মো. দেলোয়ার হোসেনের বয়স এখন ৬৫। ১২ বছর আগে স্ত্রী ফরিদা ইসয়মিন অসুস্থ হলে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ডাক্তার দেখান তিনি। কিস্তু কোনভাবেই আরোগ্য লাভ হচ্ছিল না তার স্ত্রীর। পরে বিভিন্ন ঔষধি গাছের ওষুধ সেবন করে সুস্থ হন তার স্ত্রী। এরপর থেকে তিনি বিভিন্ন সময় রোপণ করছেন ঔষধি গাছ।
‘স্বাস্থ্য আগে সম্পদ পরে, ঔষধি গাছ লাগান ঘরে ঘরে’ এমন শ্লোগান নিয়ে গোপালগঞ্জে এবারে বর্ষা মৌসুমে ২০ হাজার ঔষধি গাছ রোপণের উদ্যোগ নিয়েছেন বৃক্ষপ্রেমী এই মানুষটি। বর্তমানে তিনি গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালেয সিএ পদে চাকরি করছেন।
শনিবার (৩ জুলাই) সকালে জেলা শহরের লেকপাড় থেকে ঔষধি বৃক্ষ রোপণের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। জেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে হরতকি, বহেরা, আমলকি, বাসক, অশোকসহ বিভিন্ন ঔষধি বৃক্ষ রোপণ করছেন তিনি। ২০ হাজার ঔষধি বৃক্ষ জেলার ৫ উপজেলায় রোপণ করবেন তিনি। ঔষধি গাছের গুণাগুণ নিয়ে ‘সুস্বাস্থ্যের যাদু’ নামে একটি বইও রয়েছে। এছাড়া একধিক পুরস্কার ও ক্রেস্টও পেয়েছেন তিনি।
তার এ কাজে সহায়তা করছেন ফেসবুকভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরা সবাই পরের তরে’-এর সদস্যরা। এ মৌসুমে তার ২০ হাজার বৃক্ষ রোপণ কাজের সঙ্গে কাজ করবে এ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।
‘আমরা সবাই পরের তরে’ সংগঠনের সদস্য মো. আল ইমরান সুমন ও মো. আবু তাহের খান জানান, বৃক্ষপ্রেমী মো. দেলোয়ার হোসেন বিভিন্ন সময় ঔষধি বৃক্ষ রোপণ করেছেন। এ উদ্যোগ আমাদের জন্য ও পরিবেশের জন্য উপকারী। ঔষধি বৃক্ষ থাকলে আমাদের মত সাধারণ মানুষ ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হতে পারবে। এতে আমাদের আর্থিক সাশ্রয় হবে।
‘আমরা সবাই পরের তরে’ সংগঠনের সভাপতি শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘বৃক্ষপ্রেমী মো. দেলোয়ার হোসেন বিভিন্ন ধরনের ঔষধি বৃক্ষ রোপণ করছেন। এ বিষযটি আমরা জানতে পেরে তাকে সহায়তা করছি। তা এ বৃক্ষ রোপণ অভিযান যতদিন চলবে তত দিন আমরা তার পাশে থাকবো।’
বৃক্ষপ্রেমী মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, নিজ অর্থায়নে ও বন্ধুদের বিভিন্ন সহযোগিতায় বীজ সংগ্রহ ও নার্সারি থেকে বৃক্ষ কিনে গত দুই বছরের এরই মধ্যে ১২ হাজার ঔষধি বৃক্ষ রোপণ করেছেন। এরপরই তিনি ঔষধি গাছের গুণাগুণ নিয়ে ‘সুস্বাস্থ্যের যাদু’ নামে একটি বই লিখেছেন। তা পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। এই বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ রয়েছে বাজারে। এই বইয়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ গাছের গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে পারবে।
দোলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি সারা দেশ ঔষধি গাছ দিয়ে ছেয়ে ফেলতে চাই। শুধু গোপালগঞ্জ নয় আগামীতে বৃহত্তর ফরিদপুরসহ সারা দেশব্যাপী ঔষধি গাছ রোপণের উদ্যোগে নেবো। যাতে মানুষ সহজে এসব বৃক্ষের গুণাগুণ থেকে উপকার পেতে পারেন।’