ফুল কে না-ভালোবাসে? সবার মতো তিনিও ফুলপ্রেমী। তবে গোলাপের প্রতি তার প্রেম গোলাপের ঘ্রাণের মতোই চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। ৩০০ প্রজাতির গোলাপ গাছ সংগ্রহ করে সবাইকে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দানিয়াসুল আলম শামীম। পেশায় তিনি ব্যাংক কর্মকর্তা।
বাড়ির ছাদে শামীম তৈরি করেছেন গোলাপ বাগান। বাগানের শত প্রজাতির গোলাপ দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করেন নানান বয়সী মানুষ। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে বঙ্গবন্ধুর নামে গোলাপের একটি নতুন জাত উদ্ভাবন করতে চান এই গোলাপপ্রেমী।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাঠশালা মোড়ের বাসিন্দা আলম শামীম। বছর পাঁচেক আগে রাজশাহীতে পুষ্পমেলায় গিয়ে প্রায় শত প্রজাতির গোলাপ দেখে মুগ্ধ হন তিনি। পরিকল্পনা করেন বাড়ির ছাদে গোলাপ বাগান তৈরির। এরপর শুরু করেন গোলাপের বিভিন্ন জাত সংগ্রহের কাজ। এ জন্য তিনি ঘুরেছেন দেশ-বিদেশে। কোথাও ভালো জাতের গোলাপের সন্ধান পেলে ছুটে গেছেন সেখানে। ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে ভারতের খড়গপুরে ‘পুষ্পাঞ্জলি’ নার্সারির সন্ধান পান তিনি। এটি এশিয়ার মধ্যে গোলাপ ফুলের সবচেয়ে বড় নার্সারি। এখান থেকেই সবচেয়ে বেশি গোলাপ ফুলের জাত সংগ্রহ করেছেন শামীম।
সম্প্রতি তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ছাদ বাহারি রঙের গোলাপে রঙিন হয়ে আছে! সুবাসে ভরে উঠেছে চারপাশ। যদিও নভেম্বর-ডিসেম্বর গোলাপ ফুল ফোটার ভরা মৌসুম। মার্চ মাসে ফুটন্ত গোলাপ খুব বেশি দেখা যায় না। তারপরও ছাদে গোলাপ ফুল দেখে বিস্মিত হতে হয়। বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয়, এই ছাদ বাগানে রয়েছে পৃথিবীর বিখ্যাত ও দুষ্প্রাপ্য কয়েকটি গোলাপের জাত। এর মধ্যে সেন্টিমেন্টাল, জুলিও ইগলিসিস, এলিনকা, এম্বার কুইন, বহুরুপী, কলকাতা-৩০০, বেলেরিনা, ক্যাসানোভা, চিপার, ক্যালিফোর্নিয়া ড্রিমিং, ডিসার্ট পিচ, ডাবল ডিলাইট, ফেন্সি টক, ফায়ার ফল, গোল্ড মেডেল, হট পয়েন্ট, লাভ এন্ড পিচ, অরেঞ্জ ফায়ার, সোলারিয়া, তাজমহল, টেডিবিয়ার উল্লেখযোগ্য। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে প্রতিটি গোলাপের টবের সঙ্গে শামীম ঝুলিয়ে রেখেছেন জাতের নাম।
শামীম জানান, ৫ বছরের পরিশ্রম এই বাগান। তবে এখানেই শেষ নয়, আরো গোলাপের জাত সংগ্রহ করতে চান তিনি। যদিও প্রথমদিকে শামীমের গোলাপপ্রেমকে ‘পাগলামি’ মনে করতেন স্বজনরা। কিন্তু তাদের সেই ধারণা এখন পাল্টে গেছে। তারাও এখন শামীমকে উৎসাহ দিচ্ছেন। তার বাবা প্রকৌশলী মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, ছেলে প্রথম যখন গোলাপ ফুল সংগ্রহ শুরু করলো তখন এতোটা ভালো লাগেনি। কাজ রেখে গোলাপের পেছনে ছুটে বেড়ানো! পরে ধীরে ধীরে যখন গোলাপের বাগানটি পূর্ণাঙ্গ রূপে প্রকাশ পেল তখন মুগ্ধ না-হয়ে পারিনি।’
আব্দুস সাত্তার নিজেও এখন ছেলের সঙ্গে বাগানের পরিচর্যা করেন। এতে তার অবসর সময়টুকু কেটে যায়। শামীমের এই গোলাপ-যজ্ঞে স্ত্রী জিয়াসমিন আরাও পাশে আছেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমে পাগলামি মনে হয়েছিল। এখন ভালোই লাগে। গোলাপ বাগান দেখতে বাইরে থেকে প্রচুর লোক আসে। মনটা ভরে যায়।’
ব্যাংকার হয়ে এমন একটি উদ্যোগকে ‘বিরল’ মনে করেন জনতা ব্যাংক, দাশুড়িয়া শাখার ব্যবস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহ। তার প্রত্যাশা শামীমের গোলাপ বাগান একদিন দেশজুড়ে পরিচিতি পাবে। এ প্রসঙ্গে শামীম বলেন, ‘আমি চেষ্টা করছি। আমার সংগ্রহে যে গাছগুলো আছে সবই মাতৃ গাছ। বিভিন্ন জাতের গাছের সঙ্গে ক্রসবিডিং করে নতুন জাত উদ্ভাবন করা যায়। আগামী বছর থেকে এ কাজ শুরু করবো। এজন্য আমি ইতোমধ্যেই জাত সিলেকশন করেছি। কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা পেলে বঙ্গবন্ধুর নামে বাংলাদেশে একটি নতুন গোলাপের জাত উদ্ভাবন করতে চাই।’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পাবনার টেবুনিয়া হর্টি কালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কে জে এম আব্দুল আউয়াল জানান, প্রয়োজনে আমরা শামীমকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সহযোগিতা করবো। জাত উদ্ভাবনে তিনি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের ফ্লোরি কালচার ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’