ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

পুলিশ কর্মকর্তার বাবা-মা খুন, ‘ক্লু’ উদঘাটনে চলছে তদন্ত

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ১২ জুলাই ২০২৪  
পুলিশ কর্মকর্তার বাবা-মা খুন, ‘ক্লু’ উদঘাটনে চলছে তদন্ত

ঈদুল আজহার ছুটি তখনো শেষ হয়নি। ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা। ঈদের তিন দিন পর (গত ২০ জুন) সকালে যাত্রাবাড়ীর মোমেনবাগের নিজ বাড়ির নিচতলার পার্কিং থেকে শফিকুর রহমান (৬০) ও দ্বিতীয় তলার খাটের ওপর থেকে তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনের (৫০) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনার ২১ দিন পার হলেও ঘাতকরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। এখনো খুনের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এ ঘটনায় নিহত দম্পতির ছেলে পুলিশের বিশেষ শাখার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল্লাহ আল মামুন বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি মামলাটির ছায়া তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), র‌্যাব, সিআইডি। তাদের তদন্তেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতির খবর নেই।

খুনের রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় হতাশ নিহতের পরিবার ও স্বজনেরা। তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছেন হত্যার রহস্য উদঘাটনের। কে বা কারা, কেন খুন করলো জানতে চান তারা।

এদিকে, আগামী ৩১ জুলাই মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য রয়েছে। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার সাব-ইন্সপেক্টর মৃগাংক শেখর তালুকদার বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। বেশ কিছু বিষয় নিয়ে তদন্ত করেছি। কিন্তু খুনের রহস্য এখনো উদঘাটন করা যায়নি। যাদের সন্দেহ করা হয়েছিল তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত এমন কাউকে পাওয়া যায়নি। তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। খুনের রহস্য উদঘাটন করে ঘাতকদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনবো।

মামলার বাদী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, মামলায় এখনো আপডেট নেই। বলার মতো কিছু নেই। সন্দেহ এখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তদন্ত সংস্থা। বিষয়টা এখনও রহস্য। আমাদের কোনো বড় ধরনের শত্রুতাও ছিলো না। ছোট খাট শত্রুতা থাকতে পারে। এমন একটা ঘটনা ঘটাবে এমন কোনো শত্রু ছিলো না।

তিনি বলেন, পুরো বিষয়টা রহস্যে ঘেরা। তারা কিন্তু বাসা থেকে কিছু নেয়নি। এখন কি পুরো পরিবারকে টার্গেট করে এসেছিল না আমি বাসায় নেই এটা জেনে এসেছিলো বুঝতে পারছি না। তারা আমার রুমেও গিয়েছিলো। তাহলে মনে করেন শত্রুটার মাত্রাটা কেমন। অনেক বড় বড় মামলার রহস্য উদঘাটন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ ঘটনাটার কূল-কিনারা পাওয়া যাচ্ছে না।

আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাবা নামাজ পড়তে যাবেন। এজন্য ঘুম থেকে উঠেছিলেন। পানি ছাড়তে নিচে নেমেছিলেন। সেখানেই তাকে খুন করা হলো। আর আম্মা রুমেই ছিলেন। তাকে সেখানেই। বিষয়টা ভুতুড়ে মনে হচ্ছে। চাকরির ব্যস্ততার কারণে গ্রামে যাওয়া হতো না। ঈদের পর গ্রামে গিয়েছিলাম। আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা হবে, কিন্তু কি হলো। পাঁচ মিনিটেই জীবনটা টালমাটাল হয়ে গেলো। আল্লাহ সহায় হলে খুনের জট খুলবে।

বাসার ভাড়াটিয়া আব্দুল্লাহ আল মামুনের বন্ধু কাউসার মাহমুদ বাধন বলেন, মামুন ফেনীতে ছিলো। আমার শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। আমি আর আমার স্ত্রী কাকতালীয়ভাবে রাতে সেখানে ছিলাম। বন্ধুর স্ত্রী বাবার বাড়ি গিয়েছিলেন আমরা জানতাম না। আমার বাসায় আম্মা আর একটা ভাগ্নি ছিলো। তারা এ ঘটনা দেখে আমার বোনের বাসায় চলে যায়। আমার বোন ফোন করে বিষয়টি জানায়। পরে এসে দেখি এ অবস্থা।

তিনি বলেন, বিষয়টা নিয়ে অনেকদিন ধরে চিন্তা করছি। কিন্তু কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছি না। তাদের তেমন কোনো শত্রুও ছিলো না। বিষয়টি নিয়ে চারটি সংস্থা কাজ করছে। কিন্তু কোনো কূল কিনারা পাচ্ছে না। এমনভাবে প্ল্যানিং করে কাজটা করেছে কোনো প্রমাণ রাখেনি। ভালো মানুষ দুইটাকে মেরে ফেললো।

তিনি বলেন, কেন মারলো, কারা মারলো এখনো জানা গেলো না। সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করছে। খুনের রহস্য উদঘাটন না হওয়া পর্যন্ত কারো মনে শান্তি নাই। মা-বাবার এমন খুনে আমার বন্ধু মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছে। এটা অনেক বড় একটা ঘটনা। আমরা চাই এর সুষ্ঠু তদন্ত হোক। কে করেছে বের করা হোক। আর কেনো মেরেছে সেটাও আমরা জানতে চাই।

জানা যায়, ভিকটিম দম্পতি পশ্চিম মোমেনবাগের আড়াবাড়ি বটতলায় নতুন একটি চারতলা বাড়ি তৈরি করেছেন। ভবনের দুই তলায় তারা থাকতেন আর নিচতলায়, তিনতলা ও চার তলা ভাড়া দেওয়া।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৮ জুন আব্দুল্লাহ আল মামুন বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানকে যাত্রাবাড়ীর কোনাপাড়ার পশ্চিম মোমেনবাগের বাসায় রেখে গ্রামের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঁইয়া থানার রামচন্দ্রপুর গ্রামে চাচার বাড়িতে বেড়াতে যান। পরদিন তার স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে যায়। ২০ জুন তার বন্ধু কাউসার মাহমুদ বাধন স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানান, তার বাবার রক্তাক্ত মৃতদেহ বাসার নিচতলায় পড়ে আছে। তাৎক্ষণিকভাবে মামুনকে বিষয়টি জানান তার স্ত্রী। তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। এসে জানতে পারেন তার বাবার রক্তাক্ত মৃতদেহ নিচতলায় আর মায়ের লাশ দ্বিতীয় তলায় পড়ে ছিলো।

তার ধারণা ২০ জুন রাত ১২ টা থেকে সকাল ৬ টার মধ্যে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে অজ্ঞাতনামা দুস্কতিকারী/দুস্কতিকারীরা তার বাবা-মাকে খুন করেছে।

পড়ুন: রাজধানীতে দম্পতিকে কুপিয়ে হত্যা

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়