সিলেটে সুরমা-কুশিয়ারাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি কমছে ধীর গতিতে। সর্বশেষ ১২ ঘন্টায় নদ-নদীর পানি কয়েক সেন্টিমিটার কমলেও নামছে না বানের পানি।
ফলে তলিয়ে যাওয়া নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কমছে না। উল্টো কয়েক দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় আটকে থেকে নিরাপদ সুপেয় পানিসহ খাদ্য সংকটে ভুগছেন তারা।
অবশ্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দি ৫ উপজেলায় শুকনো খাবারসহ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ বলছে, সিলেটে সহসাই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। নদীর পানি কমলেও ১৯-২০ জুলাই নাগাদ ভারী বর্ষণসহ আরেক দফা বন্যার আশঙ্কাও রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর তথ্য অনুসারে, মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যেখানে সোমবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। সেই হিসেবে ২৪ ঘন্টায় এই পয়েন্টে পানি কমেছে ১৪ সেন্টিমিটার।
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমার সিলেট পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যেখানে একদিন আগে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে কুশিয়ারার আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার এবং কুশিয়ারার ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
এছাড়া সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্ট, কুশিয়ারার শেওলা পয়েন্ট, শেরপুর পয়েন্ট এবং লোভাছড়ায় পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। এসব পয়েন্টে গত ২৪ ঘন্টায় কয়েক সেন্টিমিটার পানি কমেছে বলে পাউবোর নদ-নদীর পানি প্রবাহ তথ্য বিবরণী থেকে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ শহীদুজ্জামান সরকার জানান, ‘সীমান্তের ওপারে ভারী বর্ষণ হলে সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা-সারিসহ সবকটি নদ-নদীতে পাহাড়ি ঢল নামে। বৃষ্টিপাত কম হলে পানির পরিমাণও কমে। গত ২৪ ঘন্টায় নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে।
এদিকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নদী তীরের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ৩৭টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। পাশাপাশি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের কিছু এলাকাও পানিতে প্লাবিত হয়েছে। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
গোয়াইঘাট উপজেলার ডৌবাড়ি গ্রামের আমিনুর রশীদ জানান, বন্যার কারণে তিনদিন ধরে তারা পানিবন্দি হয়ে আছেন। ঘরের মধ্যেও পানি। মহিলা ও শিশুদের নৌকা করে আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে পুরুষরা বাড়িতে রয়েছেন। পানির কারণে তারা বাহিরে যেতে পারছেন না, ফলে ঘরে শুকনো খাবার খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন। একই সাথে গবাদিপশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। বন্যার্তদের জন্য খোলে দেওয়া হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। এ পর্যন্ত বন্যা কবলিত ৩৭ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় ২২০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৫ লাখ টাকা ও সহস্রাধিক প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসক কাজী এম এমদাদুল হক বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করছেন। মঙ্গলবার দিনব্যাপী তিনি গোয়াইনঘাট উপজেলায় দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখেছেন। এসময় তিনি উপজেলার পশ্চিম আলীরগাঁও এবং পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নে দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণও করেছেন। নোমান/নাসিম