আম্পানের পর ঝড় ও টানা বৃষ্টিতে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীসহ শাখা নদীগুলোতে পানি বেড়ে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ জেলায় ধান কাটার পুরো মৌসুম শুরু হতেই ঝড়ে পাকা ধান ঝরে মাটিতে পড়ে যায়। বৃষ্টিতে জমির ধান পানির নিচে ডুবে গেছে। ফলে বোরো ধান নিয়ে কৃষক যে স্বপ্ন দেখেছিল, তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তলিয়ে যাওয়া ধান ঘরে তুলতে শেষ মুহূর্তে মহাব্যস্ত কৃষকেরা। তবে শেষ পর্যন্ত ধান ঘরে তুলতে পারবেন কি-না, এ নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে তাদের মধ্যে।
শনিবার (৬ জুন) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জের চলনবিলসহ কাজীপুর, উল্লাপাড়া, তাড়াশ, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও সদরসহ চলনবিল অঞ্চলে শত শত বিঘা পাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে আছে। তলিয়ে যাওয়া ধান কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকেরা। জমিতে ডুবো ধান কেটে ঘরে তুলতে অতিরিক্ত খরচে বিপাকে আছেন তারা।
জেলায় ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে এবার বোরো ধান চাষ হয়েছে। ফসলি জমির বেশিরভাগই এখন সোনালি ধানে ভরা। আর মাত্র এক সপ্তাহ পরই গোলায় উঠতো এই ধান। করোনায় শ্রমিকের অভাবে তলিয়ে থাকা ধান কাটতে পারছেন না অনেকেই। কেউ কেউ ডুবে ডুবে ধান কাটছেন। ধান ঘরে তুলতে খরচ বাড়লেও স্থানীয় কৃষি দফতর থেকে কোনও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেক কৃষকেরাই।
তাড়াশ উপজেলার দবিরগঞ্জের কৃষক আব্দুল মান্নান হোসেন বলেন, ৬ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বোরো আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। প্রায় ১ বিঘা জমির ধান কয়েক দিন আগে কেটেছি। কিন্তু দু’দিনের মধ্যে ক্ষেতে পানি ঢোকায় বাকী জমির ধান তলিয়ে গেছে। শ্রমিকের অভাবে ধানগুলো কাটতে পারিনি।
মান্নান-নগর গ্রামের কৃষক জুলমাত হোসেন বলেন, ৩ বিঘা জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ২ বিঘা জমির ধান পানি থেকেই কেটেছি। পানিতে পোকার সমস্যা থাকায় শ্রমিকরা ধান কাটতে চাচ্ছেন না। ৫শ টাকার শ্রমিক এখন ১ হাজার টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে না। সময় ও খরচ বাড়লেও স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে আমরা এখন পর্যন্ত কোনও সহায়তা পাইনি।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বয়রা গ্রামের কৃষক আলতাব হোসেন বলেন, যমুনায় পানি বাড়ায় এলাকার নিচু জমি তলিয়ে গেছে। সবজি, পাট ও তিলের পাশাপাশি পাকা ধানও ডুবে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৪ লাখ ৭০ হাজার ২৫ মেট্রিক টন বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ লাখ ৪১ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৯ হাজার ৮শ ৬৫ হেক্টরে ৪৭ হাজার ৮শ ৯৭ মে. টন হাইব্রিড, ১ লাখ ২৯ হাজার ১০ হেক্টরে ৪ লাখ ১৭ হাজার ৭শ ৭৬ মে. টন উচ্চ ফলনশীল (উফশী) এবং ২ হাজার একশ ৬৫ হেক্টরে ৪ হাজার ৩শ ৫২ মে. টন লোকাল ভ্যারাইটি ধান।
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুল হক জানান, কারোনায় খাদ্য নিরাপত্তায় ধানের আবাদ বেশ গুরত্বপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও অতিবৃষ্টির কারণে নদ-নদী, খাল-বিলে পানি বাড়ায় কিছু জায়গায় ধান তলিয়ে গেছে। জেলার ৮৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। ১০-১২ দিনের মধ্যে বাকি ধান কাটা শেষ হবে। ডুবো ধান ঘরে তুলতে কৃষকদের অতিরিক্ত খরচ হবে। চলমান করোনায় প্রায় ৩ হাজার কৃষককে ৫ কেজি করে আমন ধানের বীজ প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। আগামীতে বেশকিছু কৃষকের সবজি খামার গড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। করোনায় স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি আমরাও মাঠে আছি। এ জেলায় প্রায় ১ লাখ ১৯ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি জানান। সিরাজগঞ্জ/অদিত্য রাসেল/সাজেদ