ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৩, ২৬ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৭:৫১, ২৬ জুলাই ২০২৪
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

ফাইল ফটো

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জে। গত বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার (১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই) নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ভবন, পুলিশের স্থাপনা, যানবাহনসহ বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। 

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম পাশ থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়কে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। বর্তমানে সেনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। কারফিউ শিথিল হওয়ায় যান চলাচল বেড়েছে। বেশ কিছু স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তল্লাশি চলছে। শৃঙ্খলা ফিরছে তাই নিরাপদে চলাচল করতে পারছেন সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, শুক্র ও শনিবার (১৯ ও ২০ জুলাই) দফায় দফায় নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, জালকুড়ি এলাকার যুব উন্নয়ন কার্যালয়, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অফিস, ফতুল্লার শিবু মার্কেটসংলগ্ন বেসরকারি যাত্রীবাহী বাস শীতলের ডিপো, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের ডাচ-বাংলা ব্যাংক শাখা ও হাইওয়ে পুলিশের অস্থায়ী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। 

গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যা এবং দ্বিতীয় দফায় গত শুক্রবার (২০ জুলাই) বিকেলে জেলার আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এতে সরবরাহের অপেক্ষায় থাকা প্রায় সাড়ে সাত হাজার পাসপোর্ট পুড়ে যায়। এ ছাড়া কয়েক হাজার নতুন আবেদনের কাগজ ও কম্পিউটারসহ নানা সরঞ্জাম পুড়ে যায়। 

পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলতে পারছি না। এ ঘটনায় ঢাকা কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। এ ঘটনায় ফতুল্লা থানায় নাশকতা আইনে মামলা করা হয়েছে।’ 

একই দিন অগ্নিসংযোগ করা হয় যুব উন্নয়ন কার্যালয়েও। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির মূল ফটকের ভেতরে অগ্নিসংযোগের ক্ষতচিহ্ন, জানালার কাচ ভাঙা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মূল ভবনও।

গত শনিবার (২১ জুলাই) বিকেলে শিমরাইল এলাকায় ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও হাইওয়ে পুলিশের অস্থায়ী কার্যালয়ের ভবনটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভবনটির প্রথম তলায় গাড়ির টায়ার, বিদ্যুতের কেবল, রং ও সাইকেলের দোকান ছিল। দ্বিতীয় তলায় ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও তিন তলায় চাইনিজ রেস্টুরেন্ট। পঞ্চম তলায় হাইওয়ে পুলিশের অস্থায়ী কার্যালয়।

দুর্বৃত্তরা ভবনটির নিচতলার দোকান, দ্বিতীয় তলায় থাকা ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও তৃতীয় তলায় চাইনিজ রেস্টুরেন্টে আগুন দেয়। এ সময় ব্যাংকের ভেতরে ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের কাজ করা তিন শ্রমিক নিহত হন। আহত হন দুই নিরাপত্তারক্ষীসহ ১১ শ্রমিক। গত সোমবার (২২ জুলাই) সকালে ব্যাংকের পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তুপ থেকে তিন জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন- সেলিম প্রধান, আব্দুস সালাম ও সোহেল।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা ১২টায় নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশের একটি ভ্যানে অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনকারীরা। নারায়ণগঞ্জ ক্লাব ভবনেও হামলা হয়। একই দিন বিকেলে সাইনবোর্ড এলাকায় পিবিআইয়ের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে কার্যালয়টির ব্যাপক ক্ষতি হয়। গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ভবনে হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া শহরের দুই নম্বর গেটে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা জেলার সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করেনি। এগুলো সরকারবিরোধীদের কাজ। প্রতিটি ঘটনার জন্য আলাদা আলাদা মামলা করা হবে। দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।’ 

নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘আমরা প্রথম দিন থেকে নাশকতাকারীদের প্রতিরোধ করে এসেছি। গত ৭২ ঘণ্টায় সন্দেহভাজন হিসেবে ৩০৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেইসঙ্গে জেলার পাঁচ থানায় ৯টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৫ হাজার ৪৪৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। আদালতে ৭ জন স্বীকারোক্তি দিয়েছে।’

তিনি  বলেন, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে দুষ্কৃতকারীরা বিভিন্নভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। ১৮-১৯ জুলাই বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্থাপনা পুড়িয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতকারী ও নাশকতাকারীরা শহরের চাষাঢ়া মোড়, ২ নম্বর রেলগেট, সদর থানা, পিবিআই অফিস, পাসপোর্ট অফিস, নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়াও এসবি গার্মেন্টস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ লাইন, বিজিবি ক্যাম্প, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, হাইওয়ে পুলিশ বক্স, ধামগড় ফাঁড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় আরও মামলা হবে। গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

অনিক/সনি

ঘটনাপ্রবাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়