ঢাকা     শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৭ ১৪৩১

দ্বিতীয় পর্ব

পেনিনসুলার পথে পথে

তপন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৫, ২৬ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ১৭:২৪, ২৬ অক্টোবর ২০২৪
পেনিনসুলার পথে পথে

ব্যাক ওয়াটারের তীরে কটেজ ও শ্যামলী নিসর্গ

স্লিম হোস্টেসরা তাদের চেয়ে স্লিম মুভিং ট্রেতে খাদ্য-সম্ভার ও পানি নিয়ে যাত্রীদের পাশ দিয়ে চলাচল করেন। যাঁরা আগে খাবার বুক করেছেন তাঁদের সার্ভ করেন। পেস্তা ও কাজু বাদাম, স্ন্যাকস, স্যান্ডউইচ, ক্যাডবেরিসহ অন্যান্য খাবার দেখিয়ে ট্রলার চলে। নাতি-নাতনীদের চোখের ভাষা পড়তে পারি। কিন্তু এখানে ওসবের দাম প্রায় চারগুণ। জল কেবল ফ্রি! কিন্তু পান করতে চাইলে মিনি গ্লাসে এক পেগ পরিমাণ দেন। আত্মীয় স্বজনেরা মৃত্যু পথযাত্রীকে শেষ মুহূর্তে যে পরিমাণ পানি খাওয়ান ততোটুকুই। কি আর করা! পড়েছি মোগলের হাতে, যা দেয় তাই সই। বেলা প্রায় আড়াইটার দিকে ইন্ডিগো চেন্নাই বন্দরে অবতরণ করে। বিশাল এলাকাজুড়ে চেন্নাই আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর।  

আমাদের প্রথম গন্তব্যস্থল চেন্নাই হয়ে ত্রিবান্দ্রম। এয়ারপোর্টে নেমে বাসে কোভেলাম। চেন্নাই থেকে দুপুরে ত্রিবান্দ্রমের ফ্লাইট নেই। ফ্লাইট বিকাল সাড়ে ৪টায়। আমাদের ঠাঁই হলো চেন্নাই এয়ারপোর্টের ভিতরের ইন্টিগ্রেটেড টার্মিনালে। টার্মিনালে দুই ঘণ্টা বসে থাকার বিড়ম্বনা থেকে নাতি-নাতনী বাহিনীকে ব্যস্ত রাখতে বাংলা ও ইংরেজি ভাষার শব্দার্থ, শব্দ নির্মাণসহ ক্যুইজ খেলা চালু করি। ডা. চিত্তরঞ্জন রায়, ডা. সঞ্জয় দত্ত, ডা. গৌতম এয়ারপোর্টের বাইরে গিয়ে ডিম-বিরানি সংগ্রহ করেন। খেতে খেতে, কুইজ খেলতে খেলতে আমাদের সময় বেশ সুন্দর কেটে যায়। চেন্নাই এয়ারপোর্টে আবার সিকিউরিটি চেক শেষে আমরা কেরালা রাজ্যের তিরুবনন্তপুরমগামী (ত্রিবান্দ্রম) ইন্ডিগোর উড়োজাহাজে উঠি। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৬টায় ৭৭৪ কিলোমিটার দূরে তিরুবনন্তপুরম আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে পৌঁছি। 

এয়ারপোর্টটি সাত একর জায়গার উপর নির্মিত। এটি কেরালার রাজধানী শহর তিরুবনন্তপুরমের (প্রাক্তন ত্রিবান্দ্রম) কাছাকাছি অবস্থিত। ১৯৩২ সালে এটি চালু করা হয়। বিশ শতকের শেষে ভারতের বহু আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরের মধ্যে এর স্থান ছিল পঞ্চম। এয়ারপোর্ট থেকে এ.সি ট্র্যাভেলারে ১৫ কিলোমিটার দূরের কোভেলামে সাড়ে ছটায় পৌঁছে যাই। আমাদের হোটেলের নাম সমুদ্রতীরম বীচ রিসোর্ট। রিসোর্টের অবস্থান পাহাড়ের উপর। হোটেল মালিক লাগেজ বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য লোক পাঠিয়েছেন। ওরা অচল লাগেজ নিয়ে দ্রুত চলে যায়। সমস্যা হলো জ্যান্ত দুই ল্যাগেজ নিয়ে। অরুণের মা বৃদ্ধা বিনীতাদি আর আমি। আমাদের ধীরে ধীরে টেনেটুনে ওঠানো হলো।

সৌরদীপের নেতৃত্বে তিরুবনন্তপুর এয়ারপোর্টে      

ফ্রেশ হয়ে চা পান করে, কার অবস্থান কোথায় দেখে এলাম। রাতে খেয়ে শুয়ে পড়লাম। আমাদের পরিবারের পাঁচজনের জন্য দুটো রুম বরাদ্দ ছিল। গৌতম স্ত্রী পুত্র-কন্যার স্নেহবন্ধন ছেড়ে নিরস তরুবরকে সঙ্গ দেয়। হোটেলের সবখানে পরিচ্ছন্নতা ও যত্নের ছাপ। হোটেল থেকে সমুদ্র দেখা যায়। অন্ধকারেও আশপাশের ঝোপঝাড় ও অনেক নারকেল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে বুঝতে পারছিলাম। ইচ্ছে হলো সফেদ সাদা বেডশীটে মোড়ানো নরম বিছানায় শুয়ে টেলিভিশনে চোখ রাখতে। ইচ্ছায় লাগাম টানতে হলো। কারণ হোটেলের টেলিভিশনের রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার না করাই ভালো। কতো বিচিত্র লোক  রিসোর্টে থাকেন এবং রিমোট ব্যবহার করেন। এটি ক্ষতিকর অণুজীব বা ব্যাকটেরিয়ার স্থায়ী আবাস হতে পারে। হোটেল প্রদত্ত মুখ মোছা ও স্নানের জন্য দেওয়া টাওয়েলও ব্যবহার না করতে পারলে ভালো। কোথাও বের হওয়ার সময় টাকা ম্যানেজারের কাছে রেখে যাওয়া নিরাপদ। রুমে যেখানেই রাখুন, হোটেলের কর্মীরা সেখান থেকে তা বের করে নিতে পারেন। ছোট ছেলে দক্ষিণ ভারতে জল সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছিল। রাতে ঘুম ভালোই হলো। সাধারণ হোটেলে বাতি নিভালে ছারপোকারা বেরিয়ে আসে। এই রিসোর্টে এমন অঘটন ঘটেনি।

সকাল নয়টার আগে টিফিন খাওয়া শেষ। সকাল নয়টায় পুভার যাওয়ার গাড়ি তৈরি। পুভার কেরেলা রাজ্যের ত্রিবান্দ্রম জেলার দক্ষিণে একটি ছোট গ্রাম। এই গ্রামেরই একটি পয়েন্ট থেকে আমরা নৌকা নিয়ে ব্যাক ওয়াটারে ঘুরে আরব সাগরের গোল্ডেন বীচে গিয়েছিলাম। আমাদের রিসোর্ট থেকে নৌকার স্পটের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার।

এই গ্রামে সুন্দর সমুদ্র সৈকত ও ব্যাক ওয়াটার রয়েছে যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। কেরালা ব্যাক ওয়াটার অপূর্ব দর্শনীয় স্থান। বিশাল এলাকাজুড়ে এর অবস্থান। এর অর্থনৈতিক গুরুত্বও অসীম। কেরালার ব্যাক ওয়াটারগুলো দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের কেরালা রাজ্যের মালাবার উপকূলের আরব সাগরের সমান্তরালে লোনা ছোট হ্রদ বা উপহ্রদ, খাঁড়ি ও খালের একটি অন্তর্জাল। এটি এক গোলোকধাঁধা বা রহস্যময় অঞ্চল যাতে ৯০০ কিলোমিটার জলপথ রয়েছে। 

পুভারের কিং ফিশার খেয়াঘাট ও ট্যুরাধিপতি ডা. অরুণ   

অন্তর্জালের মধ্যে মনুষ্যসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক পাঁচটি বড় হ্রদ, ৩৮টি নদী রয়েছে । কেরালা রাজ্যের প্রায় অর্ধেকই ব্যাক ওয়াটারের নিচে। পশ্চিমঘাট পর্বতমালা থেকে উৎসারিত অনেক নদীর মুখজুড়ে প্রতিবন্ধক দ্বীপ সৃষ্টি হওয়াতে ব্যাক ওয়াটারগুলো গঠিত হয়েছিল। এ সকল ভূদৃশ্যের মাঝে বেশ কয়টি শহর রয়েছে। কেরালায় ব্যক ওয়াটারের সংখ্যা ৩৮। এর মধ্যে ২৭টি আরব সাগরের কাছাকাছি বা সমান্তরালে অবস্থিত। বাকি ৭টি অভ্যন্তরীণ নৌপথ। 

ব্যক ওয়াটারগুলোর অনন্য বাস্তুতন্ত্র রয়েছে। নদীসমূহের স্বাদু জল আরব সাগরের নোনা জলের সঙ্গে মিলিত হয়। কুত্তনাদে ১৯৭৪ সালে ভেম্বাসাদ হ্রদের উপর থানীরমক্কুম বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। বাঁধের পশ্চিমে থানীরমক্কুম এবং পূর্বে ভেচুর। বাঁধ হ্রদের নোনা জলকে ভেচুরে প্রবেশে বাধা দেয়। ব্যাক ওয়াটারের মিষ্টি জলে ফসল উৎপাদিত হয়। আরব সাগরের মুখে শান্ত ব্যাক ওয়াটার ও সোনালি বালির সমুদ্র সৈকত বেশ মনোরম। এই সৈকত স্নানের উপযোগী। খুবই স্বচ্ছ জল। মৃদু ঢেউ। সৈকতের বালিও অমলিন। এই সৈকতে অনেকে সান বাথ করেও শরীর চর্চা করেন। সৈকতে উট ও ঘোড়ায় চড়ে ঘোরা যায়। 

সৈানালি সৈকতও ব্যাক ওয়াটার ও আরব সাগরের মাঝখানে প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। সম্ভবত অদ্ভুত এই বাস্তুতন্ত্রের কারণে এখানে একটা অন্য ধরনের অনুভূতি আস্বাদন করা যায়। ব্যাক ওয়াটারের বিশাল অঞ্চলজুড়ে প্রচুর স্থানীয় গাছপালা, বহু ধরনের মশলার গাছ, ভিন দেশের গাছ ও ফুল দেখা যায়। কাঁকড়া, ব্যাঙ, চেওয়া (মাডস্কিপার), জলের পাখি টুনটুনি, মাছরাঙা, সারস, পানকৌড়ি, উদবিড়াল ও কচ্ছপ দেখা যায়। পাম গাছ ও  কেয়া বা কেতকী গুল্ম, নানান পাতাযুক্ত গাছপালা ও ঝোপ সর্বত্র একটা হালকা সবুজের আভা সৃষ্টি করে।
দুপুর প্রায় ২টার দিকে আমরা পুভার থেকে রিসোর্টে ফিরি। দুপুরে খাওয়া সেরে বিশ্রাম নেই। বিকেলে ৪টা -রাত ৮টা পর্যন্ত অশোকা, হাওয়া, কোভেলাম ও লাইট হাউজ সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করা হয়। পরদিন সকালে আমি ছাড়া সকলে কোভেলাম সৈকতে স্নান করতে চলে গেল। 

লাইট হাউস সমুদ্র সৈকত

কোভেলাম সমুদ্র সৈকত ও লাইট হাউস সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব হাঁটাপথে পাঁচ মিনিট। লাইট হাউসে যাওয়ার রাস্তা মসৃণ। লাইট হাউজের শিখরে ওঠার জন্য লোহার সর্পিল সিঁড়ি রয়েছে। উঠতে পারলে কষ্ট সার্থক হয়। আরব সাগরের আরামদায়ক মৃদু আর্দ্র বায়ু দেহ ও মনে প্রশান্তি ছড়ায়। বিশাল জলরাশি ও অপরূপ ভূদৃশ্য মনে বিস্ময়ের উদ্রেক করে। এই সৈকতসমূহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো স্বচ্ছতা ও পরিচ্চন্নতা। দ্বিতীয়ত, এই সকল সৈকতে শিশু-বৃদ্ধ সকলে নিরাপদে স্নান করতে পারেন। গভীরতা কম, জলের তোড়ও কম। সমুদ্রের ভিতরে ছোট বড় শিলাখণ্ড থাকে। শিলাখণ্ডের আশপাশে থেকে স্নান করা নিরাপদ। এর চেয়েও অধিকতর লক্ষণীয় হলো সরকার পর্যটকদের সুরক্ষায় সবসময় সতর্ক। সমুদ্রে স্নানের সময় বিপদে পড়া পর্যটককে উদ্ধারের জন্য প্রশিক্ষিত লোক ও সরঞ্জাম মজুদ থাকে। 

এই সকল অঞ্চলে রাতে একা মহিলা বা পুরুষ ঘুরে বেড়ালেও তাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। কেউ ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছেন বা কারো শ্লীলতাহানি হয়েছে এমন ঘটনা সাধারণত শোনা যায় না। তদুপরি  হোটেল, গাড়ি বা অন্যান্য বহনের ভাড়াও নির্দিষ্ট রেট লঙ্ঘন করে না। লঙ্ঘন করলে বা অন্য কোনো ধরনের অসৎ আচরণ করেলে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।  

পরদিন অর্থাৎ ৪র্থ দিনে সকালে টিফিন খেয়ে আমরা ৮-৯টার দিকে কন্যাকুমারীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। কোভেলাম থেকে কন্যাকুমারী ৮৯ কিলোমিটার। এ.সি ট্রাভেলার বাসে ৩ ঘণ্টা লাগে। দুপুর দুটায় পৌঁছে হোটেল সী শোর-এ ঢুকি। দুপুরে খাওয়া সেরে বিশ্রাম নেই। বিকেলে ভিউ পয়েন্ট থেকে তিন সাগর সঙ্গমে সূর্যাস্ত চাক্ষুষ করা হয়। এরপর রাত ৮টা পর্যন্ত কুমারী মায়ের মন্দির ও রাতের সমুদ্র পরিদর্শন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর কন্যাকুমারী, তামিল নাড়ুর সর্বদক্ষিণ প্রান্তে, ভারতেরও শেষ প্রান্তে অবস্থিত। এর অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এটি বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরের সংযোগস্থলে বিদ্যমান। কন্যাকুমারীকে কুমারিকা অন্তরীপও বলা হয়। ছোট এই শহরটিতে দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে রয়েছে বিবেকানন্দ শিলা স্মৃতিসৌধ, গাঁধি স্মারক, কুমারী আম্মান (অর্থ: মা, ঈশ্বর ইত্যাদি) মন্দির, সূর্যাস্ত স্থল, থিরুভাল্লুভার মূর্তি।

স্বামী বিবেকানন্দ ভারত পরিক্রমাকালে ভারতের সর্বশেষ দক্ষিণ প্রান্তে কন্যাকুমারীতে ১৮৯২ সালের ডিসেম্বর মাসের ২৪-২৬ তিনদিন স্থলভাগের ৫০০ মিটার দূরে সমুদ্রে জলের অভ্যন্তরে থাকা বৃহৎ এক শিলার উপরে বসে ধ্যান করেছিলেন। তিনি সমুদ্র সাঁতরে সেই শিলায় আরোহণ করেছিলেন। এখানেই তাঁর আত্মদর্শন হয়েছিল বলে অনেকের ধারণা। লোক বিশ্বাস পৌরাণিক যুগে কন্যাকুমারী (পার্বতী) এই শিলার উপর বসে ধ্যানবলে  শিবকে জয় করেছিলেন। 

মা সারদাদেবী স্বামী বিরজানন্দকে দীক্ষা দান করেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ বিরজানন্দকে সন্যাস গ্রহণের অনুমতি দেন এবং বিরজানন্দ নামও তাঁর দেওয়া। স্বামী বিরজানন্দ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ষষ্ট সভাপতি পদে বৃত হয়েছিলেন। তিনি কন্যাকুমারীতে বিবেকানন্দ শিলার খোঁজে  এসেছিলেন এবং রামসুব্বা রাও আয়ার নামক এক ভদ্রলোকের সাহায্যে বিবেকানন্দ যে শিলায় বসে ধ্যান করেছিলেন তা শনাক্ত করেছিলেন। রামসুব্বা রাও বিরজানন্দকে এও জানিয়েছিলেন যে সদাশিবম পিল্লাই নামক এক ভদ্রলোক স্বামীজীর শিলাখণ্ডে ধ্যানকালে তাঁর আহার যুগিয়েছিলেন। স্বামিজীর নির্দেশে পিল্লাই তাঁর জন্য ফল ও দুধ নিয়ে যেতেন।

মোহনদাস করমচাঁদ গাঁধি ওরপে বাপুজি ১৯২৫ সালে কন্যাকুমারী পরিদর্শনে এসে সমুদ্র সৈকতের নিকটস্থ এক শিলায় বসে ধ্যান করেছিলেন। এখানে গাঁধি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। বিবেকানন্দ শিলার অনতিদূরে বেশ বড় এক শিলার উপর তামিল ভাষার কবি ও দার্শনিক থিরুভাল্লাভার সম্মানে একটি সুন্দর মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম বা দ্বিতীয় শতাব্দীতে তাঁর জন্ম। জন্মস্থান কোথায় জানা যায়নি। তাঁকে লোকে ভাল্লাভার নামেই ডাকতেন। প্রাচীন তামিল ভাষায় লিখিত ‘তিরুক্কুরান’ গ্রন্থের জন্য তিনি খ্যাত। পর্যটকেরা নৌকায় চড়ে কবিকে শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রদান করতে যান।

থানীরমক্কুম বাঁধ       

১৯৬২ সালে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মশতবর্ষে বিবেকানন্দ শিলায় বিবেকানন্দ স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলার উদ্যোগ গৃহীত হয়। এর জন্য কমিটি গঠিত হয়। একই সময়ে মাদ্রাজ (বর্তমান চেন্নাই) রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা করে। কিন্তু ক্যাথোলিক খ্রিষ্টান সম্প্রদায় এই কাজে বাধা দেন। তাদের দাবি ওটি সেন্ট জেভিয়ার্স শিলা। তারা শিলার উপর বিরাট ক্রশ স্থাপন করেন। হিন্দুরা আদালতের শরণাপন্ন হন। চেন্নাই আদালত হিন্দুদের দাবিকে মান্যতা দেন। এরপর কোনো এক অন্ধকার রাতে ক্রশ সরিয়ে ফেলা হলে স্থানীয় সম্প্রদায়সমূহের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা দেখা দেয়। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ভক্তবৎসলম হিন্দুদের দাবির প্রতি সমর্থন জানান এবং স্মৃতিসৌধ গড়ার অনুমতি দেন।

কাজ শুরুর আগে আর এক সমস্যা দেখা দেয়। সংস্কৃতি বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হুমায়ুন কবির স্মৃতিসৌধ শিলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ব্যাহত করবে অজুহাতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণে বাধার সৃষ্টি করেন। তামিলনাড়ুর  মুখ্যমন্ত্রীও তাঁর পূর্বে প্রদত্ত আদেশ বাতিল করেন। এই সমস্যা উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু হস্তক্ষেপ করবেন আশা ছিল। তিনি নিশ্চুপ ছিলেন। ভারতের লোকসভার সদস্য লাল বাহাদুর (প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ) শাস্ত্রী একেনাথজীকে ডেকে পরামর্শ দেন। একেনাথজী শাস্ত্রীজীর পরামর্শ অনুযায়ী তিন দিনের মধ্যে ম্মৃতিসৌধ নির্মাণের সপক্ষে ৩২৩ জন লোকসভার সদস্যের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ভক্তবৎবসলম কমিটিকে কাজ শুরুর অনুমতি দেন। ১৯৭০ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হলে অসাধারণ এই শিল্পকর্ম জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

পড়ুন প্রথম পর্ব : পেনিনসুলার পথে পথে     

তারা//


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়