লালন সাঁই এর ১৩০তম তিরোধান দিবসে এবার কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালন আখড়াবাড়িতে স্মরণোৎসব ও মেলা কিছুই হচ্ছে না।
ছেঁউড়িয়ায় লালন আখড়াবাড়ি প্রতিবছর এ দিনে থাকে জমজমাট। লালন ভক্তরা প্রাণের টানে এই দিনে ছুটে আসেন এখানে। সে রীতি অনুযায়ী ছেঁউড়িয়ায় স্মরণোৎসব ও মেলা হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। তবে মহামারি করোনা এবার সেই অনুষ্ঠানে ছেদ টেনে দিয়েছে। লালন একাডেমি এ স্মরণোৎসব ইতোমধ্যে বাতিল করে দিয়েছে।
বাংলা ১২৯৭ সালের পহেলা কার্তিক সাধক পুরুষ লালন সাঁই দেহত্যাগ করেন। এরপর থেকে লালনের অনুসারীরা প্রতি বছর ছেঁউড়িয়ায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে আসছেন। তবে লালন একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর এ আয়োজনে নতুন মাত্রা যোগ হয়। সাঁইজির তিরোধান দিবস ঘিরে কোনো বছর ৫ দিন আবার কোন বছর ৩ দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে দেখা যেতো।
স্মরণোৎসবের কয়েকদিন আগে থেকেই দূর-দুরান্ত থেকে লালন ভক্তরা এসে একাডেমি ভবনের নিচতলার পুরো মেঝে জুড়ে আসন পেতে বসতেন। আর উৎসবের দিনগুলোতে তো আখড়া বাড়ির আঙিনা ছাড়িয়ে মরা কালী নদীর পাড় পর্যন্ত বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে হাট বসতো বাউল সাধুদের।
তবে এবারের দৃশ্যপট আলাদা, পুরো আখড়া বাড়ি জুড়েই সুনশান নিরবতা। আখড়া বাড়ির প্রধান ফটকে ঝুলছে তালা। কারণ, করোনা পরিস্থিতিতে লালন একাডেমি কর্তৃপক্ষ এক সভায় এবারের তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান বাতিল করে দেন।
তাই এবার সহজ মানুষদের মহাসম্মিলন হচ্ছে না। হচ্ছে না গুরু শিষ্যের ভাবের আদান প্রদান। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মুক্তির পথ খুঁজে বেড়ানো মানুষগুলো এবারের তিরোধান দিবসে সাঁইজিকে স্মরণ করবেন নিজ নিজ ধামে।
বর্তমানে লালন সাঁইজির সবচেয়ে বয়স্ক অনুসারী ফকির নহির উদ্দিন সাঁই বলেন, ‘আমাদের মনে অনেক ব্যাথা। কারণ, গত ৪০ বছর ধরে সাঁইজির তিরোধান দিবসে আখড়া বাড়িতে কটা দিন কাটিয়ে আসি। ভাবের আদান প্রদানে সাঁতার কাটি। কিন্তু এবার সেটি করতে পারছি না।’
তিনি বলেন, লালন মতাদর্শের মূলমন্ত্র হলো মানব কল্যাণ। তাই মহামারির মধ্যে মানব কল্যাণের কথা চিন্তা করেই আমার নিজেদের মনকে প্রবোধ দিচ্ছি।’
তবে নিজস্ব ধামে ছোট পরিসরে সাঁইজির তিরোধান দিবস পালন করবেন বলেন জানান প্রবীণ এ বাউল।
এদিকে করোনার কারণে লালন মাজার প্রাঙ্গণে প্রবেশ দ্বারে ঝুলছে তালা। তাই লালন মাজার প্রাঙ্গণে সাঁইজির বাণী পরিবেশন করে যারা দিনাতিপাত করতো তারা অনাহারে অর্ধাহারে।