ফরিদপুরে তৈরি যন্ত্রপাতি কৃষিতে পরিবর্তন আনছে
তামিম ইসলাম, ফরিদপুর || রাইজিংবিডি.কম
কৃষি প্রধান জেলা ফরিদপুরে মানসম্পন্ন কৃষিযন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে, যা ব্যবহারে জেলার কৃষকেরা উপকৃত হচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে তৈরি এ সব যন্ত্রপাতির দাম অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে থাকছে।
স্থানীয়ভাবে তৈরি এ সব যন্ত্রপাতি মানসম্পন্ন জানিয়ে জেলার কৃষি বিভাগ বলছে, এ সব যন্ত্রপাতি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া গেলে জেলার কৃষিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
জেলার নিউ শাপলা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, আর. কে মেটালসহ অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের কৃষকের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরি করছে। ব্লোয়ার মেশিন, পাট ছাড়ানোর যন্ত্র, ভুট্টা, গম, ধান মাড়াই-ঝাড়াই যন্ত্রসহ অন্তত ৩০ ধরনের যন্ত্রপাতি স্থানীয়ভাবে তৈরি হওয়ায় কৃষকেরা সহজে সংগ্রহ করতে পারছে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ফরিদপুরের নয়টি উপজেলায় ১৫০টি কৃষি যন্ত্রপাতি সরকার ৭০ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে সরবরাহ করেছে। যার মধ্যে ৫৯টি স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে।
ফরিদপুর জেলায় প্রতি বছর ৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের সু-ব্যবস্থার অভাবে বাধ্য হয়ে কৃষকদের তা বিক্রি করে ফেলতে হয়। কেউ সনাতনী পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করলেও ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিতে পড়েন তারা।
সরেজমিন গেলে স্থানীয় কৃষকরা জানান, কয়েক বছর ধরে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা ব্লোয়ার মেশিন ব্যবহার করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করায় তারা লাভবান হচ্ছেন। তাদের দাবি, স্থানীয় উৎপাদকদের কাছ থেকে মেশিন কিনতে পারায় যে কোনো প্রয়োজনে বিক্রয়োত্তর সেবা সহজে পাওয়া যায়। আর ফরিদপুরের মেশিনের খবর ছড়িয়ে পড়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা আসছেন।
কৃষি যন্ত্রপাতি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা জানান, এক সময় প্রায় সব ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হতো, ফলে দামও ছিল বেশি। স্থানীয়ভাবে নির্মাণ করায়, এ সব যন্ত্রপাতির দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। তবে তারা জানান, যন্ত্রপাতি তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত শ্রমিক প্রশিক্ষণের সরকারি প্রতিষ্ঠান না থাকায় দক্ষ শ্রমিক পাওয়া কষ্টসাধ্য। সরকারের সহযোগিতা পাওয়া গেলে এ ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ফরিদপুরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান জানান, স্থানীয়ভাবে তৈরি করা কৃষি যন্ত্রপাতি মানসম্পন্ন। এতে জেলার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন কৃষির উৎপাদন ব্যয় কমছে, সঙ্গে উৎপাদনও বাড়ছে। এ সব যন্ত্রপাতি কৃষক পর্যায়ে জনপ্রিয় করতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।
ঢাকা/বকুল/