শিল্প ও সাহিত্য

দু’টি কবিতা

সুগন্ধী সাবান

কবিতা লেখার খাতা বন্ধক রেখে উড়িয়ে এনেছি আমি সুগন্ধী সাবান এই পতিতা পাড়ায়। মেয়েদের ঘরে ঘরে সাবান বিতরণ করি। রোজই কলের তলায় বালতি রেখে গোসল করে তারা। তাদের শরীরে ঘষা সাবানের ঘ্রাণে প্রত্যেক সন্ধ্যায় আকাশ থেকে খসে পড়ে দু’একটা নক্ষত্র। মেঘহীন আকাশে বিদ্যুত চমকায়। আমি স্পষ্ট দেখতে পাই, ওদের বাড়ি; সিঁড়িতে রেলিং নেই। বিছানার পাশে ঝোল-তরকারি মাখা ভাতের আড়ষ্ট থালা, ছাদে শুকাতে দেয়া স্তনবেষ্টনী।  আমি কবি, মন্ত্র পড়ে ঘাসকে ফড়িং বানাই, ফড়িংকে ঘাস। কখনো খুব অবহেলা করে সাদা আলোকেও অন্ধকার। সাবান কিনতে গিয়ে আমি কবিতার খাতা বন্ধক রেখেছি মুদির দোকানে। দোকান থেকে তারা সাবানের সাথে দিয়েছে আমাকে বাড়তি স্মৃতি, লাউ মাচা, পুকুরে মাছের ছায়া, কয়েকটা অভিমানসূচক শব্দ। এসব কোথায় লিখে রাখি বলো? সুগন্ধী সাবানের ঘ্রাণে রোজ আকাশ থেকে খসে পড়ছে দু’একটা নক্ষত্র। রোজ রোজ খানিকটা আগুনের স্বাদ। কবিতা লেখার খাতা ওরা ফিরিয়ে দেবে তো বন্ধকীর কাল শেষ হয়ে গেলে?

 

মফস্বলে

আরেকটা দিন বেশি থেকে যাবে তুমি এই খবরটা শুনে মনে হলো, আজকাল সুসংবাদ কম পাওয়া যায়। পাশাপাশি বাসা। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে কার্নিশ বদল করে একলা শালিক। অথচ আমাদের দেখা হয় না প্রায় একশ বছর। কতদিন পরে এলে তুমি এই মফস্বলে! তোমাদের বহুকাল একলা বাড়িটা জমা সব ধূলো সরিয়ে রেখে কেমন নরম গলায় বলে উঠলো-এসো। বন্ধ ঘরে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে থাকা হাওয়ার বিষণ্ন শরীর বলে উঠলো- এসো।   কতদূর থেকে এলে, বার্লিনে কি এখনও তুষার ঝরছে? জানো, আমি কোনোদিন তুষার ঝরতে দেখিনি! তবে নক্ষত্র ঝরে পড়তে দেখেছি। অনেক অনেক নক্ষত্র বাতাসের ঘর্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে আবার বাতাসেই উড়ে যাচ্ছে। ভেবেছি, তুমি আরেকটা দিন বেশি থেকে গেলে চুয়ান্ন নম্বর বাড়ির ঠিকানায় চিঠি লিখবো আবার। বাতাসে কাঁপবে মাছ-ধরা শুকনো জাল। যে হাওয়া জাদুমৃত্যু নিশ্চিত করে তা কি দু’একটা শিউলি ঝরিয়েছ কোনোদিন? আজ আষাঢ় মাসের দ্বিতীয় তারিখ। ঘুম থেকে উঠে দেখি, তোমার ঘরের জানালা খোলা, স্মৃতির পর্দা উড়ছে তাতে। পুরনো প্রেমের গল্প শুনে মফস্বলে সচকিত হয় রিকশাওয়ালা। আমি রাতের পর রাত জেগে দেখি, আকাশে পুড়ে যাওয়া নক্ষত্রের ছাই উড়ছে অন্তরা।