সারা বাংলা

লকডাউনে বাবুরহাট, ব‌্যবসায়ী-শ্রমিকের কপালে চিন্তার ভাঁজ  

টানা লকডাউনে থমকে গেছে দেশের বৃহৎ পাইকারি কাপড়ের বাজার নরসিংদীর শেখেরচর বাবুরহাট। বন্ধ রয়েছে সব দোকান-শপিংমল। এদিকে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ক্রেতারাও আসতে পারছে না এই হাটে। এছাড়া, অনলাইনে বেচাকেনা চালু থাকলেও তেমন একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে, ঈদ মৌসুমে ছোট ছোট দোকান মালিক, কর্মচারী ও কাপড়ের বান্ডিল টানার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। ব‌্যবসায়ী-শ্রমিকদের অভিযোগ,  বেচাকেনা বন্ধ থাকায় প্রায় মানবেতর দিন যাপন করতে বাধ‌্য হচ্ছেন তারা।

সরেজমিনে শেখেরচর বাবুরহাট ঘুরে দেখা গেছে, লকডাউনের কারণে নীরব-নিস্তব্ধ পুরো বাজার।  বন্ধ রয়েছে হাটের সব দোকানপাট। প্রতিটি দোকানের সার্টারে ঝুলছে বড় বড় তালা। অনেক দোকানি হাটে এলেও তাদের দোকান খুলতে দেখা যায়নি। কিছু কিছু দোকানপাটে অনলাইনে বেচাকেনা চালু থাকলেও তেমন একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অনলাইনে যে টুকটাক কাপড় বিক্রি হচ্ছে, তা দিয়ে কর্মচারীর খরচই চালানো যাচ্ছে না।

বাবুরহাটের দোকানদাররা বলেন, লকডাউনের কারণে বাস ও ট্রেনসহ পাবলিক পরিবহনগুলোর চলাচল বন্ধ থাকায় আশপাশের জেলাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে এই হাটে কোনো পাইকারি ক্রেতা আসতে পারছেন না। তাই কোনো বেচাকেনাও নেই। 

আসাদুজ্জামান নামে এক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, ‘ঘরে বসে থাকতে মন চাইছে না। তাই কাপড়গুলো ঠিকঠাক আছে কি না, দেখতে হাটে চলে এসেছি। বছরের এগারো মাস লাভ-লোকসানের মধ্যদিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করলেও অপেক্ষায় থাকি ঈদ মৌসুমের এই একটি মাসের জন্য। কিন্তু দেশে করোনার কারণে চলমান লকডাউনে আমাদের সব আশা আকাঙ্ক্ষা ভেস্তে গেছে। এখন দুবেলার ভাতা জোগানোই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

বেশ কয়েকটি গলি ঘুরে একটি দোকান খোলা দেখা গেছে। এ দোকানের মালিক জানান, পুরনো দোকান ছেড়ে তারা নতুন দোকানে মালামাল সরিয়ে আনছে। সেজন্যই দোকান খোলা রয়েছে। নতুন দোকানে মালামাল সরিয়ে আনার জন্য দোকান খোলা থাকলেও সকাল থেকে এই পর্যন্ত কোনো পাইকারের চেহারা দেখেননি তারা।  

পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত থাকা কয়েকটি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির ট্রাকে পণ‌্য ভরতে দেখা গেছে। এ সময় শিকদার ট্রাভেলসের মালিক মানুনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘অনলাইনে অর্ডার করা কাপড় পরিবহন করছি।  অন্যান্য বছরের ঈদ মৌসুমে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ট্রাক কাপড় দেশে উত্তরাঞ্চলে পাঠাতাম।  অথচ এই বছর লকডাউনের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। সারাদিনে এই এক ট্রাক পাঠাচ্ছি। তাও পুরো লোড করতে পারবো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ‌্যবিধি মেনে বাবুরহাট খুলে দিলে দোকান মালিক, কর্মচারী,  শ্রমিক ও  ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীরা পরিবার নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারতাম।’

নরসিংদী চেম্বর অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন শিশির বলেন, ‘বাবুরহাটকে কেন্দ্র করে কয়েক লাখ লোকের রোজগার। শুধু এই ঈদকে কেন্দ্র করেই প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার কাপড় কেনাবেচা হয়। যা থেকে গতবছরও বঞ্চিত হতে হয়েছে। এবারও সেই অবস্থাই। তাই অর্থনৈতিক অবস্থা ঠিক রাখতে হলে তাঁতশিল্প মালিক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক পরিবারকে বাঁচাতে ঈদকে সামনে রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে হলেও এই বাজারটি খুলে দেওয়ার উচিত।’