ঢাকা     সোমবার   ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ২ ১৪৩১

কলকাতায় বিজয় দিবস উদযাপন

কলকাতা সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৫, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৮:১৬, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
কলকাতায় বিজয় দিবস উদযাপন

সোমবার কলকাতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদর দপ্তর ফোর্ট উইলিয়ামে বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়

গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। তবে, কলকাতায় বিজয় দিবস উদযাপনে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। 

বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের ছাড়াই বিজয় দিবস পালিত হতে পারে ফোর্ট উইলিয়ামে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধা ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) ৫৩তম মহান বিজয় দিবস পালন করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড। 

সোমবার সকালে সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদর দপ্তর কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে ছিল নানা অনুষ্ঠান। এতে উপস্থিত ছিলেন ভারতের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তবে, বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের কাউকে দেখা যায়নি ফোর্ট উইলিয়ামের অনুষ্ঠানে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধা, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং তাদের পরিজন মিলিয়ে ১৭ জনের প্রতিনিধিদল। যদিও বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সে দেশ থেকে প্রতিনিধিদলের যোগ দেওয়া নিয়ে সাময়িক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। 

ফোর্ট উইলিয়ামের মূল ফটকের কাছে অবস্থিত বিজয় স্মারক স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শংকর রায় চৌধুরী, পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাম চন্দ্র তিওয়ারীসহ তিন বাহিনীর কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম চৌধুরী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিনুর রহমান। 

সবশেষে শ্রদ্ধা জানান পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ড. সি ভি আনন্দ বোস। পরে ফটোসেশনে অংশ নেন রাজ্যপালসহ দুই দেশের প্রতিনিধিরা। 

এরপর সেনাবাহিনীর মাঠে আয়োজিত প্রদর্শনী ঘুরে দেখে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল। স্মৃতিবিজড়িত দৃশ্য দেখে অনেকেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। 

ভারতীয় গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে দারিদ্র্য। আমাদের দুই দেশকেই একত্রিত হয়ে সেই দারিদ্র্য দূর করতে হবে। আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ভালো না থাকলে, ভালোবাসা না থাকলে দুই দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

সাম্প্রতিক কিছু ইস্যুতে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়েন নিয়ে কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, “ইতিহাসের অনেকগুলো পর্যায় আছে। সম্পর্কে উত্থান-পতন হয়। বাংলাদেশে অনেকগুলো সমস্যা হয়েছে, ভারতেও অনেক পট পরিবর্তন হয়েছে। তারপরও ভারতের সাথে বন্ধুত্ব আছে। আমরা একই রকম আছি। আগেও ভারতে এসেছিলাম। এখন এসে দেখছি, বন্ধুত্ব একই রকম আছে। ভারতের মানুষ আমাকে ভালবাসছে, এটাই ইতিহাস। ইতিহাস দুই-এক বছরে হয় না, এটা হাজার বছরে হয়। দুই দেশের মধ্যে ৫৩ বছরের বন্ধুত্বের ইতিহাস।” 

তিনি বলেন, “দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক হয় মানুষের ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে, হৃদয় দিয়ে। সরকার দিয়ে সবকিছু হয় না। ভারত বন্ধুপ্রতীম দেশ। বন্ধুত্বের মধ্যে চিড় ধরাটা অত সহজ নয়। ইতিহাসের মধ্যে চিড় ধরাটা এত সহজ নয়। গণতান্ত্রিক সমাজে অনেকেই অনেক রকম বিবৃতি দেয়। সেই বিবৃতি এককভাবে কিংবা সম্মিলিতভাবে হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ। গণতন্ত্র এ দেশে আসবে, থাকবে। এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষ নিজেদের স্বার্থ দেখবে। আমরা মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে যাওয়ার চেষ্টা করছি, আমার সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ।” 

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ নিয়ে কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, “হিন্দুরা বাংলাদেশের নাগরিক। হিন্দুরা আমাদের ভাই, তারা আমাদের দেশেই থাকবেন।” 

ঢাকা/সুচরিতা/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়