ঢাকা     বুধবার   ০২ এপ্রিল ২০২৫ ||  চৈত্র ১৯ ১৪৩১

প্রবাসীদের ঈদ: দূরদেশে স্মৃতিময় উৎসবের গল্প

সাইফুল্লাহ হাসান, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪৬, ২৯ মার্চ ২০২৫   আপডেট: ২২:১১, ২৯ মার্চ ২০২৫
প্রবাসীদের ঈদ: দূরদেশে স্মৃতিময় উৎসবের গল্প

সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইনসেটে লেখক)

দেশের ঈদ মানেই এক অন্যরকম আবেগ, ভালোবাসা আর উৎসবের আমেজ। পরিবার-পরিজনের সাথে আনন্দঘন মুহূর্ত, সবার একসাথে ঈদের নামাজ আদায়, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়ানো- সব মিলিয়ে এক অনন্য অনুভূতি। কিন্তু প্রবাসীদের ঈদ কিছুটা ভিন্ন। এখানে নেই সেই চিরচেনা ঈদের আমেজ, নেই প্রিয়জনদের সান্নিধ্য। 

প্রবাসজীবনে ঈদের দিন শুরু হয় এক ধরনের একাকীত্বের মধ্য দিয়ে। অনেকেরই ঈদের দিন কর্মব্যস্ততার মধ্যে কেটে যায়। কাজের দায়িত্বের কারণে ঈদের সকালেই যেতে হয় ডিউটিতে। তবে কাজের ফাঁকে সহকর্মীদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হয়, প্রিয়জনদের সাথে ফোনে বা ভিডিও কলে কথা বলা হয়। এতে কিছুটা হলেও পরিবারের কাছে থাকার অনুভূতি আসে। কর্মস্থলে থাকা প্রবাসীরা একে অপরের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার চেষ্টা করেন। কিছু জায়গায় কর্মস্থলের পক্ষ থেকেও ঈদের বিশেষ আয়োজন করা হয়, যাতে সবাই মিলেমিশে উৎসবের আমেজ উপভোগ করতে পারেন।

অন্যদিকে, যাদের ছুটি থাকে, তারা হয়তো সারাদিন ঘরেই কাটান। কয়েকজন বন্ধু বা রুমমেট একসাথে বসে রান্নাবান্না করেন, ভালো কিছু খাবার তৈরি করেন। এরপর পরিবারের সাথে কথা বলে মনকে হালকা করেন। কেউ কেউ ঈদের নামাজ পড়ে কাছের বাংলাদেশি কমিউনিটির সাথে সময় কাটান। বিকেলের দিকে অনেকে কাছের পার্ক বা সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যান, যেখানে অন্যান্য প্রবাসীরাও একত্রিত হয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন।

আত্মীয়-স্বজন ছাড়া ঈদ আসলে সম্পূর্ণ আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে না। দেশের ঈদ যেখানে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব আর আত্মীয়দের সাথে আনন্দ-উৎসবে কাটে, সেখানে প্রবাসীদের ঈদ কিছুটা নিঃসঙ্গতার ছোঁয়া বয়ে আনে। ফোনের পর্দায় ভেসে ওঠা পরিবারের হাসিমুখ দেখে কিছুটা স্বস্তি পেলেও, কাছাকাছি থাকতে না পারার কষ্টটা থেকেই যায়। 

অনেক সময় দেখা যায়, প্রবাসীরা ঈদের আগে ছুটি নেওয়ার আশায় থাকেন, যেন ঈদ দেশে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করতে পারেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিভিন্ন কারণে সেই স্বপ্ন পূরণ হয় না। কোম্পানির ভিসা জটিলতা, কাজের চাপ, ছুটির অনুমোদন না পাওয়া, কিংবা টিকিটের উচ্চমূল্য- এসব কারণে অনেকেরই দেশে ফেরা সম্ভব হয় না। ফলে তারা ঈদের সেই আনন্দ উপভোগ করতে পারেন না এবং এক ধরনের মানসিক কষ্ট নিয়েই ঈদ উদযাপন করতে হয়।

তবুও, প্রবাসীরা চেষ্টা করেন নিজেদের মতো করে ঈদের আনন্দ খুঁজে নিতে। দূরদেশে থেকেও সবাই চেষ্টা করেন দেশের ঈদের আবহ যেন কিছুটা হলেও ফিরে আসে সবার মাঝে। তাই ঈদের সকালে নাস্তা তৈরি করা হয়ে থাকে, ঠিক যেমনটা দেশে করা হতো। কয়েকজন মিলে পরিকল্পনা করেন, কে কোন খাবার তৈরি করবেন। কারও দায়িত্ব সেমাই রান্না করা, কেউ বানান পোলাও-মাংস। কেউ আবার পেঁয়াজ, রসুন, মরিচসহ যাবতীয় কাটাকাটির কাজ করেন, কেউ মাংস প্রস্তুত করেন, আর ১-২ জন থাকেন রান্নার দায়িত্বে। পরে সবাই একসাথে খাওয়া-দাওয়া করেন। 

দেশে পরিবারের সঙ্গে বসে খাওয়ার মতো আনন্দ না পেলেও, একে অপরের মাঝে আপনজনের ছোঁয়া খুঁজে পান। আমাদের এই ক্ষুদ্র আয়োজন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা একা নই। দূরদেশে থেকেও আমরা একে অপরের পাশে আছি, ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছি।

এইভাবেই প্রবাসের ঈদ হয়তো একটু ভিন্ন, কিন্তু ভালোবাসা আর ঐক্যের মাঝে দেশের ছোঁয়া ঠিকই অনুভব করা যায়। ঈদের দিনটি শেষ হয় একরাশ নস্টালজিয়া আর আগামী ঈদে পরিবারের সাথে থাকার আশা নিয়ে।

ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক!

ঢাকা/এস


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়