ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কুয়েতে প্রবাসীদের দুঃসময়ের বন্ধু মুরাদুল হক

আ হ জুবেদ, কুয়েত থেকে  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫০, ১৩ এপ্রিল ২০২৪  
কুয়েতে প্রবাসীদের দুঃসময়ের বন্ধু মুরাদুল হক

মুরাদুল হক চৌধুরী, কুয়েতে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে খুবই পরিচিত একটি নাম। তাকে কেউ বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের অকৃত্রিম বন্ধু; কেউ বলেন, জনদরদি নেতা; কেউ বলেন, বিশিষ্ট দানবীর আবার কেউ বলেন, সমাজসেবক। ব্যক্তি একজন, নানা গুণের কারণে তার পরিচয় একেকজনের কাছে একেক রকম। 

নানা ইতিবাচক কাজের কারণে কুয়েতে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে মুরাদুল হক চৌধুরীর অবস্থান অনেক উঁচুতে। তিনি প্রচারবিমুখ এক রেমিট্যান্স যোদ্ধা।    

৪৮ বছর বয়সী মুরাদুল হক চৌধুরীকে বছরের বেশিরভাগ সময় কাটাতে হয় নানা অসুস্থতায়। কিন্তু, অসুস্থ মানুষের চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা করা যেন নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে ধরে নেন তিনি। কুয়েত প্রবাসীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থেও কাজ করছেন মুরাদুল হক চৌধুরী। 

সবাই উপার্জিত অর্থ সঞ্চয় করেন ভবিষ্যতের জন্য। কিন্তু, আপনি সেটি করছেন না কেন? এমন প্রশ্ন করা হলে মুরাদুল হক চৌধুরী বলেন, জীবনে কতটুকু প্রয়োজন, তার পরিমাণ থাকা অত্যন্ত জরুরি। আমি সেই প্রয়োজনের বাইরের অর্থগুলো নানা কল্যাণমুখী কাজে লাগাচ্ছি। তবে, অনেক সময় নিজের প্রয়োজনের চেয়ে অন্যের প্রয়োজনকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। 

কুয়েত প্রবাসীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কুয়েতে মারা যাওয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের মরদেহ দেশে পাঠানোর খরচের একটি অংশ আপনি বা আপনার সংগঠনের মাধ্যমে দিয়ে থাকেন। গত এক বছরে কতটি মরদেহ বাংলাদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন? এ প্রশ্নের জবাবে মুরাদুল হক চৌধুরী বলেন, কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন কারণে প্রতি মাসে গড়ে ১৩ থেকে ১৪ জন কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশি মারা যাচ্ছেন। এসব মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য দূতাবাসে আবেদন করা হলে, সেখান থেকে ৯৯ কুয়েতি দিনার দেওয়া হয়। বাকি ২০০ থেকে ২৫০ দিনার মারা যাওয়া প্রবাসীর আত্মীয়-স্বজন কিংবা আমি ও আমরা দিয়ে থাকি। গত এক বছরে কম করে হলেও দেড় শতাধিক প্রবাসীর মরদেহ দেশে পাঠানোর খরচের একটি অংশ কখনো ব্যক্তিগতভাবে আবার কখনো সংগঠনের মাধ্যমে দিয়েছি। 

আগে বাংলাদেশ বিমান প্রবাসীদের মরদেহ বিনা খরচে দেশে নিয়ে যেত, কিন্তু এখন নিচ্ছে না। যদিও বার বার প্রবাসীদের লাশ দেশে যাবে বিনা খরচে, এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু এর বাস্তবায়ন হয়নি। 

এ বিষয়ে মুরাদুল হক চৌধুরী বলেন, প্রবাসীরা বিদেশে মারা গেলে রাষ্ট্রীয় বিমান বিনা খরচে নিচ্ছে না। অন্যদিকে, প্রবাসীরা জীবদ্দশায় উপার্জিত অর্থ সব দেশেই পাঠান। কিন্তু, তারা মারা গেলে মরদেহ দেশে নিয়ে যেতে পরিবার থেকেও কোনো সহায়তা পাচ্ছে না। 

কুয়েত প্রবাসীদের মতে, প্রবাসীদের আকামা সমস্যার সমাধান, প্রবাসীদের মরদেহ দেশে পাঠানো, বাংলাদেশে অসহায় মানুষের গৃহনির্মাণে আর্থিক সহযোগিতা, বাংলাদেশে গরিব পিতার কন্যার বিয়েতে আর্থিক সহযোগিতা, অসুস্থ দেশি-বিদেশি মানুষকে চিকিৎসা সহায়তা, বাংলাদেশে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণে আর্থিক সহায়তা, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা, বন্যাদুর্গত এলাকায় আর্থিক সহায়তা, শীতবস্ত্র বিতরণসহ নিঃস্বার্থে বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমুখী কাজে মুরাদুল হক চৌধুরীর অবদান অনস্বীকার্য।

সিলেটের মৌলভীবাজার শহরস্থ পশ্চিম গীর্জা পাড়ার মুরাদুল হক চৌধুরী ১৯৯০ এর দশকে কুয়েতে আসেন জীবন-জীবিকার তাগিদে। তিনি একটি কোম্পানিতে সাধারণ কর্মী হিসেবে কাজ করেন। এখন মুরাদুল হক চৌধুরী স্থানীয় এক নাগরিকসহ যৌথভাবে একটি এমএস কোম্পানির স্বত্বাধিকারী। সেই কোম্পানিতে কয়েক শত বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের কর্মীরা কাজ করছেন। 

মুরাদুল হক চৌধুরী বাংলাদেশ কমিউনিটি কুয়েতের আহ্বায়ক, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন কুয়েতের সাধারণ সম্পাদক, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য, প্রবাসী স্বজন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

ঢাকা/রফিক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়