কুয়েত গমনেচ্ছুদের যে বিষয়ে সতর্ক করল দূতাবাস
আ হ জুবেদ, কুয়েত থেকে || রাইজিংবিডি.কম
কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন
কাজের উদ্দেশ্যে কুয়েতে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের জন্য জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সে দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) দূতাবাসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কুয়েতে অবস্থানরত প্রবাসী এবং বিভিন্ন কাজের উদ্দেশ্যে কুয়েতে আসতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশি কর্মীগণ অসীম আগ্রহ সহকারে কাজের উদ্দেশ্যে কুয়েতে আগমন করলেও অনেক ক্ষেত্রে সঠিক পন্থা বা তথ্য না জানার কারণে মধ্যস্বত্বভোগী/দালালের মাধ্যমে বিভ্রান্ত ও বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন।
কুয়েতে একজন প্রবাসী কর্মীর মাসিক সর্বনিম্ন বেতন ৭৫ কুয়েতি দিনার। কুয়েতের বিভিন্ন কোম্পানিতে বাংলাদেশি কর্মীদের হোটেলে থাকার সুবিধা দেওয়া হলেও তার খাবার খরচ ও ব্যক্তিগত ব্যয় বাবদ প্রতি মাসে ন্যূনতম ৩০ কুয়েতি দিনার ব্যয় হয়ে থাকে। কুয়েতে প্রবাসী কর্মীর প্রতিবছর আকামা (বসবাসের অনুমতি) নবায়নে সরকারি ফি ৬০ কুয়েতি দিনার এবং আকামা বিদ্যমান প্রজেক্ট থেকে অন্য প্রজেক্টে স্থানান্তরের সরকারি ফি ৩৬০ দিনার কোম্পানির দেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোম্পানি এ ধরনের ফি কর্মীদের কাছ থেকে আদায় করে বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
কুয়েতে কোনো কোনো প্রজেক্টের মেয়াদ ১ বছর বা তার কম থাকলেও বাংলাদেশ থেকে আসার আগে অনেক ক্ষেত্রেই কর্মীকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয় না। ফলে, বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে আসা কর্মীরা ১ বছর বা তারও কম সময়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আকামাহীন হয়ে যান। ফলে, কর্মী যে পরিমাণ অর্থ খরচ করে বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে আসেন, এক বছর বা তার কম সময়ে সে পরিমাণ অর্থ আয় করতে সক্ষম হন না। উপরন্তু, প্রতিবছর আকামা নবায়ন ফি ৬০ কুয়েতি দিনার বা নতুন প্রজেক্টে আকামা স্থানান্তর বাবদ ৩৬০ কুয়েতি দিনার পরিশোধের কারণে অর্থ সংকটে নিপতিত হন। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে আগত কর্মীদের কর্মস্থলে নিজ নিজ কাজের মেয়াদ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করা এবং চুক্তিপত্রের কপি নিজের কাছে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।
কুয়েতের বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী, একজন প্রবাসী কর্মীকে সুনিদিষ্ট নিয়োগকর্তা (কফিলের) অধীনে সুনির্দিষ্ট কর্মস্থলে কাজ করতে হয় এবং চুক্তির মেয়াদ শেষে তাকে দেশে ফিরে যেতে হয়। বর্তমানে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি ‘ব্যক্তিগত কফিল’ (ভিসা-২০) বা ছোট কোম্পানির (ভিসা-১৮) অধীনে একক ভিসা নিয়ে তথাকথিত ‘ফ্রি ভিসায়’ কুয়েতে আসছেন। অনেক মানুষ পরিচিত ব্যক্তি বা আত্মীয়ের মাধ্যমে তথাকথিত ‘ফ্রি ভিসা’ নিয়ে কুয়েতে আসছেন। এটাও পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, কিছু কিছু কফিল ‘ফ্রি ভিসার’ নামে বাংলাদেশি দালালদের সাথে ভিসা বিক্রয়ের ব্যবসা করছেন এবং কুয়েতে আসার কিছুদিন পরেই কর্মীর আকামা (বসবাসের অনুমতি) বাতিল করে তার স্থলে অন্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দিচ্ছেন। ফলে, এই প্রক্রিয়ায় কুয়েতে যারা আসছেন, তাদের কাজের কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। অনেকে বেকার বসে থাকেন বা বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন।
কুয়েতের আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি নির্ধারিত কর্মস্থলের বাইরে অন্যত্র কাজ করলে কুয়েতের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায় বা দেশে ডিপোর্ট করে। অবৈধভাবে কুয়েতে অবস্থানকারী কোনো বাংলাদেশিকে গোপনে কোনো কুয়েতি ব্যক্তি নিয়োগ দিলে অত্যন্ত নিম্ন মজুরি দেওয়া হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে অত্যাচার করা হয়। এর ফলে ব্যক্তির শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
তাই, কাজের উদ্দেশ্যে কুয়েতে আসতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের ‘ফ্রি ভিসা’ পরিহার করা উচিত। কুয়েতে আসার আগে তার নিয়োগকর্তা (কফিল), সুনির্দিষ্ট কর্মস্থলের নাম-ঠিকানা, কাজের চুক্তির মেয়াদ ও বেতন-ভাতা ইত্যাদি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে কুয়েতে আসার জন্য অনুরোধ করা হলো।
ঢাকা/হাসান/রফিক