ইবনুল কাইয়ুম
শার্লক হোমসের কথা কে না জানে। তার স্রষ্টা স্যার আর্থার কোনান ডয়েল সম্পর্কে আমরা অনেকেই টুকটাক খোঁজখবর রাখি। তবে হোমসের চরিত্রটি যে মানুষটির অনুপ্রেরণায় সৃষ্টি হয়েছিল সেই মানুষটি সম্পর্কে কিন্তু অনেকেই আমরা জানি না। পাঠক, চলুন জেনে নিই আড়ালের সেই মানুষটি সম্পর্কে।
একদিন ক্লাসে সব ছাত্রছাত্রীদের সামনে অত্যন্ত নোংরা থকথকে একটা ওষুধের জার রাখা হলো। ক্লাসে শিক্ষক বললেন, ‘আমি যা করছি তোমরাও তা করবে। এর পরে ব্যাপারটা আমি ব্যাখ্যা করব।’
শিক্ষক ওষুধের জারে আঙুল চুবিয়ে মুখে দিলেন। তার কথামতো ছাত্র ছাত্রীরাও একই কাজ করল। জারের মধ্যে ওষুধটি ছিল কটু স্বাদের। শ্রেণিকক্ষ ভরে উঠল ‘ওয়াক থুঃ!’ ধ্বনিতে।
শিক্ষক সামান্য হাসলেন। তিনি বললেন, ‘এটি ছিল পর্যবেক্ষণের একটি উদাহরণ। পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব বুঝাতে আমি তোমাদের এ কাজটি করতে বলেছি। তোমরা কেউই লক্ষ্য করোনি আমি যে আঙুলটি জারে দিয়েছিলাম সেটি নয়, অন্য আঙুল মুখে দিয়েছি।’এই শিক্ষকই ছিলেন ডাক্তার জোসেফ বেল।
স্যার আর্থার কোনান ডয়েল চিকিৎসাবিদ্যা পড়াশোনা শেষে প্লাইমাউথের সাউথ সি’র ১ নম্বর বুশ ভিলাতে বাড়ি ভাড়া নেন। এখানেই তিনি চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পাশাপাশি চলতে থাকে শার্লক হোমস(Sherlock Holmes) রচনা। এটি পৃথিবীজুড়ে বহুল পঠিত একটি চরিত্র। যে কারণে শার্লক হোমস যে একজন উচ্চমেধাসম্পন্ন লন্ডনভিত্তিক ‘পরামর্শদাতা গোয়েন্দা’ এই তথ্যটি পাঠকের অজানা নয়। নির্ভুল যুক্তিসঙ্গত কার্যকারণ অনুধাবন, যে কোনো প্রকার ছদ্মবেশ ধারণ এবং ফরেনসিক সায়েন্সের দক্ষতাবলে জটিল আইনি মামলার নিষ্পত্তি করে দেওয়ার জন্য তার খ্যাতি ভুবনজোড়া। ডয়েলের শিক্ষক ডাক্তার জোসেফ বেল ছিলেন সত্যিকারের অপরাধবিজ্ঞানী। যার কাজ ডয়েলের হোমস চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল।
জোসেফ বেল এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটির লেকচারার ছিলেন এবং তার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার কথা সবার জানা ছিল। ‘এ স্টাডি ইন স্কারলেট’ প্রকাশিত হওয়ার পর রুডিয়ার্ড কিপলিং আর্থার কোনান ডয়েলকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘ইনি তো আমার বন্ধু ডা. জো?’
এ ছাড়া, ডয়েল তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, লেখক রবার্ট লুইস স্টিভেনসনও বুঝতে পেরেছিলেন এই চরিত্রটি আসলে জোসেফ বেলকে দেখে তৈরি করা। স্টিভেনসন আর ডয়েল একসঙ্গে এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটিতে পড়েছিলেন।জোসেফ বেল বিভিন্ন পুলিশ ইনভেস্টিগেশনেও অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে বিখ্যাত সিরিয়াল কিলার জ্যাক দ্য রিপারের কেসটাও ছিল। সাত দিন তদন্তের পর তিনি একটা রিপোর্ট দেন। তাতে সন্দেহভাজন একজনের নামও ছিল শোনা যায়। কিন্তু তার সেই রিপোর্ট আর পাওয়া যায়নি। হতে পারে এর পুরোটাই বানানো। কারণ ইনভেস্টিগেশনে তাকে ফরেনসিক ডাক্তার হিসেবেই নেওয়া হতো, গোয়েন্দা হিসেবে নয়। তবে, গল্পটি বানানো নাও হতে পারে।কোনান ডয়েল শার্লক হোমসের শারীরিক কাঠামো, পোশাক, পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন জোসেফ বেলের চরিত্র থেকে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে পুরোটাই বেল। শার্লকের রসায়ন বা কেমিক্যাল নিয়ে অসাধারণ জ্ঞানের ব্যাপারটা নেওয়া হয়েছে প্রফেসর স্যার রবার্ট ক্রিস্টিসনের কাছ থেকে। তিনি বিভিন্ন ধরনের ড্রাগ নিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা করতেন। এরকম কানাঘুষা ছিল যে, তিনি নাকি নিজের শরীরেই অনেক বিষাক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ করে পরীক্ষা করতেন।কোনান ডয়েল প্রফেসর স্যার হ্যানরি লিটল জনের কাছে শিখেছিলেন ফটোগ্রাফ এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট রেকর্ড করার পদ্বতি। আরেকজন সার্জন প্যাট্রিক ওয়াটসন ছিলেন ডাক্তার বেলের বন্ধু। তিনি মিলিটারি ডাক্তার হিসেবে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। শার্লকের বন্ধু ডক্টর ওয়াটসনের নামের ক্ষেত্রে এর নামের শেষাংশ নেওয়া হয়েছে এবং তিনি ওয়াটসনের মতোই নিপাট ভদ্রলোক ছিলেন।রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ মে ২০১৫/সনি/তাপস রায়