ঢাকা     শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৮ ১৪৩১

সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন কৃষক

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন কৃষক

প্রথমবারের মতো সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের উঁচু জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু হয়েছে। সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার ও বীজ প্রণোদনার মাধ্যমে জেলার ৮ উপজেলায় এ বছর ২৭ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু হয়েছে।

কৃষকরা জানান, হাওরাঞ্চলে ধান চাষ খুব একটা লাভজনক নয়। ধান চাষ করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয় সেই টাকার ধান পাওয়া যায় না। তাই অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে বেশি লাভের  প্রত্যাশা করছেন তারা।

সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উপাদন সম্ভব। প্রতি কেয়ারে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উপাদন হবে প্রতি কেয়ারে ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের বাজার সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। প্রতি কেয়ার জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলায় ১০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। উপজেলার সুরমা, জাহাঙ্গীরনগর,  রঙ্গারচর, মোল্লাপাড়া ও গৌরারং ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন কৃষকেরা।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নে ও সলুকাবাদ ইউনিয়নে ২০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। জামালগঞ্জ উপজেলার রামপুর, শাহপুর, বাহাদুরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ২০ বিঘা জমিতে এবার সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। ছাতক উপজেলায় কালারুকা ইউনিয়নে, গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও, নোয়ারাই ইউনিয়নে, জাউয়াবাজার ইউনিয়ন ও ভাতগাঁও ইউনিয়নে ১০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের ছালামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমার ৩ কেয়ার জমি আবাদ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার টাকা। এই তিন কেয়ার জমিতে বীজ উৎপন্ন হবে ২০ মণ। এই ২০ মণ বীজ থেকে তেল হবে প্রায় ৪০০ লিটার। তেল বিক্রি করতে পারব ১ লাখ টাকার।’

তিনি আরো বলেন, ‘আগামীতে আমি আরো ১৫ থেকে ২০ কেয়ার জমিতে এ ফুল চাষ করব বলে আশা করছি। আমাকে দেখে এলাকার অনেক কৃষকরা সূর্যমূখী ফু্লের চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’

সুনামগঞ্জের বিনা উপ-কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সূর্যমুখীর বীজ থেকে যে তেল উৎপন্ন হয় তা স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসম্পন্ন। অলিভ ওয়েলের পরেই সূর্যমুখী তেলের অবস্থান। সোয়াবিন ও সরিষা ভোজ্য তেলের ঘাটতি পুরণ করবে সূর্যমুখী তেল।’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার দীপক কুমার দাস বলেন, ‘বেশি লাভজনক ফসল সূর্যমুখী। প্রথমবার কৃষকেরা সূর্যমূখী চাষ করে লাভবান হবেন বলে আশা করছি। আগামীতে উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ আরো বাড়বে।’

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সফর উদ্দিন বলেন, ‘জেলার ৮ উপজেলায় এবার দুই শতাধিক বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। সূর্যমুখীর চাষ লাভজনক। জেলায় প্রথমবারের মতো এই চাষ শুরু হয়েছে। এবার আমরা সূর্যমুখী চাষের জন্য কৃষকদের সার ও বীজ প্রণোদনা দিয়েছি। আগামীতে আরো বেশি পরিমাণে সূর্যমুখীর চাষ হবে বলে প্রত্যাশা করছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘হাওরাঞ্চলে ধান চাষ খুব একটা লাভজনক নয়। যার ফলে আমরা কৃষকদেরকে লাভজনক ফসল সূর্যমুখী, ভুট্টা আবাদ করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।’

 

সুনামগঞ্জ/আল আমিন/ইভা

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়