সারা বাংলা

হাইব্রিড বীজ ধান কিনেও হতাশ কৃষক

বোরো মৌসুমে হাইব্রিড বীজ ধানে অঙ্কুরোদগম হয়নি বাগেরহাটের অনেক কৃষকের। অধিক ফলনের আশায় চড়া দামে বীজ কিনেছিলেন এসব চাষিরা। বীজতলা তৈরি করে বীজ বুনতে না পেরে হতাশ হতে হয়েছে তাদের। 

সঙ্গত কারণে বিভিন্ন কোম্পানির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট না হয়ে সরকারি বীজ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাটের ৯ উপজেলায় এবছর প্রায় ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হবে। এর মধ্যে ৪২ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও অবশিষ্ট জমিতে চাষ হবে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ধান। এর জন্য প্রায় ৬০০ টন হাইব্রিড ও ২৫০ টন উফশী ধান বীজের চাহিদা রয়েছে। এই মৌসুমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিভিন্ন প্রকল্প ও রাজস্ব খাত থেকে ৩০ টন হাইব্রিড ধানের বীজ ও ১০ টন উফশী ধানের বীজ বিতরণ করবে প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে। বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেট জাত বীজ দিয়ে অবশিষ্ট চাহিদা মেটাবেন চাষিরা।  ব্রাক, সিনজেনটা, পার্টেক্স, এসিআইসহ বিভিন্ন নামে ১০টিরও বেশি কোম্পানি হাইব্রিড ধান বীজ বিক্রয় করে।  এসব বীজ কোম্পানি ভেদে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।  কিন্তু গত দুই বছর ধরে বাজারের বিভিন্ন হাইব্রিড ধানের বীজে অঙ্কুরোদগম না হওয়ায় ফলন ব্যহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

এদিকে বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণনকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি-বীজ)এর বীজের দাম অপেক্ষাকৃত কম এবং মানও ভাল। শুধু প্রচারণার অভাবে চাষিরা বেসরকারি বাণিজ্যিক কোম্পানির বীজের উপর নির্ভর করছেন। চাষিরা ৫০০ টনের উপরে হাইব্রিড বীজের চাহিদার বিপরীতে বিএডিসি (বাগেরহাট কার্যালয়) মাত্র ১শ কেজি হাইব্রিড ও ১ হাজার ৫শ কেজি উফশী ধানের বীজ বিক্রি করতে পেরেছেন। 

হাইব্রিড ধানের বীজে অঙ্কুরোদগম না হওয়া চাষি কচুয়া শেখ রুস্তম আলী বলেন, জমির জন্য বিভিন্ন কোম্পানির ১৫ কেজি ধান কিনেছিলাম। এর মধ্যে ১২ কেজি ধানে অঙ্কুরোদগম হলেও ২৯০ টাকা করে কেনা সিনজেন্টা কোম্পানির ৩ কেজি ধান একদম নষ্ট হয়ে গেছে। কোন অঙ্কুরোদগম হয়নি।

রুস্তমের প্রতিবেশী আবুল হোসেন জানান, তিনি রাজলক্ষ্মী ব্র্যান্ডের ধান কিনেছিলেন, অঙ্কুরোদগম হয়নি।  আবার নতুন করে ধান কিনতে হয়েছে তাকে।  

একই উপজেলার জামাল শেখ বলেন, ব্রাকের (হাইব্রিড-৪৪৪) ধান কিনেছিলেন, বীজ হয়নি।  এত টাকা দিয়ে ধান কিনতে আমাদের খুব কষ্ট হয়।  কিন্তু বীজ না হলেও আরও বিপদে পড়তে হয়।

এসিআই কোম্পানির (এসিআই-১) ধান কিনেছিলেন মোজাফফর মোল্লা নামের এক চাষি।  তার ধানেও অঙ্কুরোদগম হয়নি।  এখন নতুন করে কি ধান কিনবেন এই নিয়ে আছেন শঙ্কায়।  শুধু এরা নয় বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলার চাষিদের কাছ থেকে হাইব্রিড বীজ ধানে অঙ্কুরোদগম না হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে সরকারিভাবে বিতরণকৃত বীজ পাওয়া নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে চাষিদের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পছন্দের মানুষ না হলে সরকারি সার-বীজ পাওয়া যায়না এমন অভিযোগ করেছেন চাষিরা।

বিএডিসি-বীজ, বাগেরহাট কার্যালয়ের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিসেস আকলিমা খাতুন বলেন, আমরা দুই ধরনের হাইব্রিড বীজ বিক্রি করি। সরকার নির্ধারিত ২২৫ টাকা দরে আমরা ধান বীজ বিক্রি করছি। কিন্তু অনেক কৃষকরা না জানার কারণের আমাদের এখান থেকে কিনছেন না। তবে সরকারি বীজ ব্যবহারের জন্য আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। চাষিদের সরকারি বীজ কেনার পরামর্শ দেওয়ার জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। সার-বীজ কমিটির মিটিংয়েও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। 

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, সিনজেন্টা কোম্পানির একটি ব্র্যান্ডের বীজে অঙ্কুরোদগম না হওয়ার খবর আমরা পেয়েছি। বিষয়টি ওই প্রতিষ্ঠানকে জানালে তারা ওই ব্র্যান্ডের বীজ বাজার থেকে তুলে নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পুনরায় বীজ দেওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন। 

এছাড়া কোন কোম্পানির বীজে যদি অঙ্কুরোদগম না হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়, সেগুলো যাতে বাজারজাত না হতে পারে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।

তিনি বলেন, বিএডিসির বীজের দাম অপেক্ষাকৃত কম এবং ফলনও ভাল।  চাষিরা বিএডিসির বীজ ব্যবহার করলে উপকৃত হবে।