ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

করোনার অভিজ্ঞতা, চীন থেকে দক্ষিণ কোরিয়া

মোহাম্মদ হানিফ, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৮, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনার অভিজ্ঞতা, চীন থেকে দক্ষিণ কোরিয়া

জনমানবশূন্য চীনের গুয়াংজু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ছবি: মোহাম্মদ হানিফ

বিশ্বে এখন আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। ভাইরাসের ক্ষমতা কেমন আর মানুষ কত সহজেই দ্রুত মারা যেতে পারে, তা দেখিয়ে দিয়েছে এই ভাইরাস।

দিন দিন ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী করোনা। করোনা একটি ভাইরাসই নয়, মনে হচ্ছে বিশ্বের কাছে মৃত্যুপুরী, একটি চ্যালেঞ্জ। ভাইরাসটি অনেক দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও এখনো কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি বিশ্ব স্বাস্থ‌্য সংস্থা। যেখানে একদিনেই মরতে হলো ৯৭ জনকে।

গত বছরের ডিসেম্বরে শনাক্ত হওয়ার পর এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। চীনের ভূখণ্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজারেরও বেশি। সেখানে মৃত্যুর সংখ্যাটি ৯০৮ জনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। এমনই এক পরিস্থিতিতে যেতে হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। এদিকে চলছে করোনা ভাইরাসের এমন ভয়ঙ্কর আতঙ্ক।

দক্ষিণ কোরিয়া ইমিগ্রেশনের সামনে মেডিক‌্যাল টিম। ছবি: মোহাম্মদ হানিফ

ট্রানজিট চীনের গুয়াংজু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এ কী? এখনে যেন ভয়ঙ্কর অভিশপ্ত জনমানব শূন্য ভূতুড়ে জায়গা। যেখানে সব সময় কয়েক লাখ যাত্রীর সমাগম হতো এই বিমানবন্দরে। ৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় সকাল ৬টা। বিমানবন্দরের এমন দৃশ্য দেখে বিমূঢ় হয়ে গেলাম। বিমানবন্দরের গুটি কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া কোনো তেমন কোনো মানুষকে দেখা যায়নি। ইমিগ্রেশন কাউন্টারে একজনই কর্মকর্তা ছিলেন। সকাল ১০টায় চীন থেকে CZ3061 ফ্লাইট ছাড়ল দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশ্য। সেই বিমানটিতে হাতেগুনা ১৬ জন আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশি সাতজন কোরিয়ান বাকি ৪ জন চায়নার। যদিও তারপরের দিনই বাংলাদেশ থেকে চীনের গুয়াংজু শহরের সব ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

দুপুর ২টা কোরিয়ার ইনচন এয়ারপোর্টে। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশেষ করে চীন থেকে আসা ফ্লাইটের ওপর। বিমান থেকে নামার পরপরই মেডিক‌্যাল টিম। সেখানে সবার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখা হয়। আলাদাভাবে চেকআপের পর বিমানবন্দরে কর্তব্যরত কয়েকজন কর্মকর্তার অধীনে ইমিগ্রেশনে নিয়ে যায় চীনের ফ্লাইট থেকে নামা সব যাত্রীকে। এসব যাত্রীদের জন্য চারদিকে বেস্টনি স্থাপন করে আলাদা ইমিগ্রেশন কাউন্টার খুলেছে দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচন এয়ারপোর্ট। ইমিগ্রেশন কাউন্টারের সামনে বসানো আছে আরো একটি মেডিক‌্যাল টিম। কোনো যাত্রী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কি না? তা আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোয়ারানটিন সার্টিফিকেট দেয়া হয়। যদি কোনো ব্যক্তি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়- এমন সন্দেহ হলে তাকে সাথে সাথে হসপিটালে ১৪ দিনের জন্য পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। মেডিক‌্যাল টিমের চারপাশে বসানো হয়েছে করোনা ভাইরাস সনাক্ত করার জন্য স্পেশাল ক্যামেরা।

দক্ষিণ কোরিয়াতে এ নিয়ে ২৫তম করোনা ভাইরাস সংক্রমণের রোগী শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কোরিয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই ২৫তম রোগী হলেন ৭৩ বছর বয়সী কোরিয়ান মহিলা। সে মহিলা তার পরিবার (পুত্র এবং পুত্রবধূ) সাথে চীনের গুয়াংডং প্রদেশে ঘুরতে গিয়েছিলেন। দর্শনার্থীর পরিবার গত বছরের নভেম্বর থেকে এই বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত গুয়াংডং-এ সফর করেছে বলে মেডিক‌্যাল অ্যাসবার্ব সূত্রে প্রকাশ করেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো বিদেশি নাগরিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসা দায়িত্ব নেবে দেশটির সরকার। এছাড়াও কোনো অবৈধভাবে দেশটিতে অবস্থানরত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে তাকে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এজন্য তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে না বলে একটি নোটিশ জারি করেছে সিউলে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।

এদিকে রাষ্ট্রিয়ভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে সবাইকে নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সব সময় সার্জিক্যাল মুখোশ পরা ও হাঁচি-কাশির সময় নাক মুখ ঢেকে রাখারও পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ‌্য অধিদপ্তর।


দক্ষিণ কোরিয়া/হানিফ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ