অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় মূল অভিযুক্ত ওসি প্রদীপসহ তিন আসামিকে ফের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শুক্রবার (২৮ আগস্ট) বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (কক্সবাজার-৪) তামান্না ফারাহ এর আদালত এ আদেশ দেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে আসামিদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বিকাল পৌনে ৩টায় আদালতে নেওয়া হয়।
মামলার তিন আসামি হলেন- টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত।
এর আগে গত ১৮ আগস্ট প্রথম দফায় সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয় তাদের। পরে গত ২৪ আগস্ট রিমান্ড শেষে আদালতে নেওয়া হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ‘মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে ওসি প্রদীপসহ মূল অভিযুক্ত তিন আসামির বিরুদ্ধে চার দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের এএসপি খাইরুল ইসলাম। আদালত উভয়পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি-তর্ক শোনার পর প্রত্যেককে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।’
একটি মামলায় ১৫ দিনের বেশি র্যাবের হেফাজতে থাকা আইনের পরিপন্থি উল্লেখ করে আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা বলেন, ‘আসামিরা আজ (শুক্রবার) পর্যন্ত ২০ দিন র্যাব হেফাজতে ছিলেন। পনেরো দিনের বেশি র্যাব হেফাজতে রাখা আইনের পরিপন্থি।’ আদালতে সবধরনের যুক্তি-তর্ক আসামিদের পক্ষে ছিলো মন্তব্য করে আসামিপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, ‘‘মেজর সিনহাকে ওসি প্রদীপ গুলি করেননি। ঘটনার সময় তিনি (ওসি প্রদীপ) ৩২ কিলোমিটার দূরে থানায় অবস্থান করছিলেন।
এজাহারে ওসি প্রদীপের ভাষ্যে বলা হয়েছে- ‘ঘটনার পর পর আমি (ওসি প্রদীপ) এসেছিলাম কীভাবে আসলেন? আমি কি এখানে (ঘটনাস্থলে) ছিলাম? আমি তো ছিলাম ৩২ কিলোমিটার দূরে, টেকনাফ থানায়। যদি নাও আসতাম, তাহলে কি বলা হত না ওসি প্রদীপ দায়িত্ব পালন করেননি?’ বলে উল্লেখ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা।
এ আইনজীবী বলেন, ‘ওসি প্রদীপের জামিন চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছিলো। কিন্তু আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করায় সেটির শুনানী অনুষ্ঠিত হয়নি। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন জানানো হবে।’
আদালতে রিমান্ড শুনানী শেষে ওসি প্রদীপসহ তিন আসামিকে র্যাব হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ নিয়ে তিন দফায় রিমান্ডের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আসামিরা। গত ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে ‘গাড়ি তল্লাশীকে’ কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট সিনহার বোন শাহরিয়ার শারমিন ফেরদৌস বাদী হয়ে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতসহ নয় পুলিশ সদস্যকে আসামি করে টেকনাফ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরদিন ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।