কার্তিক মাস প্রায় শেষ। রাজশাহীতে হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে। আর পনের দিন পেরোলেই উত্তরের এ জনপদটিতে পুরোমাত্রায় শীত পড়তে শুরু করবে। এরই মধ্যে রাজশাহী মহানগরী এবং জেলার বিভিন্ন এলাকায় শীত পোশাক বিক্রি হতে শুরু করেছে।
রাজশাহীতে প্রতি বছরই বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে ছিন্নমূল এবং দুঃস্থ মানুষের জন্য শীত পোশাক বিতরণ করা হয়। এ বছরেও এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, পার্শ্ববর্তী গণকপাড়া মোড়, রাণীবাজার, শিরোইল রেলস্টেশন ও বাস টার্মিনাল এলাকা, কোর্ট স্টেশন, শালবাগান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলা ও বিনোদপুর এবং লক্ষীপুরসহ শতাধিক পয়েন্টে শীতের পুরাতন পোশাক বিক্রি হচ্ছে। এখান থেকে নিম্নআয়ের মানুষ পোশাক কিনছেন। তবে কেনাবেচা এখনও সেভাবে জমে উঠেনি। আসন্ন শীত থেকে রক্ষা পেতে কিছু মানুষ আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পোশাক কেনা শুরু করেছেন।
রাজশাহী মহানগরীতে ফুটপাতে গরম পোশাকের সবচেয়ে বড় কেনাবেচার স্থল শিরোইল ট্রেন স্টেশন এবং বাস টার্মিনাল এলাকায়। এ এলাকায় ছোট আর বড় মিলিয়ে কমপক্ষে দুই শতাধিক গরম পোশাক বিক্রির দোকান রয়েছে। নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষ এ এলাকার দোকানগুলো থেকে শীতের পোশাক কিনেন। বাস টার্মিনাল সংলগ্ন রেশম কারখানার দেয়াল ঘেঁষে দোকানগুলোতে বেচাকেনা সবেমাত্র শুরু হয়েছে।
এ এলাকায় গত দুই দশক থেকে গরম পোশাকের ব্যবসা করছেন আহমেদ আলী নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, সবেমাত্র হালকা শীত পড়ছে। আমরা দোকান মালিকরা এখনও সেভাবে পোশাক দোকানে তুলতে পারিনি। এখনও ক্রেতাদের আনাগোনা কম। কিছু মানুষ আসছেন। দেখছেন পোশাক। তবে সেভাবে কিনছেন না। তবে আশা করছি, আর কয়েকদিন গেলে বেচাবিক্রি শুরু হবে। প্রতিবছরের মত এবারও আমাদের ব্যবসা ভালো হবে বলে আশাবাদী।
বুধবার সকালে ওই এলাকায় শীতের পোশাক কিনতে যান রিকশাচালক মনসুর রহমান। তিনি গাইবান্ধা সদরের বাসিন্দা। তিনি বলেন, আমি প্রায় ১৫ বছর থেকে রাজশাহী মহানগরীতে রিকশা চালাই। বাস টার্মিনাল এলাকা থেকেই প্রতিবছর নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য শীতের গরম পোশাক কিনি। কয়েকদিন পরেই শীত পড়তে শুরু করবে। তাই এখানে এসেছি। পোশাক দেখছি। পছন্দ হলে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য পোশাক কিনব।
প্রতিবছর রাজশাহীতে শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি শীতকালে অসহায় ও দুঃস্থ মানুষের মাঝে শীতের গরম পোশাক বিতরণ করেন। সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খানও ২০ বছর থেকে ছিন্নমূল মানুষকে গরম পোশাক দিয়ে সহযোগিতা করেন। তিনি বলেন, আমরা প্রতিবছরই শীতের সময় মূলত লট (সংখ্যায় বেশি) ধরে ঢাকা থেকে শীতের পোশাক কিনে আনি। চলতি বছরেও আমরা শীতের পোশাক বিতরণ করব। তবে এখনও আমরা শীতের পোশাক কিনি নি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকা যাব। এরপর পোশাক কিনে অসহায় ছিন্নমূল মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে। পোশাক কেনার ব্যাপারে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি এর মধ্যে শেষ হয়েছে।
একই ধরনের কথা বলেছেন রাজশাহীর আরেকটি সামাজিক সংগঠন নতুন প্রজন্মের প্রধান উপদেষ্টা রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টু। তিনি বলেন, অন্য বছরের মত এবারও আমরা শীতের পোশাক বিতরণ করবো। এখনও সেভাবে শীত শুরু হয়নি। প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করছি, এবার অন্তত পাঁচ হাজার অসহায় মানুষের মধ্যে শীতের পোশাক বিতরণ করবো।
এ ব্যাপারে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, ‘রাজশাহী অঞ্চলে প্রতিবছর প্রচণ্ড শীত অনুভূত হয়। আমরা এর মধ্যে অগ্রিম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। প্রচণ্ড শীতে ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পোশাক বিতরণ করা হবে। এছাড়া, কিছু মানুষকে খাদ্য সহায়তা করার জন্যও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। শীতের সময় আসলেই তখন আমরা এ ব্যাপারে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি রেখেছি।’