অবশেষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সেই লক্ষ্মী বিলাস সাঁওতাল পেয়েছেন বয়স্ক ভাতা কার্ড।
লক্ষ্মী হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার লালচান্দ বাগানের মাঝিপাড়ার বাসিন্দা। এর আগে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর তাকে (লক্ষ্মী বিলাস সাঁওতাল) নিয়ে ‘লক্ষ্মী সাঁওতালের ভাতা মিলবে কবে’ শিরোনামে একটি মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয় দেশের জনপ্রিয় নিউজপোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমে।
এ সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর পাঠক মহলে বেশ প্রশংসিত হয়। ফেসবুকে লাইক ও কমেন্ট করে অনেকেই লক্ষ্মী বিলাসকে ভাতার কার্ড দেওয়ার জন্য দাবি করেন।
প্রকাশিত এ সংবাদটি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল কাদির লস্করের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর দেরিতে হলেও উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সম্প্রতি বয়স্ক ভাতার কার্ড পান সেই লক্ষ্মী বিলাস।
বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর)সকালে জেলার চুনারুঘাটের পাহাড়ি এলাকা লালচান্দ চা বাগানে গেলে এ প্রতিবেদককে বয়স্ক ভাতার কার্ড পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সমাজসেবক মো. সুমন মিয়া।
লক্ষ্মী বিলাস সাঁওতাল বলেন, ‘আমার স্বামী জহুর সাঁওতাল বহু আগে মারা গেছেন। আমার কোনো সন্তানও নেই। শরীরে শক্তি ছিল যখন, তখন চা শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবন চালিয়েছি। এখন শরীরে শক্তি নেই। কাজও করতে পারি না। জীবনের পুরোটা সময় বিলিয়ে দিয়েছি একটি কুঁড়ি ও দুটি পাতার মায়ায়। বয়স হয়েছে, তাই কাজে যেতে পারি না। কাজে না গেলে টাকাও নেই। বর্তমানে মাঝিপাড়ায় ভাই বিনন্দ্র সাঁওতালের ঘরে থেকে কোনো রকমে বেঁচে আছি।’
লক্ষ্মী আরও বলেন, ‘সরকারিভাবে আমার জন্ম তারিখ ১৩ এপ্রিল ১৯৪৭। সেই হিসেবে প্রায় ৭৩ বছর। তবে বাস্তবে আমার বয়স ৯১ বছরের কাছাকাছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নৌকাকে ভালবেসে আজ পর্যন্ত রয়েছি। বর্তমান নৌকার সরকার থাকার পরও আমি কোনো ভাতা পাচ্ছিলাম না। যাইহোক, অবশেষে সমাজসেবক সুমন মিয়ার চেষ্টায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা কার্ড পেয়েছি। এজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
লক্ষ্মী বিলাস সাঁওতালের ভাইজির স্বামী বিজয় সাঁওতাল বলেন, ‘ওনার আর কেউ না থাকায় আমি দেখাশুনা করছি। শেষ বয়সে নানা রকমের রোগে ভুগছেন তিনি। এখানে আমার পক্ষে নিজ পরিবার চালিয়ে তার ভরণপোষণ করাটা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছিল। যাই হোক অবশেষে তিনি বয়স্ক ভাতার কার্ড পেলেন। তাই কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়া যাবে।’
স্থানীয় সমাজসেবক মো. সুমন মিয়া বলেন, ‘লক্ষ্মী সাঁওতালের অবস্থা ভালো না। ভাতা কার্ডের ব্যবস্থা হওয়ায় তার অনেক উপকার হয়েছে।’