মদের দোকান পার্ল হারবার। বসে মদ খাওয়ার সুবন্দোবস্ত আছে। ড্রেস কোড নাই। যতবার রিমাইন্ডার দিয়েছে, ততবার মিস্টার নাভিদ বলেছে পিন্টোকে। ড্রেস কোড নাই! ড্রেস কোড নাই! ‘দ্যান ইটস্ ওকে’ করেছে পিন্টো। ড্রেসকোডঅলা ক্লাব বারে সে যায় না। সতর্কতা। ড্রেসকোড! ক্লাব না কলোনির উপাসনালয়? কলোনির ভূত কলোনি ছাড়ে নাই এখনও। পিন্টো থাকে নবাবপুর রোডের হোটেল ইয়েমেন ইন্টারন্যাশনালে। আট বছর ধরে আছে। ছেচল্লিশ নাম্বার রুম, চারতলায়। মিস্টার নাভিদ মানুষ না রোবট? কল দিয়েছিল ঠিক ছয়টায়। ‘মিস্টার পিন্টো, স্যার।’ ‘মিস্টার নাভিদ।’ ‘আমি আপনার হোটেলের নিচে একটা মাইক্রোওয়েভ ওভেনে বসে আছি মিস্টার পিন্টো, স্যার।’ ‘মাইক্রোওয়েভ ওভেন!’ ‘মাইক্রোবাস মিস্টার পিন্টো, স্যার।’ ‘এটা কি রসিকতা মিস্টার নাভিদ?’ ‘আপনি রসিকতা পছন্দ করেন মিস্টার পিন্টো, স্যার?’ ‘কাজের সময় না।’ ‘দ্যান এটা রিয়েলিটি মিস্টার পিন্টো, স্যার। ঢাকা সিটির টেম্পারেচার আজ থার্টি এইট পয়েন্ট ওয়ান। মাইক্রোবাস জলন্ত মাইক্রোওয়েভ ওভেন হয়ে আছে।’ হোটেল ইয়েমেন ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার লুৎফল হক পিন্টোকে দেখল। নাকি দেখল না? পার্ল হারবার, আইডেনটিটি, টপসি-টারবিজ, মুনওয়াক, এই সমস্ত মদের দোকান কয়েকবছর হলো হয়েছে। আবাসিক ফ্ল্যাটে অ্যারেঞ্জমেন্ট। নিরালা এবং গোপনীয়তা গ্যারান্টেড। মিস্টার নাভিদ অন্দরমহলে এন্ট্রি নিয়েছে। বসিয়ে রেখে গেছে পিন্টোকে। ‘দুই মিনিট মিস্টার পিন্টো, স্যার।’ আধ মিনিট গেছে। পিন্টো কল দিলো লুৎফল হককে, ‘লুৎফল পক।’ লুৎফল হক বলল, ‘ভাই।’ ‘ছেচল্লিশ নাম্বার রুমে কে থাকে লুৎফল পক?’ ‘কে থাকে ভাই?’ ‘কেউ থাকে না। আট বছর ধরে কেউ থাকে না।’ ‘ভাই।’ ওয়াইন গ্লাস, ওয়াইন ওপেনার আর দুই বোতল শাদা ওয়াইন রেখে গেল এক বঙ্গললনা। পরনে ঢাকাই শাড়ি, কপালে লাল টিপ। কী ওয়াইন? পার্ল হারবার। হ্যান্ড পেইন্টেড বোতল। হোমমেইড ওয়াইন। দুই মিনিট ঠিক দুই মিনিট। মিস্টার নাভিদ ইন্ট্রোডিউস করল তেলাপোকার ফ্যাকসিমাইল কপি এক ব্যক্তিকে। ‘মিস্টার পিন্টো, স্যার, এফ. আহমেদ।’ হ্যান্ডশেক করল না। পিন্টো হাসল, ‘এফ ফর?’ ‘সরি মিস্টার পিন্টো, স্যার?’ ‘এফ ফর ফাকড্?’ ‘মাই প্লেজার মিস্টার পিন্টো, স্যার।’ মিস্টার নাভিদ দূরীভূত হলো। পিন্টো মিটমিট করে হাসল, ‘পার্ল হারবার ওয়াইন। পার্ল-হার-বার!’ বঙ্গললনা আবার আবির্ভূত হলো। কেইট-স্পেড ফ্র্যাগনেন্স। একটা ওয়াইনের বোতল খুলল। গ্লাসে ঢেলে দিয়ে আবার অন্তর্হিত হলো। নিঃশব্দ প্রক্রিয়া। নিরালা। তাই বলে এতো? তারা ওয়াইনের গ্লাস নিল। চিয়ার্স করল। পার্ল হারবার ওয়াইন চমৎকার। তেলাপোকার ফ্যাকসিমাইল কপি বলল, ‘দেখা তবে হলো।’ পিন্টো বলল, ‘দেখা হতোই।’ ‘পিন্টো তুই। আলবার্ট পিন্টো।’ ‘তুই ফাকড্, মরে যাস নাই?’ ‘আমি মরে যাবো? কেনরে পিন্টো? ভুন্দাটা যখন তোকে কানেক্ট করতে পারল আমি ভাবি নাই তুই আসবি এখানে?’ ‘আসব না কেন? তোকে দেখব না? ভুন্দা কে? মিস্টার নাভিদ যন্ত্রমানব?’ ‘হ্যাঁ নাভিদ। এফিশিয়েন্ট ভুন্দা। তোকে জোগাড় করে দিতে পেরেছে। ওয়াইন খা।’ ‘হ্যাঁ, মিস্টার নাভিদ করিৎকর্মা ব্যক্তি। তুই এর পেছনে আছিস, টাচ উড আমি বুঝতে পারি নাই।’ ‘টাচ উড! হা হা হা! টাচ উড!’ ‘তোর হাসি এখনো কুৎসিত। করোনা ভাইরাসের মতো কুৎসিৎ।’ ‘চুপ কর। ওয়াইন খা।’ ‘পার্ল হারবার ওয়াইন কে বানায়?’ ‘ভালো জিনিস।’ পিন্টো তাকালো। এফ. আহমেদ বলল, ‘যে বানায়। খাবি? হা হা হা!’ পিন্টো বলল ‘বঙ্গললনা?’ ‘চুপ কর। আর কথা বলবি না।’ চুপ। দুই বোতল পার্ল হারবার ওয়াইন তারা শেষ করে দিল দুই ঘণ্টায়। ট্রিপি ওয়াইন। আনারস, ইস্ট ছাড়াও কিছু দিয়েছে। ধরেছে পিন্টোকে। হ্যালুসিনেটিং কিছু হতে পারে। এফ. আহমেদ কী প্রজেক্ট করেছে? এখানে খুন করবে পিন্টোকে? কখন? এখন? এফ. আহমেদ বলল, ‘তোকে আমি খুন করব পিন্টো। তবে এখন না। এখন সিগার কাটার দিয়ে আমি তোর কয়টা আঙুল কেটে ফেলবো।’ ‘অ। হাতের আঙুল না পায়ের আঙুল?’ ‘হাতের আঙুল। ডান হাতের। তুই রেডি?’ পিন্টো রেডি। ব্লেজারের পকেট থেকে একটা সিগার কাটার বের করল এফ. আহমেদ। সিগারেট, সিগার, সিগারেলো খায় না, সিগার কাটার রাখে পকেটে। শালা ফাকড্। ‘আশা করি ত্যাঁদরামি করবি না। আমার কভার আছে তিনজন। ছয়টা বুলেটে তোর নাম লেখা আছে। সো বয়, কিপ কোয়ায়েট। হাত রাখ। টেবিলে হাত রাখ।’ ধরেছে পিন্টোর, আরো ধরেছে। বিনাবাক্য ব্যয়ে টেবিলে হাত রাখল সে। এফ. আহমেদ বিনাবাক্য ব্যয়ে ডান হাতের মধ্যমা কেটে নিল তার। কট করে একটা শব্দ হল শুধু। টেবিলে রক্ত পড়ল। পিন্টো আর্তনাদ করে উঠল না। এফ. আহমেদ পরের আঙুলটা কাটল। অনামিকা। পিন্টো আর্তনাদ করল না। এফ. আহমেদ পরের আঙুলটা কাটল। তর্জনী। পিন্টো দেখল। এফ. আহমেদ পরের আঙুলটা কাটল। বৃদ্ধাঙ্গুলি। পিন্টো দেখল। এফ. আহমেদ পরের আঙুলটা কাটল। কনিষ্ঠা। টেবিল লাল। পিন্টো তার আঙুল ছাড়া ডানহাত দেখল। বলল, ‘হয়ে গেল?’ এফ. আহমেদ বলল ‘আপাতত।’ পিন্টো বলল, ‘আমি তবে যাই।’ ‘যা। নাভিদ আবার কানেক্ট করবে তোকে। কিংবা আর কেউ। সেদিন আমি তোকে খুন করব। যা।’ পিন্টো উঠল, ফ্ল্যাটের দরজা পর্যন্ত যায় নাই, তীক্ষ্ম আর্তনাদ করে উঠল এফ. আহমেদ। কী হয়েছে? পিন্টো ঘুরে দেখল, এফ. আহমেদ তার ডান হাত দেখছে। পাঁচ আঙুল কাটা ডান হাত। কীভাবে কাটল? কে কাটল? পিন্টো দরজার হাতলে ডান হাত রাখল। পাঁচ আঙুল সমেত ডানহাত। এফ. আহমেদ বিস্ফারিত চোখে দেখছে পিন্টোকে। পিন্টো কে? আলবার্ট পিন্টো।