মুক্তাগাছা জমিদারবাড়ি
এখনও আকর্ষিত করে পর্যটকদের মন
আজিজুর || রাইজিংবিডি.কম

মুক্তাগাছা জমিদারবাড়ি টেম্পল
মাহ্বুবুল আলম রতন
মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ), ২৩ জানুয়ারি : মুক্তাগাছা উপজেলাটি জেলার পশ্চিম সীমান্তে। পাশেই টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর ও জামালপুর সদর সীমান্ত। মুক্তাগাছা পৌর শহরে এক সময় ১৬ জন জমিদার থাকায় এ শহরের পরিচিতি ছিল ষোল হিস্যার জমিদার হিসেবে।
আজ জমিদারও নেই, নেই জমিদারি কোন ব্যবস্থাও। কিন্তু পৌর শহরের প্রায় প্রতিটি স্থানেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জমিদারদের কীর্তিগুলো। যা কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে।
১৬ জন জমিদারেরই ১৬টি প্রাসাদতুল্য বাড়ি ছিল। এখনো আটানীর জমিদার রাজা জগৎ কিশোর আচার্যের বাড়িটি দেখার মতো। যা আজও পর্যটকদের মনকে আকর্ষিত করে। সারাদেশ থেকে আসা পর্যটক ভিড় করে জমিদারদের নানা স্মৃতি এক নজর দেখার আশায়।
মুক্তাগাছা জমিদারদের স্থাপত্যের সিংহভাগ সতের শ’ থেকে আঠার শ’ শতাব্দীতে নির্মিত। এখানে ঘুরে বেড়ালে সারা শহরেরই কীর্তিগুলো চোখে পড়বে। আছে দর্শনীয় মন্দির, পুকুর, বাড়ি ছাড়াও অনেক কিছু।
বর্তমান আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান ক্যাম্পের উত্তরে আছে রাজঘাট, দক্ষিণে জোড় মন্দির- যা নানা কারণেই বিখ্যাত। আর উত্তরে আছে পাথরের শিব মন্দির। জমিদারদের বাড়িতে আছে দুর্গা মন্দির, রাজেশ্বরী মন্দির, কয়েদখানা, সিন্ধুক ঘর, নাচঘর ইত্যাদির ধ্বংসাবশেষ। শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজের পাশেই আছে রাধা গোবিন্দ মন্দির।
মুক্তাগাছা জমিদারদের গড়া ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মহারানী বিমলা দেবীর যুগল শিব ও কালী মন্দির বেশ দর্শনীয়। ১৮২০ সালে নির্মিত এ মন্দির দুটির উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট। বিলাশ দীঘির থই থই করা জলের পাশে এগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। উত্তর পাশে পাথরের শিব মন্দিরটি গড়া হয়েছে পাথর কেটে।
জমিদারদের আরেক বিস্ময় বিষ্ণুসাগর। জমিদারদের তৃতীয় ছেলের নাম ছিল বিষ্ণু। তার নাম অনুসারে জনগণের পানীয় জলের কথা ভেবে ১৭৬২ থেকে ১৭৭০ সময়কালে খনন করেন বিষ্ণু সাগর দীঘিটি।
বিষ্ণু সাগর দীঘিটি খনন করতে প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক কাজ করেছিল বলে জানা যায়। এর আয়তন প্রায় ১০ একর। খনন কালে এর গভীরতা প্রায় ২০ ফুট থাকলেও বর্তমানে গভীরতা ১২ ফুটের মতো। পরিধি এতই বড় যে এর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষকে সহজে চেনা যায় না।
বর্তমানে বিষ্ণু সাগরটির চারধারেই চলছে একটু একটু দখল। যে যার মতো করে দখল করতে করতে এর আকারটি ক্রমশই ছোট হয়ে আসছে।
অনেকেই মনে করেন, সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ যদি জমিদারদের স্মৃতি চিহ্ন ধরে রাখার সামান্য উদ্যোগ নেন তাহলে যুগ যুগ ধরে পর্যটকদের আকর্ষিত করতে পারবে ১৬ হিস্যার জমিদার অধ্যুষিত মুক্তাগাছার এ অঞ্চল।
রাইজিংবিডি / আজিজুর / টিপু
রাইজিংবিডি.কম