সারা বাংলা

শাস্তির ভয়ে ঋণ করে ১০০ জনকে খাদ্য সহায়তা

৩৩৩ নম্বরে ফোন দিয়ে খাদ্য সহায়তা চেয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের দেওভোগ এলাকায় ফরিদ আহমেদ।  

তিনি চারতলা বাড়ি ও কারখানার মালিক তাই খাদ্য সহায়তা পাওয়ার উপযুক্ত নন- এই বিবেচনায় অযথা হয়রানির অভিযোগে তাকে ১০০ গরিব পরিবারকে খাদ্য সহায়তার নির্দেশ দেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ইউএনও আরিফা জুহুরা।

নির্দেশ না মানা হলে জেল হতে পারে এই ভয়ে ফরিদ আহমেদ চড়া সুদে ঋণ করে ও সোনার গয়না বন্ধ রেখে টাকা জোগাড় করে খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করেন। জানিয়েছেন, তার স্ত্রী হিরণ বেগম।

শনিবার (২২ মে) বিকেলে দেওভোগ এলাকায় বাড়ির সামনে গিয়ে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন ফরিদ আহমেদ। খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেটের মধ্যে ছিল ৫ কেজি চাল, এক কেজি লবন, আলু, পেঁয়াজ, তেল।

ফরিদ আহমেদ জানান, গত বুধবার (১৯ মে) তিনি এফএম রেডিও’র মাধ্যমে জানতে পারেন- ৩৩৩ নম্বরে ফোন করলে সরকার খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়।  এই কারণে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে তিনি খাদ্য সহায়তা চান।

তিনি বলেন, এই চারতলা বাড়িটি আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। আমরা ৬ ভাই এবং এক বোন উত্তরাধিকারী সূত্রে এই বাড়ির মালিক। তিনি তিন তলার ওপর ছাদে টিনশেড দুটি রুম ও নিচ তলায় একটি রুম  পেয়েছেন। বাড়ির অন্য অংশগুলোতে বাকী পাঁচভাই বসবাস করেন।  

তিনি দাবি করেন, মাসুদ আহমেদ নামের ব্যাক্তির হোসিয়ারি কারখানায় ১২ হাজার টাকা বেতনে কাটিংয়ের কাজ করেন। তার এক ছেলে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এবং তিনি নিজেও স্ট্রোক করেছেন। ফরিদ আহমেদ বলেন, আমার খাদ্য প্রয়োজন ছিল বলেই ফোন করেছি।

ফরিদ আহমেদের স্ত্রী হিরণ বেগম বলেন, গত দু’দিন বহু চেষ্টা চালিয়ে স্বামীকে জেলের হাত থেকে বাঁচাতে আত্মীয়স্বজনের সোনার গয়না বন্ধক রেখে চড়া সুদে ঋণ করি এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য আইযুব আলীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার নিয়ে মোট ৬৫ হাজার টাকার খাদ্য সামগ্রী কিনতে হয়েছে।

আমাদের পরিবার নিজেরাই চলতে পারি না। প্রতিবন্ধী ছেলে পুরো পরিবার এমনিতেই আমরা সঙ্কটে- বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

ছোট ভাই সেলিম খানের স্ত্রী বিলকিস বেগম বলেন, ফরিদ আহমেদ ব্রেন স্ট্রোক করেছেন। যে কারণে তিনি গুছিয়ে কথা বলতে পারেন না। তার মানসিক সমস্যাও রয়েছে। গতরাতে তিনি দুই বার আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন। আমরা তাকে সারারাত পাহাড়া দিয়ে রাখি এবং টাকা পয়সা জোগাড় করতে সহায়তা করি।

সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরা জানান,  কল করা ব্যক্তি খাদ্য সহায়তা পাওয়ার উপযুক্ত কিনা তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা ইউপি সচিবের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করা হয়।  ওই ব্যক্তির ফোন পেয়ে খাদ্য সহায়তা নিয়ে তার বাড়িতে যাওয়া হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী জানতে পারি, তিনি চারতলা বাড়ির মালিক ও হোসিয়ারি কারখানাও রয়েছে তার। তার চার তলা বাড়ি ও হোসিয়ারি কারখানা রয়েছে কী না জানতে চাইলে তিনিও তা স্বীকার করেন। আর এটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়নি। তাকে সরকারি কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টির দায়ে তার নিজের আশেপাশের ১০০ গরিব পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানালে তিনি তা করতে রাজী হন।

ইউএনও আরও বলেন, এখন ওই ব্যক্তির সর্ম্পকে যেসব কথাবার্তা আসছে, তিনি চারতলা পুরো বাড়ির মালিক একা নন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তিনি যদি সত্যিই খাদ্য সহায়তা পাওয়ার উপযোগী হন এবং তিনি যদি চান তাকে খাদ্য সহায়তা করা হবে।