ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ধান কাটা নিয়ে চিন্তিত হাওরের কৃষক

আল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:২৮, ৯ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ধান কাটা নিয়ে চিন্তিত হাওরের কৃষক

ক্ষেতে পেকে এসেছে সোনালী ধান। ফসল ঘরে তোলার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন হাওরাঞ্চলের কৃষাণ-কৃষাণী।

সময়টা আনন্দের হলেও হাওরের কৃষকদের কপালে এখন চিন্তার ভাজ। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কৃষক-শ্রমিকসহ সবাই ঘরমুখো। ফসল ঘরে তুলতে শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

এদিকে সময়মতো সোনালী ফসল ঘরে তুলতে না পারলে আবারো বন্যার পানিতে ফসল তলিয়ে যাবে বলে জানালেন হাওর পাড়ের কৃষকরা।

এই পরিস্থিতিতে শ্রমিক সংকটে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার ধানের ক্ষতি হতে পারে বলে জানান জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল।

কৃষকরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর হাওরে বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। মাত্র কয়েকদিন পরই হাওরে পুরোপুরি ধান কাটা শুরু হবে। ৫শ টাকা দৈনিক শ্রমমূল্যেও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক। ফসল ভালো হওয়াতে কৃষকরা খুশি। সে খুশি যেন আর স্থায়ী হতে পারছে না।

ধান কাটার শ্রমিক সংকটে পড়েছেন জেলায় সবচেয়ে বড় হাওড় শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর, মহালিয়া হাওর, দেখার হাওর, জামখলার হাওরসহ ছোট বড় ৫২টি হাওরের কয়েক লক্ষাধিক কৃষক।

বিগত ২০১৭ সালে অকালবন্যার মতো এবারো ফসল হারানোর শঙ্কা তাদের। আবার এর সাথে যোগ হয়েছে করোনাকাল।

কৃষকরা জানান, হাওরাঞ্চলে এক সময় ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর অঞ্চল থেকে ধান কাটতে যে সকল শ্রমিক আসতেন তাদেরকে ‘ভাগালু’ কিংবা ‘বেপারী’ ভাগালু হিসেবে স্থানীয় কৃষকরা চিনতেন। কিন্তু ধানতো পাকতেছে ভাগালু তো মিলছে না। বর্তমানে ধান কাটা শ্রমিক সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হাওরের কৃষকরা।

তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের কৃষক গোলাম সারোয়ার লিটন বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলের কৃষকদের একমাত্র ফসল হচ্ছে বোরো ধান। এই ধানে খাবার থেকে শুরু করে পরিবারের সব চাহিদা পূরণ হয়। এবছর ২০ একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। ধান পাকছে কিন্তু ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। একদিকে করোনার ভয় অন্যদিকে শ্রমিকরা ঘর থেকে বের হচ্ছেনা। যার জন্য আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি আগাম বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ার।'

মাটিয়ান হাওরপাড়ের কৃষক ইকবাল হোসেন তালুকদার বলেন,‘মাটিয়ান হাওরে ১২০ একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। ধানের বাম্পার ফলন হইছে। বোরো ধান কিছুদিন পর কাটতে হবে। ধান কাটার শ্রমিক পেয়েছি কিন্তু মহামারি করোনার কারণে ধানকাটতে কেউ হাওরে আসতেছে না। সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছে। যদি সময় মতো হাওড়ের ধান কাটতে না পারি তাহলে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার ধান পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।'

মহালিয়া হাওরের কৃষক বাবুল মিয়া জানান, মহালিয়া হাওরে ২০ একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। ধান পেকেছে কিন্তু শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা এসে ধান কাটতো কিন্তু এবার কোনো জায়গা থেকে শ্রমিক আসতে পারবে না। করোনার ভয়ে ঘর থেকে কোনো শ্রমিক বের হচ্ছে না। অন্যদিকে সময় মতো ধান কাটতে না পারলে সব ধান পানিতে তলিয়ে যাবে। সরকার যদি হাওরের ধান কৃষকদের ঘরে তুলতে দ্রুত পদক্ষেপ না নেন তাহলে এবছর কৃষকদের পথে বসতে হবে। আবার ২০১৭ সালের মতো কৃষকদের অবস্থা হবে।

এবার জেলায় ছোটবড় ৫২টি হাওরে ২ লাখ ১৯ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা থেকে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে বলে জানালেন জেলা কৃষি সম্প্রসারধ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সফর উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘এবছর হাওরের পানি দেরিতে নামার কারণে কৃষকদের বোরো ধানের চাষে একটু দেরি হয়েছে। হাওরে ধান পেকেছে, ফলনও ভালো হয়েছে। চলতি মাসের ১৪ তারিখ থেকে বোরো ধান কাটা শুরু হবে। তবে কৃষকরা জানিয়েছেন তারা শ্রমিক খুঁজে পাচ্ছেন না। অনেক জায়গায় বিছিন্নভাবে ব্রি ধান ২৮ কাটা শুরু হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি আগামী ১০ মে এর মধ্যে হাওরে ধান কাটা শেষ করতে।'

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান, শ্রমিক সংকট নিয়ে  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে। বর্তমানে মহামারি করোনাতে বাঁচা মরার লড়াই চলছে। এমন পরিস্থিতিতে অন্যান্য জেলা থেকে শ্রমিক আসতে পারবে কিনা বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাচ্ছি।

 

সুনামগঞ্জ/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়