নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাটে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে সিএনজি অটোরিকশাচালক ও যুবলীগ কর্মী আলাউদ্দিন (৩২) নিহতের ঘটনায় মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে প্রধান আসামি করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ (হত্যা মামলার আবেদন) দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) রাত নয়টার দিকে নিহতের ছোট ভাই এমদাদ হোসেন কোম্পানীগঞ্জ থানায় এ অভিযোগ দেন।
এ মামলায় কাদের মির্জার ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন ও ছেলে মির্জা মাসরুর কাদের তাসিকসহ ১৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩০-৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামি মির্জা কাদেরের নের্তৃত্বে অন্য আসামিরা পিস্তল, শর্টগান, পাইপগান, রামদা, লোহার রড নিয়ে অর্ধশতাধিক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং প্রতিবাদ সভায় হামলা চালায়। এ সময় মামলার ৪নং আসামী নাজিম উদ্দিন বাদল তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আলাউদ্দিনের পেটে গুলি করে মারাত্মক জখম করে। এরপর ৫নং আসামি নাজিম উদ্দিন মিকনসহ তাদের সমর্থকরা আলাউদ্দিনকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। পরে ৬নং আসামি মাঈন উদ্দিন কাঞ্চন তার হাতে থাকা লোহার রড আলাউদ্দিনের পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। পরে হামলাকারীরা চলে গেলে আলাউদ্দিনকে উদ্ধার করে প্রথমে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে জানতে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক রনি ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রবিউল হকের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে, বসুরহাট পৌর ভবনের চারদিক ঘিরে রেখেছে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা। সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যরাও রেখেছেন কড়া নজরদারি। এই নজরদারির ভেতরই পৌর ভবনের একটি কক্ষে নিজের অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে আব্দুল কাদের মির্জা অবস্থান করছেন।
সন্ধ্যার দিকে কাদের মির্জার স্ত্রী আক্তার জাহান বকুল স্বামীর ব্যবহারিক কিছু জামা-কাপড়সহ একটি ব্যাগ নিয়ে সেখানে যান। সন্ধ্যার পর একজন আইনজীবীও কাদের মির্জার সঙ্গে দেখা করে পৌর ভবন থেকে বের হন। এ নিয়ে মির্জা কাদেরের অনুসারী নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বসুরহাট পৌর এলাকার জিরো পয়েন্টে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু চত্বর, রূপালী চত্বর, উপজেলা গেইট, কলেজ গেইট ও উত্তর বাজার এলাকায় পুলিশ ও র্যাব সতর্ক অবস্থান রয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে থেকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলকে গ্রেপ্তার করে সাদা পোশাকের পুলিশ। প্রথমে গ্রেপ্তারের বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও সন্ধ্যার পরে গণমাধ্যমকর্মীদের মিজানুর রহমান বাদলের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন।
গত মঙ্গলবার (৯ মার্চ) বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় আলাউদ্দিন নিহত হন। হাসপাতালে এসে নিহত আলাউদ্দিনকে নিজের সমর্থক দাবি করেন মিজানুর রহমান বাদল। সংঘর্ষে ওসি মীর জাহিদুল হক রনি ও পাঁচ পুলিশসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন অন্তত আরও ১০ জন।