ধ্রুব এষ, প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ শিল্পী। কথাসাহিত্যেও তিনি দক্ষতার ছাপ রেখে চলেছেন। লিখছেন সুখপাঠ্য শিশুসাহিত্য। এসব ছাপিয়ে তার প্রধান পরিচয় প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে। একুশে গ্রন্থমেলায় তার লেখা বই যেমন প্রকাশিত হয়েছে, তেমনি তার আঁকা বইয়ের প্রচ্ছদের সংখ্যাই বেশি। কাজী আশরাফের সঙ্গে এই শিল্পীর আলাপচারিতায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে কিছু কথা। কাজী আশরাফ : অতীতের সঙ্গে বর্তমানে বইয়ের প্রচ্ছদে কতটা পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন? ধ্রুব এষ : অতীতের সঙ্গে বর্তমানের প্রচ্ছদ না মেলানোই ভালো। দশ বছর আগের কাজের সঙ্গেই তো বর্তমান কাজের অনেক পার্থক্য। তারও আগে ব্লক করে প্রচ্ছদ করা হতো। কিন্তু এখন কম্পিউটারে কাজ করা হয়। বর্তমান প্রচ্ছদ সম্পূর্ণভাবে কম্পিউটারাইজড। আগে উপন্যাসে প্রচ্ছদ মানেই মনে করা হতো মানুষের ফিগার। কিন্তু এখন একটি দিয়াশলাইয়ের কাঠি দিয়েও প্রচ্ছদ হচ্ছে। বলা যায় এখনকার প্রচ্ছদে শিল্পী অনেক কিছুই ব্যবহার করছেন। আসল ব্যাপার হলো, যা প্রকাশ করা প্রয়োজন তা প্রকাশিত হচ্ছে কিনা। মানুষের ধারণার মধ্যে যা আছে সবই প্রচ্ছদের উপাদান। কাজী আশরাফ : আমরা মনে করি, প্রচ্ছদের এই পরিবর্তনে আপনার বড় অবদান রয়েছে। ধ্রুব এষ : আমি জানি না। তবে এটুকু বলবো, আমার কাজে লেখকরা যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন ভাই। হুমায়ূন আহমেদ তো আমাকে বলেই দিয়েছিলেন, তোমার যা ইচ্ছে করতে পারো। তাঁর প্রচ্ছদ নিয়ে কোনো বাধা ধরা নিয়ম ছিল না। বরং আমি বলব, বর্তমান প্রচ্ছদে যে পরিবর্তন এসেছে তাতে হুমায়ূন আহমেদের অবদান রয়েছে। তাঁর বইয়ের প্রচ্ছদেই প্রথম নানা বিষয় বিচিত্রভাবে উঠে আসে। কাজী আশরাফ : এ ক্ষেত্রে প্রকাশকদের কোনো নির্দেশনা থাকে কিনা? ধ্রুব এষ : না। আমাকে কোনো প্রকাশক এমন কিছু বলেন না। আর এমন কেউ বললে আমি তার কাজ করব না। কারণ কাজের স্বাধীনতা না থাকলে ভালো কাজ করা যায় না। কাজের স্বাধীনতাই কাজকে আরো মানসম্পন্ন এবং গতিশীল করে। কাজী আশরাফ : প্রচ্ছদশিল্পীর কোন বিষয়গুলোতে নজর দেয়া উচিত বলে মনে করেন? ধ্রুব এষ : প্রথমেই প্রয়োজন দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা। একজন প্রচ্ছদশিল্পী বা অলঙ্করণশিল্পীকে যথেষ্ট সিনসিয়ার হতে হবে। তরুণদের প্রচুর ভাবতে হবে। যথেষ্ট অনুশীলন করতে হবে। পড়তে হবে তারও বেশি। মোট কথা বইয়ের ভেতর ঢুকতে হবে। ভালো কাজ করতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। আর অবশ্যই কাজের মধ্যে থাকতে হবে স্বাধীনতা। কাজী আশরাফ : এ সময়ের প্রচ্ছদ নিয়ে কিছু বলুন। ধ্রুব এষ : অনেক সময় ‘বিশ্বমান’ শব্দটা কানে আসে। অর্থাৎ এখানে কিছু হলে সেটির তুলনা করতে আমরা বিশ্বের দিকে তাকাই। আমার কাছে এই কনসেপ্টটাই খুব হাস্যকর মনে হয়। আমরা তো বিশ্বের বাইরে নই। আসলে প্রচ্ছদের ক্ষেত্রে ভালো লাগাটাই বড় কথা। কাজটা ভালো হয়েছে কিনা সেটাই হলো দেখার বিষয়। কাজটি কোথায় হয়েছে সেটি বড় কথা নয়। আমাদের বইয়ের প্রচ্ছদ কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই এটা আমি বলতে পারি। এবং অনেকেই এখানে ভালো কাজ করছে। কাজী আশরাফ : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ পেশার ভবিষ্যত কতটা বলে আপনি মনে করেন? ধ্রুব এষ : প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণশিল্পীর কাজের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এবং এর পরিধি আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এখনও আমাদের গ্রাফিক ডিজাইনারের খুব অভাব। নতুন নতুন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে। প্রতি বছর নতুন বই প্রকাশিত হচ্ছে। এই গ্রন্থমেলাতেই প্রায় চার হাজার বই প্রকাশিত হবে। সুতরাং কাজের ব্যাপ্তির তুলনায় কাজ করার যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলে আমার মনে হয়। কাজী আশরাফ : তরুণরা আপনাকে ‘আইডল’ মনে করে। যারা কাজ করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কী বলবেন? ধ্রুব এষ : আগেই বলেছি, প্রচুর বই পড়তে হবে। যতটুকু কাজ করবে, তার চেয়ে শতগুণ বেশি দেখতে হবে। বইয়ের প্রচ্ছদ কী হবে বইটি না পড়লে বোঝা যাবে না। সুতরাং প্রচ্ছদ আঁকার আগে বইটি পড়ে নিজের ভেতরে ক্লিয়ার কনসেপ্ট তৈরি করে নিতে হবে। এবং আর্টের কিছু টেকনিক্যাল দিক রয়েছে সেগুলো মেনে চললে ভালো কাজ করা সম্ভব। সর্বোপরি যথেষ্ট অনুশীলনই ভালো কাজ উপহার দিতে পারে। এ পেশায় মূলত প্রয়োজন হলো সৃজনশীলতা। শিল্পীর সৃজনী ক্ষমতা। যে যত সৃজনশীল সে তত ভালো করবে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/তারা