চাঁদপুরের ভোটার হয়েও গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় মিলছে না নৌকায় ভাসমান সওদাগর জনগোষ্ঠীর ৮শ মানুষের।
এই মানুষগুলো ডাকাতিয়া, পদ্মা ও মেঘনার তীরে নৌকায় ভাসমানভাবে বসবাস করছেন বছরের পর বছর ধরে। নদীর ঢেউ, ঝড়, বৃষ্টি, বর্ষা,শীত সব মৌসুমেই ওরা ভাসমান অবস্থায় নদীর ওপরে জীবনযাপন করছেন। এদের সংখ্যাগরিষ্ঠই ইসলাম ধর্মের অনুসারী। পেশায় সবাই জেলে।
সরেজমিনে শহরের ১০ নম্বর চৌধুরী ঘাট ও ৫ নম্বর ঘাট ঘুরলে দেখা যায়, ছোট ছোট নৌকার ওপর রান্নাবান্নার কাজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো করছেন ভাসমান এই মানুষগুলো। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার নদী তীরে অর্থাৎ ডাঙ্গায় বাঁশের মাঁচার ওপর টিন দিয়ে ছোট ছোট ঝুঁপড়িঘর বানিয়েছেন। তবে এর সংখ্যা খুব একটা বেশি না। যদিও বর্ষাকালে নৌকাই তাদের শেষ আশ্রয়স্থল।
বুধবার (২৮শে এপ্রিল )বিকেলে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের পেছনে ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেঁষে নৌকায় বসবাসকারী সওদাগর জনগোষ্ঠীর উজ্জ্বল বেপারী, শাহনাজ বেগম, মহসিন বেপারী, করিম জাহান, মৌসুমি বেগম, রেজিয়া বেগম, অলিমন বিভী, শাহেলা বেগম, তাছলীমা বেগম, পিংকি বেগমসহ আরও অনেকে বলেন, ‘আমরা এখানে অনেক বছর ধরে এই নদী তীরে ভাসমান অবস্থায় বসবাস করছি। আগে তেমন কেউ খবর না নিলেও আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমাদের জীবনমান অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। এখানকার স্থানীয় প্রশাসন, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধিরা ও সাংবাদিকসহ সুধীসমাজ প্রায়ই আমাদের খোঁজ-খবর নেন। সকলের আন্তরিকতায় কিন্ডার গার্ডেনসহ বিভিন্ন স্কুল প্রতিষ্ঠানে আমাদের সন্তানরা পড়ালেখা করার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু আমরা এখানকার ভোটার হওয়ার পরও কোনো নাগরিক সুবিধা পাই না। নৌকার ওপর আমাদের অনেক কষ্ট হয়। খুবই মানবেতর জীবন যাপন করি আমরা। আমরা গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় চাই। এই মৌলিক অধিকারটুকু আমাদের মিলছে না।’
নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে এই সওদাগর জনগোষ্ঠীর প্রধান সর্দার মালেক সওদাগর বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগেও আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর ঘর পাওয়ার আবেদন করেছিলাম। পরবর্তীতে আমাদেরকে গুচ্ছ গ্রামে থাকার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেওয়া হলেও তা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা এই অঞ্চলের ভোটার হয়েও কেন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি? তা খতিয়ে দেখতে চাঁদপুরের উন্নয়নের রুপকার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি (এমপি) আপাসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলের দ্রুত সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
চাঁদপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা শাহনাজ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমাদের এখন আশ্রয়ণ প্রকল্পের কোনো ঘর খালি নেই, এমনকি গুচ্ছগ্রামও খালি নেই। এগুলোর সংস্কার কাজ চলছে। সংস্কার শেষ হলে আমরা ওদের জন্য কাজ শুরু করবো। তাছাড়া আমরা নতুন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণ করার উদ্যোগ নিচ্ছি। যেখানে এরকম বেদে সম্প্রদায়, হরিজন সম্প্রদায়ের লোককে থাকতে দেওয়া হবে। কিন্তু জায়গা নির্ধারণ করতে না পারায় আমরা এখনো এই কাজ শুরু করতে পারিনি।’
এ ব্যপারে জেলা প্রশাসক অন্জনা খান মজলিশ রাইজিংবিডিকে জানান, চাঁদপুরের ভোটার হলে কোনোভাবেই তাদের নাগরিক অধিকার বঞ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি সদরের ইউএনওকে তদারকি করতে বলে দেওয়া হচ্ছে।