পুঙার কাপুড় তোল তো, দেখি। নানি বলে। ক্যাথরিন বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে।
পুঙার কাপুড় তোল তো, দেখি। নানি ফের বলে। আমরা যতক্ষণ সামনে থাকব বলেই যাব।
উনি কি বলছেন? ক্যাথরিন এবার আমার কাছে জানতে চান।
মাথায় গণ্ডগোল আছে। ওকে বলি। অনেকটা জোর করে ওকে নানির সামনে থেকে উঠিয়ে মার ঘরে বসাই। ক্যাথরিন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন চারপাশ।
ভেবেছিলাম তোমাদের এখানে গ্রামের বাড়িঘর সব মাটি দিয়ে তৈরি। এখন দেখছি শহর আর গ্রামে তফাত নেই। মানুষগুলোর চোখের ভাষা কেবল আলাদা, আর সব এক। মা দরজায় দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছিলেন। ঘরে একপা দিয়ে বলেন, কী বলছেরে?
আমি ক্যাথরিনকে মায়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। ক্যাথরিন একবার নমস্কার একবার সালাম বলে কী করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না। ও জানে মা ওর কথা বুঝবে না।
আপনি ভালো আছেন মেম-সাহেব? ক্যাথরিন বাংলা ভাষা জানে না জেনেও মা ক্যাথরিনের চোখে চোখ রেখে জানতে চান। গরীবের ঘরে এসেছেন, কোথায় বসতে দিই! কি খেতে দিই! মা বিছানাটা শাড়ির আঁচল টেনে ঝেড়ে দিতে দিতে বলেন। আপনি তরকারিতে ঝাল ক্যামন খান? এ বাড়িতে আবার ঝালটা একটু চড়া না হলি কেউ খ্যাতি পারে না! মার কথাগুলো বুঝতে না পেরে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন ক্যাথরিন। আমি প্রয়োজনীয় অংশটুকু তর্জমা করে দিই; বলি, মা বলছেন আপনি আসাতে খুব খুশি হয়েছেন। একেবারেই অবিশ্বস্ত অনুবাদ। কিন্তু ভুল অনুবাদ না।
থ্যাংক ইউ। ক্যাথরিন বলে।
এইটা বুঝছি। তোকে আর মানে করি দিতি হবে না। মা হাসতে হাসতে আমাকে বলেন।
মা আর ক্যাথরিনের বয়স কাছাকাছি হবে। আমার মা তিন সন্তান গর্ভে ধরেছেন। বেঁচে আছি কেবল আমি। প্রথম জনের জন্ম হয় মায়ের বয়স যখন ষোলো। বাঁচেনি। দ্বিতীয় জনের মৃত্যু হয় পাবলিক বাসে। কোনো দুর্ঘটনা নয়, গণধর্ষণে। ক্যাথরিন বিয়ে করেননি। সন্তান আছে কিনা জানি না। ইউরোপ-আমেরিকায় সন্তানের জন্য বিয়ে করার প্রয়োজন হয় না।
আজ চারদিন হলো ক্যাথরিনের সঙ্গে আছি। একাই এসেছেন কানাডা থেকে। দোভাষীর এই কাজটা পাইয়ে দিয়েছেন ফেসবুকে পরিচিত এক বড়ভাই। বললেন, ইংরেজি থেকে পড়াশুনা করে অনলাইনে বেতনবিহীন সাংবাদিকতা করো। একমাস কাজটা করো, এক বছরের বেতন হয়ে যাবে। পরে আবার একটা চাকরি খুঁজে নিও। কথাটা আমার মনে ধরেছে।
আমার ধারণা হয়েছিল, এ সময় কোনো বিদেশির বাংলাদেশে আসা মানেই কক্সবাজার যাওয়া, রোহিঙ্গা নিয়ে লেখালেখি করা। কাজটি পাকা হয়ে গেলে আমি রোহিঙ্গাদের নিয়ে পড়াশুনা শুরু করে দিলাম। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এই দিকটাই আমার যাওয়া হয়নি। কুষ্টিয়ার পান্টিতে জন্ম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা। এরপর ঢাকায় আসা। স্কুলে পড়াকালে শিক্ষাসফরে সুন্দরবন গিয়েছিলাম। এর বাইরে বাংলাদেশ যা চিনেছি বইয়ের মানচিত্রে। ফলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাক এই রুট সম্পর্কেও অনেক কিছু জানতে হয়েছে। বিশেষ করে টেকনাফ বা কক্সবাজারে কোথায় থাকা যায়, কেমন খরচ এর একটা প্রাথমিক ধারণা নেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ক্যাথরিন বিমানবন্দরে নেমেই আমাকে অবাক করে দিয়ে জানালেন তিনি সর্বপ্রথম যশোর যেতে চান। এর আগেই অবাক যা হওয়ার হয়ে গেছি ওকে দেখে। এয়ারপোর্টের ভিতরে একটা কাগজে ক্যাথরিন লিখে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সাদা চামড়ার নারী দেখলেই কাগজটা উঁচিয়ে ধরেছি। হঠাৎ করেই শ্যামলা রঙের এক নারী এসে বললেন- হ্যালো, দিস ইজ মি। ক্যাথরিন। আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। হতাশও হয়েছি। মনে মনে যে ক্যাথরিনকে তৈরি করেছিলাম তার ধারে কাছেও নেই সে। জীবনে প্রথম কোনো বিদেশির সঙ্গে পরিচয়, তাও আবার দেখতে বিদেশি না।
ঢাকায় নিজের মতো হোটেলে থাকবেন তিনি। আমাকে সঙ্গ দিতে হবে বেড়ানোর সময়। জানালেন ঢাকা পরে ঘুরবেন, আগে তিনি যশোর যেতে চান। ক্যাথরিন তার কোনো পরিকল্পনা আমাকে জানালেন না। আমি জিজ্ঞাসা করলে বললেন, ঘুরতে ঘুরতে ঠিক করে নেব।
যশোর এয়ারপোর্টে নেমে যেমন বললেন, গিন্সবার্গের যশোর রোডে নিয়ে যেতে। আমি যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এত পড়াশুনা করলাম, সব বৃথা গেল। যশোর রোড নিয়ে এখন কিছুই বলতে পারি না। এমন আনকমন প্রশ্ন পরীক্ষাতেও পড়ে না। আমার অবস্থা বুঝতে পেরে ক্যাথরিন বললেন, আগে হোটেলে যাই, তারপর যাওয়া যাবে। হোটেলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমি গুগল করে জানতে পারি, অ্যালেন গিন্সবার্গ মুক্তিযুদ্ধের সময় সেপ্টেম্বর মাসে লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে যশোর সীমান্তে আসেন। গিন্সবার্গ আশপাশের ক্যাম্পে শরণার্থীদের দুর্দশা দেখার পর ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ কবিতাটি রচনা করেন, যা পরে আমেরিকায় বব ডিলান ও অন্যান্য খ্যাতিমান গায়কদের সহায়তায় কনসার্ট ফর বাংলাদেশে গাওয়া হয়।
আপনি কি গিন্সবার্গের কেউ হন? বেনাপলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে প্রশ্নটা করি। ক্যাথরিন কোনো উত্তর করেননি। সবসময় তিনি নিজের মধ্যে ডুবে থাকেন। যতটুকু জানতে চান, তার বাইরে কোনো কিছুই তাকে জানাতে পারি না। ঝিকরগাছা-নাভারনের পথের ডানপাশে ফুলের চাষ হয়। আমি ওকে বললাম, এই ফুল বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিদেশেও রপ্তানি হয়। উনি একবারও ঘুরে তাকালেন না। বাঁ দিকের বাড়িঘরগুলো দেখছিলেন। আমি চাইলেও কিছু বলতে পারলাম না। ইতোমধ্যে গুগল করে যশোর সম্পর্কে যৎসামান্য যা জেনেছি তাও অতিরিক্ত মনে হলো। আমরা যশোর থেকে বেনাপোল সীমান্ত পর্যন্ত গেলাম। ওখানে তিনি কয়েকজনের কাছে একাত্তরের শরনার্থী ক্যাম্প সম্পর্কে জানতে চাইলেন। একজন বললেন ওপারে আছে। এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে অন্যরা জানালেন। আরও কী কী যেন জানতে গিয়ে দমে গেলেন ক্যাথরিন। ফেরার পথেও সমস্ত পথ চুপ করে বসে রইলেন। মাঝে গাড়ি থামিয়ে রাস্তার ধারে একটি চায়ের দোকানে পাথরচোখে বসে রইলেন কিছুক্ষণ। চার পাঁচবার চা পান করলেন। সিগারেট ধরালেন প্রতিবার। লোকজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওর সিগারেট টানা দেখছিলেন। ক্যাথরিন খেয়াল করেননি।
পরদিন ভোরে আবার গেলেন। সড়কের দুপাশের দোকানপাট তখনো খোলেনি। লোকজনের কোলাহল না থাকলেও রাস্তায় বড় বড় ট্রাক আর বাসের কারণে ভোরের নিস্তব্ধতা উপভোগ করার অবস্থাতে নেই। একটা মাইক্রো নিয়ে একপাশ দিয়ে সাইকেলের গতিতে গেলাম আমরা। চল্লিশ কিলোমিটারের মতো রাস্তা যাওয়া-আসাতে দিনটা শেষ। যাওয়ার সময় প্রায় সময়টা আমি ঘুমিয়ে কাটিয়েছি।
আপনি কি যশোরের আর কোথাও যাবেন? ফেরার পথে জানতে চাইলাম।
না। ক্যাথরিন বললেন।
চাইলে সুন্দরবনে নিয়ে যেতে পারি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। আমি নিজে গেছি বলে বলছি। আপনার খারাপ লাগবে না। বললাম আমি। চাচ্ছিলাম উনার বদৌলতে সুন্দরবনটা আরেকবার আমার দেখা হোক। অন্তত একই রাস্তায় ঘুরপাক খাওয়ার চেয়ে নতুন কিছু দেখা হবে।
আমি একাত্তরের বাংলাদেশকে দেখতে চাই। বললেন তিনি। তখনই আমি মুজিবনগরের কথা বললাম। ক্যাথরিন শুনেই আগ্রহ প্রকাশ করলেন। এরপরেই আমাদের যশোর থেকে কুষ্টিয়া আসা। ভেবেছিলাম মেহেরপুর যাওয়ার আগে লালন শাহের মাজার ও ঠাকুরবাড়ি ঘুরিয়ে নেব। ভদ্রতাস্বরূপ বলেছিলাম আমাদের গ্রামের বাড়ি এখানেই, আপনার আপত্তি না থাকলে একটা ব্রেক নিতে পারি। উনি না হ্যাঁ কিছু বললেন না। ফলে দুপুরের খাওয়ার আয়োজনটা আমাদের বাড়িতেই হলো। খ.
পুঙার কাপুড় তোল তো, দেখি। নানি বললেন। আমরা খেতে বসেছি, পাশেই ক্যাথরিন বসা।
বুড়িকে এখান থেকে সরাও তো। মাকে বলি আমি।
থাক-না, মেম সাহেব তো আর আমাদের কথা বোঝেন না। মা বলেন।
কি বলছেন? ক্যাথরিন নানির দিকে তাকিয়ে আমার কাছে জানতে চান।
তেমন কিছু না। বলি আমি।
মনে হচ্ছে আমাকে কিছু বলতে চায়। ক্যাথরিনকে কিছুটা সিরিয়াস মনে হয়।
নতুন মানুষ দেখেছে, তাই এটাসেটা জানতে চাচ্ছে। মানসিক সমস্যা আছে। আমি ক্যাথরিনকে বুঝিয়ে বলি।
একটি কথাই বারবার বলছে। কী সেটা? ক্যাথরিন প্রশ্ন করে এমনভাবে আমার মুখের দিকে তাকান যেন ঘুরিয়ে বললেই তিনি বুঝে ফেলবেন।
বাড়িতে কেউ এলে বিশেষ করে নতুন কোনো মেহমান, উনি তার পেছনের কাপড় তুলে দেখতে চান। আগে শুধু শিশুদের দেখতে চাইতেন। বিশেষ করে মেয়েশিশু। এখন মাথার সমস্যাটা বেড়েছে। অপরিচিত ছোটবড় যাকেই দেখেন বলেন পেছনের কাপড় তুলে দেখাতে।
কী দেখাতে? কী খোঁজেন তিনি? ক্যাথরিন প্রশ্ন করে।
দাগ। একটা জন্মদাগ। আমি বলি।
আমার নানা জন্মের ক’দিনের মাথায় আমার জমজ বুউনটাকে বিদেশিদের দি’ দেয়। আমি এতটাই কাবু ছিলাম, এমনিতেই মরি যাবো ভেবি আর দেয়নি। হয়ত ওরাও নিতি চায়নি। মরার কপাল আমার, আজ হয়ত অন্যকোথাও থাকতাম! কিংবা সত্যি সত্যি মরি গেলি মায়ের একটা ভালো বি’ হতুক। আমার কারণে তার কোনো সংসার হলু না। বাপের পরিচয় না থাকার কারণে আমার ঘরটাও টিকলু না। এখন খালি হারিয়ে যাওয়া মেয়িকে খোঁজে। আমি যে আছি, আমি যে তার মেয়ি, এটা আর মনে থাকে না। আমার মা কথাগুলো বলে শক্ত হয়ে পাথরের মতো বসে থাকেন। ক্যাথরিন মার চোখের দিকে তাকিয়ে। আমি মায়ের কথার তর্জমা না করে উঠে পড়ি।
আমরা মুজিবনগরে যাই। বছর পনেরো আগে একবার এসেছিলাম। অনেক বদলে গেছে জায়গাটা। দেখার মতো হয়েছে। বেশ কটি পিকনিক বাস এসেছে। মাইকে উচ্চস্বরে হিন্দি আইটেম গান চলছে। কতগুলো ছেলে নাচানাচি করছে তালে তালে। ক্যাথরিন বিরক্ত হন অতিরিক্ত শব্দে। কিছু বলেন না। নিজের মতো করে হাঁটতে থাকেন চারপাশ। আমি গুগল করে ১৭ই এপ্রিল সম্পর্কে ওকে জানাতে যাই।
জানি। ক্যাথরিন বলে।
এখানে একটা খ্রিষ্টানপল্লী আছে, ভবেরপাড়া; যাবেন? আমি কোনো কথা না পেয়ে জিজ্ঞাসা করি। এখানে ওরা ভালোভাবেই আছে। এদেশে হিন্দুপাড়ায় কিংবা বৌদ্ধমন্দিরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটলেও খ্রিষ্টানপল্লীতে কোনো সমস্যা হয়নি। ক্যাথরিন কোনো উত্তর করেন না। এসব অবান্তর কথা কেন বললাম ভেবে আমার নিজেরই লজ্জা লাগে।
আমরা রাতের বাসে ঢাকা ফিরে আসি। একটা দিন বিশ্রাম নিয়ে পরদিন সকালে আমরা স্মৃতিসৌধ ও বধ্যভূমি হয়ে শহীদ মিনারে যাই। শহীদ মিনারের বেদিতে একটা শিশু তখন শুয়ে। বয়স এক বছরের বেশি হওয়ার কথা না। রোদটা পড়েছে ওর শরীরে। এপ্রিল মাসের তেতে ওঠা সূর্য। ক্যাথরিন ছায়া করে দাঁড়ান।
রাতে কেউ কেউ বেদির উপর শুয়ে থাকে। সকাল হলে যে যার ধান্দায় বেরিয়ে পড়ে। শিশুটির মা হয়ত ওকে রেখে খাবারের ব্যবস্থা করতে গেছে। আর কিছু তো প্রয়োজন হয় না ওদের। এখনই ফিরে আসবে। আমি বলি।
আর যদি না আসে? বলে ক্যাথরিন ওর বুকের ওড়না টাইপের কাপড়টা দিয়ে শিশুটিকে জড়িয়ে বেদির উপরের ছায়া অংশে শুইয়ে রাখেন। লোকজন ক্যাথরিনের বুকের দিকে তাকায়। বুকের উপরের দিকে কিছুটা উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে।
শহীদ মিনারের সামনে বিদেশিদের এসব অশ্লীল পোশাকে আনেন কেন? একজন লোক আমাকে শাসনের স্বরে বলেন। ক্যাথরিন তখনও শিশুটির দিকে তাকিয়ে। বলেন, ওর মা যদি খাবার নিয়ে না ফেরে? ক্যাথরিনকে শহীদ মিনারের স্তম্ভের দিকে আর তাকাতে দেখি না। বলেন, ওর বুকে জন্মদাগ আছে। ক্যাথরিন ঘুমন্ত শিশুটির দিকে তাকিয়ে থাকেন। শিশুটির বুকের জন্মদাগটা স্পষ্ট চোখে পড়ে।
একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকারের জায়গা এটা। বিদেশিরা অবশ্য এটা বুঝতে পারবেন না। বলি আমি। প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি এখানে কত মানুষ ফুল দিতে আসে আপনি ভাবতেই পারবেন না। রাত বারোটা থেকে শুরু হয় ফুল দেওয়া। পাশেই একদিন ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন রফিক-জব্বার-সালাম। আরও দুজনের নাম বলতে গিয়ে আমার মনে পড়ে না।
কিন্তু এই শহরের রাস্তা-ঘাটের চারপাশে তাকলে মনে হয় না এটা বাংলা ভাষার শহর। ক্যাথরিন বলে আমার উত্তরের জন্য অপেক্ষা না করে গাড়ির দিকে পা বাড়ান।
আমরা গাড়িতে উঠে আবিষ্কার করি, ক্যাথরিনের প্যান্টের পকেটে মোবাইলটা নেই। শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে থাকার সময় কেউ তুলে নিয়েছে। যে লোকটি আমাকে বলেছিল, বিদেশিদের অশ্লীল পোশাকে এখানে আনতে নেই, তাকেই আমার সন্দেহ হয়। আমারই উচিত ছিল ওকে সাবধান করে দেওয়া।
অনেক দামি ফোন ছিল কি? আমি বোকার মতো প্রশ্ন করি।
অনেকগুলো ছবি তুলেছিলাম এখানে এসে। স্মৃতি ছাড়া বেঁচে থাকার মতো অভিশপ্ত জীবন যে আর হয় না, তা আমার চেয়ে আর কে ভালো বোঝে! ক্যাথরিন বলেন।
আমরা এখন কোথায় যাবো? আমি জানতে চাই।
খুব ক্লান্তি লাগছে। আজ সারাদিন ঘুমাতে চাই। গাড়িটা শহর থেকে বের হয়ে যেদিকে ইচ্ছা যাক। ক্যাথরিন বলেন। গ.
আমি কালই যাচ্ছি। বারো দিনের মাথায় ক্যাথরিন বললেন। তার আরও কদিন থাকার কথা ছিল। আমার কোনো সমস্যা হয়নি, যা কথা হয়েছিল তার চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে গেলেন। বললেন, খরচ তো বেঁচে গেল। তুমি রেখে দাও। আরেকটা প্যাকেট দিলেন আমার মায়ের জন্য। বললেন, এ দেশকে আমার তেমন কিছু দেওয়ার নেই। তোমার মার জন্য এই সামান্য উপহারটুকু থাক।
ক্যাথরিন চলে গেলেন রবিবার সকালের ফ্লাইটে। শুক্রবার ফেসবুকে শেয়ার করা লিংকের শিরোনামে চোখ আটকে গেল- ‘বাংলাদেশ ঘুরে গিয়ে কানাডিয় নাগরিকের আত্মহত্যা’। ক্যাথরিনের কানাডা পৌঁছে আমাকে ই-মেইল করার কথা ছিল। চাকরি ছাড়ার পর থেকে মেইল চেক করা কমিয়ে দিয়েছি। ক্যাথরিনের আত্মহত্যার খবরটি পড়ে লগ ইন করি।
ক্যাথরিনের মেইলটা এসেছে গত বুধবার রাতে। মাত্র দুটো লাইন লেখা- সমস্ত শরীর নগ্ন করে আমি বাংলাদেশকে দেখাতে চাই- কেউ কি আমাকে চিনতে পারবে? রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ মার্চ ২০১৯/তারা