বৈদ্যুতিক মোটর কিংবা হাতের চাপ ছাড়াই নলকূপ থেকে ‘অলৌকিকভাবে’ বের হচ্ছে পানি। আর সেই পানি পান করলে দুরারোগ্য ব্যধি ভালো হবে এমন গুজবে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করছে।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের আনারুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির বাড়ির নলকূপ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি বের হচ্ছে। তবে এ পানি পানে রোগমুক্ত হওয়া যায় এমন তথ্য চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ধর্মীয় শাস্ত্রে নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
নলকূপের মালিক আনারুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক বছর আগে এখানে ছোট ছোট দুইটি ঘর করি। গত বছর বাড়িতে একটি নলকূপ বসাই। গত ৩-৪ দিন নলকূপের হাতলে চাপ না দিলেও অনবরত পানি পড়ছে। এ ঘটনায় আমি অবাক। তবে গত ২-৩ দিন থেকে রোগমুক্তির আশায় দূর দূরান্ত থেকে শত শত মানুষ এসে নলকূপের পানি নিয়ে যাচ্ছে। তবে এই পানি পানে রোগ ভালো হবে কি না আমি জানি না।’
মেহেরপুর শহর থেকে আসা বাবু নামে এক চায়ের দোকানদার বলেন, ‘আমি বেশ কয়েক বছর থেকে জটিল রোগে ভুগছি। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়ে খুব একটা ভালো কাজ হয়নি। লোকমুখে শুনে এখানে পানি নিতে এসেছি। খেয়ে দেখি কী হয়।’
গাংনীর সিন্দুরকোটা গ্রাম থেকে আসা কোহিনূর বেগম নামে একজন বলেন, ‘অলৌকিকভাবে টিউবওয়েল থেকে পানি পড়ছে। রোগমুক্তির আশায় এই পানি নিতে এসেছি। যদি আল্লাহ চান, তবে এ পানি পান করে রোগ ভালো হয়ে যেতে পারে।’
ভবানীপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক আনারুল ইসলাম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আর লোকমুখে প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ রোগমুক্তির আশায় এ পানি পানে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এখনই এর লাগাম টেনে না ধরলে তা অন্য দিকে গড়াবে। এছাড়া, এটাকে কেন্দ্র করে এখানে কয়েকটি দোকানও বসানো হয়েছে।’
গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক এনামুল আযীম বলেন, ‘এটি কোনো অলৌকিক বিষয় নয়। অতিবৃষ্টির ফলে কাদার স্তর বাঁকা হয়ে নীচের পানিতে চাপ সৃষ্টি করলে এটি হয়ে থাকে। পানি শুকিয়ে গেলে এটা বন্ধ হয়ে যাবে।’
গাংনীর মাওলানা রুহুল আমিন জানান, রোগমুক্তির জন্য শুধু জমজম কূপের পানি পান করা যেতে পারে। অন্য কোনো পানি পান করলে তা হবে না। নলকূপের পানিতে রোগ ভালো হবে—এটা গুজব ছাড়া আর কিছুই না।
মেহেরপুর হাসপাতালের ডা. সজিব উদ্দিন স্বাধীন বলেন, ‘অস্বাভাবিক কোনো বিষয়ে সাধারণ মানুষের কৌতুহল বেশি থাকে। বুঝে না বুঝে এর পেছনে ছোটে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এসব গুজবের কোনো স্থান নেই। নলকূপের পানি পানে রোগমুক্তি হবে এটা ভাবা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।