করোনা সেবা নিশ্চিত করতে তৎপর রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশসহ উত্তোরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালেও করোনার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। করোনার পরীক্ষা থেকে শুরু করে সেরে ওঠা পর্যন্ত রোগীদের জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
হাসপাতালের সুপ্রশস্ত বার্ন ইউনিটকে করোনা ইউনিট ঘোষণা করে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে করোনাকালে হাসপাতালে করোনা সেবা নিশ্চিত হলেও সাধারণ রোগীদের মাঝে ভীতি ও শঙ্কা কাজ করছে। এছাড়া সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা নেবার ক্ষেত্রে বিড়ম্বনার শিকারও হচ্ছেন।
রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রামেক হাসপাতালে উত্তর এবং দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ১২ জেলা থেকে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। করোনাকালীনও তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু করোনা পজিটিভ না আসা পর্যন্ত বোঝার উপায় নেই কে আক্রান্ত। সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো সাধারণ লক্ষণ প্রায় রোগীর মাঝে দেখা যায়। এতে ডায়াবেটিক, এর্লাজি, শ্বাসকষ্টের রোগীদের মাঝে একরকম ভীতি কাজ করছে। এদের অনেকেই হাসপাতালেরও আসছেন না।
রামেক হাসপাতালে প্রথম থেকেই বার্ন ইউনিটকে করোনা ইউনিট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে সার্জারি ইউনিটকে বার্ন ইউনিট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বার্ন রোগীরা সার্জারি ইউনিটে পর্যান্ত সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে তারা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) রামেক হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে করোনা ইউনিটে রোগীর সংখ্যা কম। পর্যাপ্ত সুবিধা সম্পন্ন এই ইউনিটে দেওয়া হচ্ছে সেবা। তবে হাসপাতালের অন্যান্য ইউনিটে ভিড় দেখা গেছে। পর্যাপ্ত বেড না থাকায় মেঝেতেই রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাড়ছে দুর্ভোগ।
জেলার চারঘাট উপজেলার সারদা এলাকা থেকে সেবা নিতে এসেছেন সুকুমার রায়। তিনি জানান, তার বড় ভাইকে নিয়ে তিনি সকালের দিকে হাসপাতালে এসেছেন। সড়ক দুর্ঘটনার পর তার বড় ভাইয়ের এক পা কেটে ফেলতে হয়েছে। তার পুরো শরীর ফুলে গেছে। চিকিৎসক তার ভাইয়ের জন্য বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন বেড ব্যবহার করতে বলেছেন। যেখানে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। কিন্তু তিনি কোনো বেড পাননি। রুমের বাইরে মেঝেতেই তাকে রাখতে হয়েছে। যেখানে বিদ্যুৎ সুবিধাও নেই।
ওই ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক অনন্যা আরিফিন লিসা জানান, তিনি ইনটার্ন চিকিৎসক হিসেবে এখানে আছেন। এখানে রোগীদের যে সেবা দেওয়া হয়, তা রাজশাহীতে আর অন্য কোথাও হয়না। তবে জায়গাটা ছোট হওয়ায় কিছু সমস্য হচ্ছে। তবে তারা আন্তরিকতার সঙ্গে সর্বোচ্চ সেবাটা দিচ্ছেন।
রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. পার্থ মনি ভট্টাচার্য জানান, করোনার প্রথম দিকে হাসপাতালে রোগী সংখ্যা কমে গিয়েছিল। বর্তমানে রোগীর চাপ বাড়ছে। তবে অনেক মানুষের মাঝে এখনো করোনা ভীতি রয়েছে। বিশেষ করে যারা সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিকস ও এলার্জির রোগী- তাদের মাঝে ভীতিটা বেশি। কেননা তাদের করোনা সংক্রমণের শঙ্কাটা বেশি। কিছু রোগী আবার ভয়ে হাসপাতালেও আসছেন না। এমন রোগীও তিনি পেয়েছেন যাদের করোনার টেস্ট করাতে বলা হলেও তারা টেস্ট করাননি। এক্ষেত্রে যারা ভয় করছেন তাদের উচিত হবে ফোন করে সেবা নেওয়া এবং সচেতন থাকা। আর করোনা ভীতির কারণেই রোগীদের দুর্ভোগ বাড়ছে।
রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, রামেক হাসপাতালে করোনা রোগীদের কারণে সাধারণ রোগীদের কিছুটা দুর্ভোগ হচ্ছে। এ অবস্থার উত্তোরণের জন্য আমরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর ফলে সাধারণ রোগীরা আর দুর্ভোগে পড়বেন না।