আমাদের জাতীয় কবি আছেন, জাতীয় সংগীত রয়েছে। জাতীয় গ্রন্থ কি রয়েছে? যদি না থাকে, কেন নেই? থাকা কি প্রয়োজন নয়? আমরা এই প্রশ্নের উত্তর তালাশ করব একটু পরে। তার আগে আসুন জেনে নিই- কোন্ বইয়ের পাঠ অভিজ্ঞতা থেকে এই প্রসঙ্গের অবতারণা। বইটি আবুল মনসুর আহমদের ‘আত্মকথা’। আত্মজীবনীমূলক বই হিসেবে যার পরিচিতি রয়েছে। কিন্তু এটি নিছক আত্মজীবনীমূলক বই নয়, তারও অধিক গুরুত্ববাহী। আজ আবুল মনসুর আহমদের ১২৬তম জন্মদিন। ১৮৯৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মারা যান ১৯৭৯ সালের ১৮ মার্চ। তাঁর জন্মদিন স্মরণে শ্রদ্ধার্ঘে এই লেখা।
বাংলা ভাষাভাষি পাঠক সবার জন্যই বিশেষ গর্ব ও গৌরবের বিষয় হলো যে, এ রকম একটা তাৎপর্যবাহী বই বাংলা ভাষায় লেখা হয়েছে। একথা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান আত্মজীবনীমূলক বই হওয়ার দাবি রাখে ‘আত্মকথা’ যা আমাদের সবার পাঠ করা আবশ্যক। কেবল ‘আবশ্যক’ শব্দ দিয়ে আবুল মনসুর আহমদের ‘আত্মকথা’র গুরুত্ব এবং ওজস্বীতা স্পষ্ট করা সম্ভব নয়। আক্ষরিক অর্থেই এ কথা বলা যৌক্তিক ও যথার্থ যে, ‘আত্মকথা’ পাঠ করা সকলের জন্যই অপরিহার্য। আমরা নিজেদের ‘বাঙালি’, ‘বাঙালি মুসলমান’ যাই-ই বলি না কেন, তার কোনটাই পূর্ণতা পাবে না এই বই পূর্ণাঙ্গরূপে পাঠ ও বক্তব্যসমূহ হৃদয়ে ধারণ করা না পর্যন্ত। এই বই একটা জাতির জন্য নির্দেশিকা স্বরূপ, আলোকবাহী এক বাতিঘর।
এখন যে কেউ প্রশ্ন হাজির করতে পারেন- একটা বইয়ের মধ্যে কী এমন আছে যা পাঠ করার গুরুত্ব জারি রাখতে আমি ‘আবশ্যক’, ‘অপরিহার্য’ শব্দবন্ধ উল্লেখ করছি। এই প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেয়া অসম্ভব। এ জন্যও বইটি পাঠ করার বিকল্প নেই। বিশেষভাবে মনে রাখা প্রযোজন, কেবল পাঠ করলে হবে না, বইটির বক্তব্য, প্রেক্ষাপট, পরিপ্রেক্ষিত, তুলনামূলক আলোচনায় অনুধাবন করতে হবে।
বাংলা ভাষায় আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের সংখ্যা কম নয়। এ জাতীয় বই অতীতে লেখা হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে নিশ্চয়ই। কিন্তু আমাদের প্রয়োজনেই ‘আত্মকথা’র গুরুত্ব উপলব্ধি করা জরুরি। এটি এমন একটা বই, যার গুরুত্ব বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের নাগরিকেরা যত দ্রুত উপলব্ধি ও আত্মস্থ করতে পারবে, তত দ্রুত জাতির বিকাশ এবং বিশ্ব মাঝে আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও গোড়াপত্তনের কাজটি ততোধিক দ্রুততায় সম্পন্ন হবে।
জসীমউদ্দীনের ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ পাঠান্তে দীনেশচন্দ্র সেন বলেছিলেন, ‘‘আমি হিন্দু। আমার কাছে বেদ পবিত্র, ভগবৎ পবিত্র। কিন্তু ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ পুস্তকখানি তাহার চাইতেও পবিত্র। কারণ ইহাতে আমার বাংলাদেশের মাটির মানুষগুলির কাহিনী আছে।’’ দীনেশচন্দ্রের এই প্রতিক্রিয়া কেবল কথার কথা নয়। এর তাৎপর্য উপলব্ধি করা সম্ভব হয় তখনই যখন ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ পাঠপূর্বক হৃদয়ঙ্গমের কোশেশ করা হয়।
আবুল মনসুর আহমদের ‘আত্মকথা’য় রয়েছে একটা জাতিকে আত্মপরিচয় নিয়ে দাঁড়াতে হলে কী করণীয় তার ইশতেহার, নির্দেশিকা, ভাবাভাবির রসদ ও দার্শনিক বোঝাপড়ার সুলুকসন্ধানী বয়ান। এই বই প্রকৃতার্থে অনেক বিষয় ধারণ করেছে, যার গুরুত্ব, কোনোভাবেই কোনোটার চেয়ে কম নয়। কোনো আত্মজীবনী বা বই যে একইসঙ্গে এরকম বহুধা বিষয় ধারণ করতে পারে ‘আত্মকথা’ পাঠের আগে তেমনটা ভাবা কঠিন ছিল বৈকি।
আবুল মনসুর আহমদের ‘আত্মকথা’কে ঢাউস আকৃতির বই বললে অত্যুক্তি হবে না। উপরন্তু নিবিড় পাঠক, কৌতূহলী জ্ঞান সংগ্রাহক, প্রশ্ন সন্ধানী গবেষক ও দায়িত্বশীল চিন্তক মাত্রই ‘আত্মকথা’র কাছে প্রত্যাশায় দাঁড়ি পড়ে না। আরও স্ফীতকায় হলে জানার সুযোগ বেশি হতো এই প্রত্যাশা থেকেই যায় চারশ পৃষ্ঠার বইটি পাঠান্তে। বইটির সূচিপত্রে চিত্তাকর্ষক বৈশিষ্ট্য ও বিশিষ্টতা ধরা পড়েছে, উজ্জ্বলতার সঙ্গে। সাত খণ্ডে বিন্যস্ত সূচিতে অধ্যায় রয়েছে চব্বিশটি।
আমরা সবাই জানি যে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য একদা অস্ত যেত না। পৃথিবী নামক গ্রহের সকল জায়গায়, ব্রিটিশরা ঔপনিবেশিকতার গোড়াপত্তন করেছিল। বিষয়টা গৌরবের তো নয়ই, উল্টো তারা যে দখলকারী, লুটেরা সত্তার প্রতিভূ একটা জাতি সেটাই প্রমাণ করে, সাক্ষ্য দেয়। অথচ, এই নিয়ে তাদের গর্বের অন্ত ছিল না। আজকের আমেরিকা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধিভুক্ত একমাত্র দেশ যারা সরাসরি যুদ্ধ করে অর্জন করেছে নিজেদের স্বাধীনতা। ১৭৫৭ সালে বাংলার স্বাধীনতা অস্তগামী হয়ে যখন সমগ্র ভারতের পরাধীনতার ঘণ্টাধ্বনি বাজিয়ে দিয়েছে, ঠিক তার দুই দশকের মাথায় আমেরিকা থেকে পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হয় ব্রিটেন। ১৭৭৬ সালে রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের মাধ্যমে আমেরিকা স্বাধীনতা অর্জন করে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে রোপিত হয় পরাধীনতার বীজ। কে জানতো, যে ব্রিটেন একদা শাসন ও শোষণ করতো আমেরিকাকে, তারাই একদিন বিশ্বজুড়ে আমেরিকার কর্তৃত্ব মেনে নেবে। আমেরিকা হয়ে উঠবে বিশ্বের একক ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। বিশ্বমোড়ল বলতে যা বোঝায় তাই-ই হয়ে উঠবে আমেরিকা!
কেউ না জানলেও আমেরিকার স্বাধীনতার নায়কেরা জানতো, তারা একদিন সত্যিসত্যি বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। সে লক্ষ্যে যা যা করা দরকার সেদিন তারা তা করেছিল। তারপরও আমেরিকাকে আমেরিকা হয়ে উঠতে অনেক বোঝাঝুঝি, দার্শনিকবোধ ও অভ্যন্তরীণ লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। স্বকীয়তাবাদ বুঝতে হয়েছে এবং তা প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে যেতে হয়েছে দীর্ঘমেয়াদী এক আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। আবুল মনসুর আহমদ আমেরিকার ‘স্বকীয়তাবাদ’ এর সামগ্রিক সত্তাসহ পুরো বিষয়কে গভীরভাবে অনুধাবন করতে চেয়েছেন বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বৃহত্তর প্রয়োজনের লক্ষ্যে।
‘স্বকীয়তাবাদ’ প্রত্যেক জাতির জন্যই গুরুত্ববহ। তবে সেসব জাতির জন্য অনেক বেশি মাত্রায় প্রয়োজন যাদের রয়েছে নিজেদের সঙ্গে বিভাজিত হওয়ার বেদনাবিধুর অধ্যায়। তা হলে বিশ্ব মানচিত্রে ‘স্বকীয়তবাদীতা’র মধ্যে দিয়ে নিজেদের গর্ব ও গৌরব জারি রাখা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে ‘জাতীয়তাবাদ’ ও ‘স্বকীয়তাবাদে’র মধ্যে রয়েছে সূক্ষ্ণ পার্থক্য। একটা পরাধীন দেশের জন্য ‘জাতীয়তাবাদী’ হওয়াটা জরুরি ও অপরিহার্য। এই সময় ‘স্বকীয়বাদী’ হয়ে ওঠা আবশ্যক নয়। কিন্তু দেশটা যখন স্বাধীনতা অর্জন করে, তখন তাকে কেবল ‘জাতীয়তাবাদী’ হয়ে বসে থাকলে হবে না, তখন তার সকল প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে তার ‘স্বকীয়বাদী’ সত্তাকে জাগ্রত ও প্রতিষ্ঠিত করার মধ্যে দিয়ে। আমেরিকা সেই চেষ্টা জারি রাখতে সফল ও সার্থক হয়েছে বলেই তার বিশ্ব মোড়ল হয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। আমেরিকার এই ‘স্বকীয়তাবাদী’তা থেকে বাংলাদেশের কী করণীয়, কীভাবে সম্ভব, কোন পথে এগোতে হবে সেসবের নানাবিধ ফিরিস্তি উল্লেখিত হয়েছে আবুল মনসুর আহমদের ‘আত্মকথা’য়। এ কারণেই ‘আত্মকথা’র যথার্থ পাঠ, উপলব্ধি ও তার অপুপ্রেরণাদায়ী বার্তাসমূহ বাস্তবায়ন করা জরুরি।
‘আত্মকথা’য় ‘স্বাতন্ত্র্য-বোধের উন্মেষ’ উপশিরোনামে আবুল মনসুর আহমদ লিখেছেন: ‘‘মার্কিনীদের ভাষিক-সাহিত্যিক স্বাতন্ত্র্য লাভে দেড়শ বছরের বেশি সময় লাগিলেও দু-চার জন মার্কিনীর মধ্যে সে চৈতন্য-স্ফুরণ ঘটিয়াছিল খুব দ্রুত গতিতেই। এঁদের মধ্যে সকলের আগে নাম করিতে হয় ওয়েবস্টারস ডিক্শনারির রচয়িতা নোআ ওয়েবস্টারের। যদিও তিনি তাঁর রচিত ডিক্শনারি প্রকাশ করেন ১৮২৮ সালে; কিন্তু তাঁর চল্লিশ বছর আগেই ১৭৮৯ সালে তাঁর ‘ইংরাজি ভাষা সম্বন্ধে বিশেষ বক্তব্য’ ‘ডিসার্টেশন অন ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ’ নামক নিবন্ধে বহু তথ্যপূর্ণ যুক্তি দিয়ে এই উপসংহার টানিয়াছিলেন: ‘কতিপয় অবস্থা-গতিক ভবিষ্যতে ইংরাজি ভাষা হইতে মার্কিন ভাষার পৃথকীকরণ আবশ্যক ও অনিবার্য করিয়া তুলিবে।’ এই নিবন্ধ প্রকাশের চল্লিশ বছর পরে ওয়েবস্টার ১৯২৮ সালে তাঁর বিশ্ববিখ্যাত অভিধান প্রকাশ করেন। এই অভিধানে তিনি ইংরাজি ভাষায় অপ্রচলিত বহু মার্কিন শব্দ অন্তর্ভুক্ত করেন।’’ (পৃষ্ঠা- ২৬৬)
‘ওয়েবস্টারের দৃঢ়তা’ উপশিরোনামে তিনি আরও বলেন, ‘‘‘কিন্তু তার আগেই ১৮০৬ সালেই নোআ ওয়েবস্টারের প্রতিবাদে বেশ কিছু মার্কিন সাহিত্যিক কলম ধরেন। তার মধ্যে ডেভিড ব্যাসনে ওয়েবস্টারকে লেখেন : ‘‘দুর্ভাগ্যবশত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের ভাষার মধ্যে এমন কোনো মিল ও মিলন নাই যাতে একটা ঐক্যবদ্ধ মার্কিন ভাষা হইতে পারে।’’ মার্কিন জাতির নিজস্ব ভাষা সৃষ্টির নব উদ্যম অঙ্কুরে বিনাশ করিবার এমন চেষ্টা অনেকে করিয়াছিলেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও জিলার ভাষিক বৈচিত্র্যকে ঐক্যবদ্ধ ‘ঢাকাইয়া বাংলা’ সৃষ্টির দূরপনের প্রতিবন্ধক আখ্যা দিয়া ‘কোলকেতেয়ে বাংলাকেই’ আমাদের সাহিত্যের ভাষা রাখিবার যুক্তি যাঁরা দেন, তাদের জুড়ি উনিশ শতকের আমেরিকাতে অনেক ছিলেন। ‘এঁদের লক্ষ্য করিয়াই ১৮১৭ সালে জেমস্ পলভিং লিখিয়াছিলেন : ‘এঁদের হাতে মার্কিনী ছাপা কোনো পুস্তক পড়িলেই তার ভালো দিক চাপিয়া গিয়া এঁরা শুধু খারাপ দিকই করিয়া দেখাইয়া থাকেন।’
এ সব প্রতিবন্ধকতা সত্তেও নোআ ওয়েবস্টার ১৮২৮ সালে তাঁর বিপ্লব সৃষ্টিকারী ডিকশনারি প্রকাশ করেন। এই সালেই এণ্ড্রু জ্যাকসন যুক্তরাজ্যের (যুক্তরাষ্ট্রের) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জ্যাকসন ছিলেন গোড়া মার্কিন স্বকীয়তাবাদী। স্বাধীন মার্কিন যুক্তরাজ্যের (যুক্তরাষ্ট্রের) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও রাষ্ট্র-দার্শনিক তৃতীয় প্রেসিডেন্ট টমাস জেফার্সন তাঁর জীবন সায়াহ্নে ১৮২১ সালে লেখেন : ‘ইংরাজি ও মার্কিন কালচার সম্পূর্ণ পৃথক। আমাদের কালচার বিকশিত হইতে পারে কেবলমাত্র আমাদের নিজস্ব ভাষাতেই।’ এ সময় ইমার্সন তাঁর অসাধারণ সৃজনশীল ও ঊর্বর কলম লইয়া মার্কিন স্বকীয়তার পক্ষে মাঠে নামেন। ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেনস্ মার্কিনী ইংরাজির বিদ্রূপ করিয়া কতিপয় চরিত্র সৃষ্টি করেন। আর বলেন যে, আমেরিকানরা ঐ রূপ অমার্জিত ভালগারিযমকেই ইডিয়ম মনে করে। ১৮৪২ সালের ‘জার্নালে’ ইমার্সন ডিকেনসের রচনার ও মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন : ‘যদিও আমেরিকানরা বাস্তব জীবনে তাদের কথাবার্তায় অমন ভাষা ব্যবহার করে না, তথাপি মি. ডিকেনস্ এখান-ওখান হইতে দু-চারটা অমার্জিত শব্দ যোগাড় করিয়া উহাই মার্কিন চরিত্রগুলির মুখে ঢুকাইয়া দিয়া মার্কিনীদের ভাষার ক্যারিকেচার করিয়া থাকেন।’’’ (পৃষ্ঠা : ২৬৬-২৬৭)
আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব। বিবিধ পেশায় বর্ণিল ছিল তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি। যার পরতে পরতে ও বাঁকে বাঁকে রয়েছে শিক্ষণীয় সব বারতা। পেশায় ছিলেন তিনি রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক-সম্পাদক ও আইনজীবী। লেখালেখিতে সৃজন ও মনন দুই ধারাতেই ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। তাঁর আত্মজীবনী ‘আত্মকথা’য় বহতা জীবেনের বিষয়সমূহ উঠে এসেছে নানাভাবে। বিদ্যায়তনিক ক্ষেত্রে ছিলেন দর্শনের শিক্ষার্থী। জীবনের সব ক্ষেত্রে দার্শনিকবোধের পরিচয় দিয়েছেন। একজন দর্শনের শিক্ষার্থীর সব থেকে বড়ো গুণ হলো সব কিছু তিনি যুক্তি ও কারণ দিয়ে বুঝতে চাইবেন এবং সহজাতভাবে থাকবে প্রশ্ন করার কুশলী গুণপনা। আবুল মনসুর আহমদ এই গুণ ও বৈশিষ্ট্যের কিছুটা পেয়েছিলেন জন্মগতভাবেই, কিছুটা পরিবার থেকে, কিছুটা প্রকৃতি ও পরিবেশ থেকে, কিছুটা বিদ্যায়তনিক প্রতিষ্ঠান থেকে এবং বাকীটা ছিল তাঁর নিজস্ব অর্জন। জন্মগতভাবে পাওয়া বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি দেখা গেছে কৈশোরেই। কিশোর বয়স থেকেই তিনি সব কিছু যুক্তি দিয়ে দেখার চর্চা রপ্ত করেছেন। এ কারণে পারিবারিক, সামাজিক, বিদ্যায়তনিক, প্রাতিষ্ঠানিক, পেশাগত, রাষ্ট্রীয়, দৈশিক ও আন্তর্জাতিক সকল ঘটনাসমূহকে তিনি বিবেচকের দৃষ্টি দিয়ে যেমন দেখেছেন, তেমনই যুক্তির আলোকে প্রকৃত সত্য অন্বেষণপূর্বক ন্যায়ের প্রতি পক্ষপাত জারি রেখেছেন। ন্যায্যতার শক্তিতে তিনি বিশ্বাস করতেন। সেই শক্তির বলে সমাজ-রাষ্ট্র থেকে শুরু করে যাপিত জীবনের সকল পর্যায়ে নৈতিকতার চর্চা ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন, স্বপ্ন দেখেছেন।
যুক্তির সঙ্গে আবুল মনসুর আহমদের বোঝাপড়া ছিল ঈর্ষণীয় ও অনুসরণযোগ্য। তিনি ধর্ম বিশ্বাস থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্বাস, সামাজিক বিশ্বাস, পেশাগত বিশ্বাস, প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্বাসসহ সব কিছুই বুঝতে চেয়েছেন যুক্তি দিয়ে, কার্যকারণের সুতোয়। একজন যুক্তিবাদী মানুষ কেমন হয়, কেমন হতে পারে- আবুল মনসুর আহমদ তার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত। আর সেই উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্তের আকর বই ‘আত্মকথা’। প্রাইভেট লাইফ ও পাবলিক লাইফ সম্পর্কে লেখকের যে বোঝাপড়া ও উপলব্ধি তাতে চিন্তাশীল যে কোন ব্যক্তির জন্যই রয়েছে সবিশেষ ভাবনার খোরাক।
আবুল মনসুর আহমদ ‘আত্মকথা’ শেষ করেছেন এভাবে, ‘প্রাইভেট লাইফে আমি সবুরী। পাবলিক লাইফে আমি গণতন্ত্রী। উভয় জীবনেই উচ্চাশা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর দশজনের মতোই আমার ছিল। কিন্তু তার যতোটুকু আমার পূর্ণ হইয়াছে, তাতেই আমি তৃপ্ত। আমার পাওয়ার যতটুকু আমি পাইয়াছি, তাতেই আমি সন্তুষ্ট। আমার প্রাপ্যের পরিমাণ, আমার যোগ্যতার পরিমাপ ও আমার অধিকারের সীমানা উপরের অদৃশ্য শক্তির অসীম জ্ঞান যে-যেখানে নির্ধারণ করিয়াছে, সেটাই নিশ্চয় ঠিক। এই উপলব্ধি হইতে আমার বেশি সময় লাগে নাই এটা বোধহয় আমার সহজাত। আমার বাপ-মা ও দাদা-দাদিকে আমি এমনি সবুরী পাইয়াছিলাম। আমাদের এটা নাই, ওটা হইল না, এ ধরনের কথা তাঁদের মুখে শুনি নাই। যৌবনে স্ত্রীর মুখে এবং বার্ধক্যে ছেলেদের মুখেও ঐ ধরনের কথা শুনি নাই। আমার ব্যক্তিগত তৃপ্তি ও সন্তুষ্টিই যেন আমার সংসারের আবহাওয়া।
কিন্তু পাবলিক লাইফে ব্যক্তিগত সবুরে চলে নাই। গণতান্ত্রিক উপলব্ধির দরকার হইয়াছে। সে জীবনেও আমার ব্যক্তিগত মর্যাদা প্রাপ্যধিকই পাইয়াছি। কিন্তু পাবলিকের জন্য কি পাইয়াছি? দেশ, জাতি ও কৃষক-শ্রমিকদের মুক্তির জন্য যে সব কথা বলিয়াছি। ও লিখিয়াছি, ওয়াদা করিয়া মেম্বর-মন্ত্রী হইয়াছি, সেগুলি ত আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়। ও-সবে ত আপোস করিবার, অল্পে তুষ্ট হইবার কোনো অধিকার আমার ছিল না। তবু তৃপ্ত হইলাম এই উপলব্ধিতে যে ও-সব প্রচারেই আমার অধিকার। প্রয়োগে নয়। এটাই গণতন্ত্র। আমার নির্দেশিত পথটা যতই ঠিক হউক, জোর করিয়া তা প্রয়োগ করা যাইবে না। করিলে সেটা হইবে ডিক্টেটর-শিপ। ডিক্টেটররা পরিণামে জনগণের কল্যাণ করেন না। ক্ষমতার লোভেই তাঁরা ক্ষমতা খাটান। জনতার জিন্দাবাদ- ধ্বনির লোভ বড় লোভ। ব্যক্তিজীবনে ধন-লোভের তৃপ্তি নাই। রাষ্ট্রজীবনে ক্ষমতা লোভেরও তৃপ্তি নাই। ডিক্টেটররা ক্ষমতা ছাড়িতে এবং রাষ্ট্র-নেতারা রিটায়ার করিতে পারেন না, এই কারণে। সব জীবনের এটাই চরম শিক্ষা।’ (পৃষ্ঠা-৩৮১, ৩৮২)
টিরোসিয়াস ছিলেন ত্রিকালদর্শী, আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর উপমহাদেশের ত্রি-ভূগোলদর্শী কিংবা ত্রিদেশদর্শী একজন প্রতিভা। ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ার শেষের তিন দশক, পাকিস্তানের দুই যুগ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রায় এক দশকে সংঘটিত সকল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তিনি। কেবল প্রত্যক্ষদর্শী নন, কোনো কোনো ঘটনার ভেতর-বাহির ও আতুঁড়ঘরেরও সাক্ষী। ময়মনসিংহের সাধারণ পরিবারের একজন বালক ইতিহাসের এমনসব ঘটনাবলীর মধ্যে দিয়ে গেছেন এবং এমনসব অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হয়েছেন; যা যে কোনো মানুষের জন্য অভাবিত ও অপূর্ব, সৌভাগ্যের পরিচায়কও বটে। আবুল মনসুর আহমদ প্রজ্ঞা, নিষ্ঠা ও যুক্তি দিয়ে সময় জয় করেছেন-পরিপার্শ্বকে ন্যায্যতা দিয়ে আলোকিত করেছেন। কীভাবে এসব অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তার বয়ান রয়েছে, ‘আত্মকথা’র পৃষ্ঠাজুড়ে।
‘আত্মকথা’ আবুল মনসুর আহমদের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বই, সম্ভবত কম পঠিত। আবুল মনসুর আহমদ বলতেই অনেকেই ‘আয়না’, ‘ফুড কনফারেন্স’, ‘হুযুরে কেবলা’, ‘গালিভারের সফরনামা’, ‘সত্যমিথ্যা’, ‘জীবন ক্ষুধা’, ‘আবে হায়াৎ’, ‘বাংলাদেশের কালচার’, ‘শেরেবাংলা হইতে বঙ্গবন্ধু’, ‘বেশী দামে কেনা কম দামে বেচা আমাদের স্বাধীনতা’ প্রভৃতিকে বইয়ের লেখককে বুঝি। এসবের সঙ্গে গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখিত হয় আরও একটি বইয়ের কথা, ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’। ভারত উপমহাদেশ তথা ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ সময়কে ধারণ করেছে বইটি। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির বঙ্কিমতাকে বোঝার জন্য যা পাঠের কোনো বিকল্প নেই। বিংশ শতকের পাঁচ দশকের সর্বাধিক আলোড়িত ঘটনাসমূহকে আধেয়কারী বইটি সমাজ-রাজনীতিতে আগ্রহী সকলের জন্যই বিশেষ প্রয়োজনীয়।
আবুল মনসুর আহমদের লেখালেখি ও গ্রন্থমূল্য বিচারের বাস্তবতায় দেখা যায়, ‘আত্মকথা’ সেভাবে আলোচিত বা পঠিত নয়। এরকম একটা বইয়ের গুরুত্ব উন্মোচিত না হওয়া এবং বইয়ের ভেতরের মণি-মানিক্য, হীরে-জহরত অনাবিষ্কৃত থেকে যাওয়া আমাদের সবার জন্য বিশেষভাবে বেদনার। আবুল মনসুর আহমদের সকল বইয়ের গুরুত্ব স্বীকার করে একথা কোনপ্রকার সংশয় ও দ্বিধা না রেখেই বলা যায় যে, ‘আত্মকথা’ তাঁর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠ বই।
স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের জাতীয় কবি আছেন, জাতীয় সংগীত রয়েছে; যা আমাদের জন্য সবিশেষ গর্ব-গৌরব ও অহঙ্কারের ধন। একইভাবে রয়েছে আমাদের জাতীয় পাখি, জাতীয় মাছ, জাতীয় ফল, জাতীয় ফুল প্রভৃতি। কিন্তু আমাদের জাতীয় গ্রন্থ নেই। যৌক্তিক ও যথার্থ কারণেই ‘আত্মকথা’ জাতীয় গ্রন্থের মর্যাদা প্রাপ্তির দাবি রাখে। আমাদের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ বলে কি আমরা অন্য সংগীত গাই না, ভালোবাসি না? অবশ্যই গাই, অবশ্যই ভালোবাসি। কিন্তু ‘আমার সোনার বাংলা’কে বেশি করে ভালোবাসি। কারণ এই গান আমাদের আবেগ, দেশপ্রেম, আমাদের প্রকৃতি-পরিবেশ এবং এই মাটির রূপ রস সৌন্দর্য গভীরভাবে ধারণপূর্বক তার উচ্চকিত প্রকাশ ঘটিয়েছে। ‘আত্মকথা’ও ঠিক এ রকম কারণেই ‘জাতীয় গ্রন্থ’র মর্যাদা প্রাপ্তির দাবি রাখে। কেন? সংক্ষেপে দশটি কারণ হাজির করে বিষয়টা খোলতাই করার চেষ্টা করি।
এক. ‘আত্মকথা’ আমাদের দেশপ্রেমিক হওয়ার শিক্ষা দেয়। দেশপ্রেম কেবল আবেগসর্বস্ব শব্দবন্ধ নয়। এর গভীরে নিহিত রয়েছে দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যনিষ্ঠা। এসবের তাৎপর্যবাহী শিক্ষা রয়েছে বইটির পৃষ্ঠাজুড়ে।
দুই. বইটি পাঠককে অসাম্প্রদায়িক হওয়ার সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগায়। একজন মানুষ কীভাবে যুক্তিশীল হয়ে উঠতে পারে এবং যৌক্তিক মানুষ হওয়া কেন জরুরি, তার রসদ রয়েছে ‘আত্মকথা’র শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।
তিন. একজন মানবিক মানুষের সমাজ-রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানে কীরূপ ভূমিকা পালন করা উচিত তার মৌলিক পাঠ রয়েছে এখানে। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত কেমন বাধা আসে, আর সেসব উতরানোর সূক্ষ্ণ ও গভীরতর পর্যবেক্ষণও রয়েছে এখানে।
চার. শিক্ষাজীবনে নৈতিকতা ও বিবেচনাবোধের চর্চা কীভাবে করতে হয় আবুল মনসুর আহমদ সেসবের বিবিধ পাঠ ও অভিজ্ঞতার নির্যাস তুলে ধরেছেন ‘আত্মকথা’য়।
পাঁচ. একজন আইনজীবী পেশার সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে কীভাবে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশের সেবা নিশ্চিত করতে পারে তার পাঠ হাজির করেছে আলোচ্য বই।
ছয়. একজন সাংবাদিক-সম্পাদক কীভাবে সাংবাদিকতা দিয়ে দেশ ও জাতির সংকটে আলোকবর্তিকা হয়ে উঠতে পারেন বইটিতে তার নজির রয়েছে। সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠান কীভাবে প্রাতিষ্ঠানিক চাওয়া-পাওয়াকে ভরকেন্দ্রে রেখে এবং সেসব হাসিল করেও সাংবাদিকতার দায় ও দায়িত্ব পালন করতে পারে সেসবের নজির জারি রয়েছে লেখকের জীবনাভিজ্ঞতার আলোকে।
সাত. স্বাধীন দেশের নাগরিকের জন্য কেন ‘স্বকীয়বাদী’ হয়ে ওঠা জরুরি তার যুক্তি, তর্ক ও প্রয়োজনিয়তা সবিশেষ বিশ্লেষণপূর্বক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উপস্থাপিত হয়েছে বইটিতে।
আট. মানুষের দাম্পত্য জীবন কেমন হওয়া উচিত। কেমন হলে দাম্পত্য মধুর হয়ে উঠতে পারে, যাপিত জীবনের সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে ‘আত্মকথা’য় তার বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধানী পর্যবেক্ষণ রয়েছে। প্রাইভেট লাইফ ও পাবলিক লাইফের ফারাক কোথায়-কেমন এবং দায়িত্বের আধার দু’ক্ষেত্রে কেমন হওয়া উচিত তারও চিন্তাগ্রাহ্য আলোচনা ও চিত্তাকর্ষক সমাধান রয়েছে ‘আত্মকথা’য়।
নয়. নৈতিকতা ও ন্যায্যতা চর্চার কেন বিকল্প নেই। কেন জীবনের সব স্তরে এসবের গুরুত্ব শিরোধার্য তার সুলুকসন্ধানী মূল্যায়ন ও অভিমত রয়েছে বইটিতে। কেন এই বই একটা জাতির বা দেশের নাগরিকের জন্য নির্দেশিকা স্বরূপ সেই প্রশ্নেরও যথোচিৎ অনুসন্ধান জারি রয়েছে বইটিতে।
দশ. আবুল মনসুর আহমদের ‘আত্মকথা’ পাঠককে প্রশ্ন করতে শেখায়। প্রশ্নের গুরুত্ব অনুধাবন করায়। প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে জীবনকে সমৃদ্ধ ও অমৃতমোহন করে তোলা যায়, তার দীর্ঘ পরিভ্রমণ ও অভিজ্ঞতার আলোকবাহী বার্তা রয়েছে বইটিতে।
‘আত্মকথা’য় বিবেচনাবোধের প্রয়োজনিয়তা ও তার সুফল কেমন হয় তার বাস্তব উদাহরণ রয়েছে। মানবিকতাবোধে উজ্জীবিত, নৈতিক শিক্ষায় আলোকিত, ন্যায্যতার প্রশ্নে আপসহীন হওয়ার এবং মানুষ হিসেবে জীবনের নানান পর্যায়ের বিবিধ ক্ষেত্রে কেমন ভূমিকা পালন করতে হয়, কেমন দায়িত্ববোধ থাকা প্রয়োজন, তার ধারাপাত জারি রয়েছে আবুল মনসুর আহমদের ‘আত্মকথা’য়। এর অনেকগুলি অনন্য বৈশিষ্ট্যের একটা হলো, এখানে লেখকের জীবনাভিজ্ঞতা উপস্থাপিত হলেও পর্যবেক্ষণশক্তি গুণে এ গল্প অন্যকেও আবিষ্ট করে। অপরের দায়িত্ববোধ কী হতে পারে তারও একটা দায় উস্কে দেয়। অন্ধভাবে কাউকে কিংবা কোনকিছুকে অনুসরণ, অনুকরণ বা বিশ্বাস স্থাপনের পরিবর্তে নিজের যুক্তি, জিজ্ঞাসা, পর্যবেক্ষণকে শাণিত করার চর্চা জারি রাখতে হয় কীভাবে তার সুলুকসন্ধান রয়েছে ‘আত্মকথা’য় । যা পাঠে আবিষ্কৃত হয় আমরা কীভাবে একজন পূর্ণাঙ্গ ‘মানুষ’ হয়ে উঠব তার মৌলিক ব্যাকরণ। খোলতাই হয় দেশপ্রেম, গণতন্ত্রবোধ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রপঞ্চগুলোকে গভীরভাবে আত্মস্থ করার এবং স্বকীয়বাদী হয়ে ওঠার গায়ত্রী মন্ত্রকে পূণ্যজ্ঞানে অধ্যয়নপূর্বক বাংলাদেশের পথরেখা নির্মাণের।
লেখক : চিন্তক, সাংবাদিক ও গবেষক