদাও আসছে। কিন্তু প্রশিক্ষণ না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারছে না রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। 

সরকারের পদক্ষেপ 

বিদেশে যেতে ইচ্ছুকদের কারিগরি, প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে দক্ষ করে তুলতে সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। গত ১৪ বছরে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ৫০০ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ধারণ ক্ষমতা ২৫ হাজার থেকে ১ লাখে উন্নীত হয়েছে। ২৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০তলা ভবন, উইমেন ডরমিটরি, ওয়ার্কশপ ও ল্যাব নির্মাণের মাধ্যমে ৪৯টি টেকনিকের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলায় কারিগরি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০০ উপজেলায় কারিগরি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে ৬ হাজার ৪০০ শিক্ষক ও কর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া প্রজন্মের পর প্রজন্মের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দূরদর্শী অনেক উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে সরকার। 

দক্ষ শ্রমশক্তি বাড়াতে সরকার ৩০টি জেলায় নতুন ৩০টি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও পাঁচটি নৌপ্রযুক্তি শিক্ষায়তন প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া প্রবাসীদের দক্ষতা উন্নয়নে গঠন করা হয়েছে একটি তহবিল। সরকারিভাবে মাত্র ১০ হাজার টাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়ায় নারীদের কাজ নিয়ে বিদেশে যাওয়া বেড়েছে। নারীদের জন্য ২১ দিনের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রবাসীদের জন্য সরকারের একটি বড়ো উদ্যোগ হলো প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা। দেশে ৫০টি ব্যাংক থাকা সত্ত্বেও কেউ বিদেশগামী কর্মীদের জন্য এগিয়ে আসেনি। সরকার স্বল্প সুদে ও সহজে কর্মীদের জামানতবিহীন ঋণ দিচ্ছে। কর্মীদের বিমা এবং অপ্রত্যাশিতভাবে দেশে ফিরে আসতে অর্থ-সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে। 

জনশক্তি রপ্তানি কার্যক্রমে আধুনিক প্রযুক্তির সূচনা করতেও সরকার উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। বিদেশগামী কর্মীদের আঙুলের ছাপ দিয়ে স্মার্ট কার্ড নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে জালিয়াতি বন্ধ হয়েছে। কর্মীদের তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে বিএমইটির ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। অনলাইনে ভিসা যাচাই ও নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিক উভয়েরই অভিযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দালালপ্রথা ভেঙে একটি যুগোপযোগী ডেটাবেজ গড়ে তোলার জন্য দেশের সব জেলায় বিদেশগামীদের নাম নিবন্ধন কার্যক্রম চালু হয়েছে। মোবাইলের মাধ্যমেও এখন নাম নিবন্ধন করা হয়। এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে যেমন স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, তেমনি প্রতারণাও অনেক কমে আসছে। 

করণীয় 

শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ খাতে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। আমাদের বড়ো বাধা ভাষাগত দক্ষতা। ভাষাভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাড়ানো প্রয়োজন। স্থায়ী অভিবাসী এবং বিদেশে অস্থায়ী কর্মীদের উভয়ের জন্য আলাদা ডাটাবেজ বা রেকর্ড থাকা দরকার, যা এখনো হয়নি। পরিসংখ্যান স্থায়ী অভিবাসী ও বিদেশে কর্মরত অস্থায়ী অভিবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্সের মধ্যকার পার্থক্য আরও ভালোভাবে তুলে ধরতে পারে। বস্তুত প্রতারণার কারণে বহির্বিশ্বের সম্ভাবনাময় অনেক শ্রমবাজার এদেশীয় শ্রমিকদের জন্য নিষিদ্ধ জোনে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি মালয়েশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে অদক্ষ কর্মী নিয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে। এ অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে কূটনৈতিক তৎপরতাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। 

শ্রমিকের দক্ষতা শিক্ষাব্যবস্থার মানের ওপরও নির্ভর করে। তাই শিক্ষার মান পরিবর্তন জরুরি। গতানুগতিক চিন্তার বাইরে এসে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তিগত আলোড়ন সর্বত্র বিরাজমান। এ বিপ্লব চিন্তার জগতে, পণ্য উৎপাদনে ও সেবাপ্রদানে বিশাল পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। মানুষের জীবনধারা ও পৃথিবীর গতি-প্রকৃতি ব্যাপকভাবে বদলে দিচ্ছে। তাই প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির পরিধি বাড়ানো প্রয়োজন। 

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা রোজানা রশীদ বলেন, অভিবাসন খাতে অদক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিক বেশি হওয়ার মূল কারণ তৃণমূল পর্যায়ে ঠিকমতো কারিগরি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যবস্থা করতে না পারা। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে অদক্ষ শ্রমিকদের বড়ো চাহিদা এবং স্থানীয় শিল্পগুলোয় প্রচুর প্রশিক্ষিত কর্মীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বিদেশে যাওয়া অদক্ষ শ্রমিকদের পরিমাণ বাড়ছে। 

তিনি আরও বলেন, ঘরোয়া কাজের জন্য যারা যায়, তাঁদের আমরা দক্ষ ক্যাটাগরিতে ফেলে দিই। এ কারণে হয়তো দক্ষ কর্মীর সংখ্যাগত বড়ো পার্থক্য হয়ে যায়। কিন্তু সার্বিকভাবে আমাদের দক্ষতার মাত্রা বাড়েনি। পাশাপাশি ভালো বাজারে ওইভাবে এক্সপ্লোর করা হচ্ছে না। দালাল বা সিন্ডিকেট যেসব মার্কেটে অপারেট করে, সেখানেই সবাই যায়। বিদ্যমান বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে। এসব কারণে আমরা অদক্ষ কর্মী থেকে ফিরে আসতে পারছি না। 

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, সরকার দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আগের তুলনায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার সক্ষমতা তিনগুণ বেড়েছে। এই সক্ষমতা এখন ১ লাখ ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। নতুন উদ্বোধন হওয়া ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র পুরোদমে চালু করা যায়নি। এগুলো চালু হলে আরও বেশি মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে পারব। এই কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে ৫৫টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এগুলো পুরোদমে চালু হলে শ্রমবাজারে দক্ষ শ্রমিকের সরবরাহ বাড়বে। দেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়বে। 

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী, প্রধান প্রতিবেদক, রাইজিংবিডি ডটকম

তারা//


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়