রঞ্জু চন্দ হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা। পৌরসভার রেলওয়ে পার্কিং এরিয়ার এক সেলুনের কর্মচারী তিনি। সারাদিন সেলুনে কাজ করে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় রোজগার হতো। তা দিয়ে কোনোরকমে চলতো তার সাত সদস্যের সংসার।
কিন্তু করোনা প্রতিরোধে চলমান লকডাউনে তার কাজ বন্ধ। এতে অসহায় হয়ে পরেছেন অভাবী এই মানুষটি। একে তো সংসারে নুন পানতার যোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হয় তাকে। কোনো রকমে এক মুঠো অন্নের যোগাড় হলেও বাড়ি ভাড়ার শঙ্কায় তার জীবন ওষ্ঠাগত।
অসহায় রঞ্জু চন্দ জানান, এক সময় তার ঘরবাড়ি ছিল। সংসার নিয়ে ভাল অবস্থানে ছিলেন তিনি। আরও উন্নতির আশায় বিদেশ যাওয়ার জন্য তিনি জমিজমা বিক্রি করেন। কিন্তু বিদেশ যাওয়া আর তার হয়নি। দালাল টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায়। সেই থেকে সেলুনের কর্মচারীর কাজ করেন তিনি। এতে দৈনিক যা আয় হয় তা দিয়ে পুরো পরিবার চালানো কঠিন। বর্তমানে লকডাউন থাকায় কঠিন সময় পার করছেন তিনি। ঘরে নেই খাবার। নেই টাকা। সন্তানদের জন্য কিছু করতে না পেরে তার জীবনে নেমে এসেছে চরম হতাশা।
রঞ্জু চন্দ বলেন, ‘কয়দিন আগে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মিনহাজুল ইসলাম স্যার আমাকে ৫০০ টাকা দিয়েছেন। এটাকায় কয়েকদিনের খাবার হয়েছিল। লকডাউন শেষ হয়নি কিন্তু ওই টাকা শেষ। কি করে সামনের দিন চলবে ভেবে পাচ্ছি না।’
রঞ্জু চন্দ আরও বলেন, ‘৩ ছেলে ও স্ত্রী ছাড়াও শ্বশুর-শাশুড়ির ভরণপোষণ করতে হয় আমাকে। আমার নিজের ঘর নাই। ভাড়ায় থাকি। এখানে দিতে হয় ঘর ভাড়া। এ অবস্থায় হাতে নেই টাকা। কি করে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করব। শুনলাম শেখের বেটি হাসিনা ঘোষণা দিছে যে, দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। তাই সরকার যদি আমার মতো অসহায়কে আর্থিক সহায়তা ও জমিসহ একটি ঘর দিতো তাহলে খুব ভালো হতো। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এটি আমার দাবি।’
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গাজীউর রহমান ইমরান বলেন, ‘রঞ্জু দাদা আমার পরিচিত। তিনি আর্থিক সংকটে আছেন। তার একটি সরকারি ঘরের দাবি। ঘর দেওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনও মহোদয়ের কাছে সুপারিশ করেছি। আশা করছি তিনি ঘর পাবেন।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল জানান, রঞ্জু বাবু খুব অসহায়। পরিশ্রম করে রোজগার করেন। দিন এনে দিন খান। তার কোনো জমিজমা নাই। লকডাউনে উপজেলা প্রশাসন থেকে তাকে সহায়তা করা হয়েছে। ঘর দেওয়ারও চেষ্টা চলছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মিনহাজুল ইসলাম জানান, লকডাউনের মাঝে রঞ্জু চন্দকে একাধিকবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা করা হয়েছে। তাকে একটি সরকারি ঘর দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। শুধু রঞ্জু চন্দ নয়, অসহায় লোকজনের পাশে রয়েছে উপজেলা প্রশাসন।